পাশে: পাথরপ্রতিমার মেয়েদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে ন্যাপকিন। নিজস্ব চিত্র।
আমপান ও ইয়াসের পরে ত্রাণ দিতে গিয়েই বুঝেছিলেন সুন্দরবনের মহিলাদের ঋতু-সমস্যার কথা। বুঝেছিলেন, ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার অভাবে কী ভাবে তিলে তিলে রোগ বাসা বাঁধছে তাঁদের শরীরে। তবু পুরনো অভ্যাস এবং আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে ঋতুকালীন সময়ে কাপড়ই ভরসা সুন্দরবনের মেয়েদের। জীবনের সেই অঙ্ক বুঝতে বেশি সময় লাগেনি কলকাতার অঙ্কের স্যরের।
তার সমাধান করতেই প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে পাথরপ্রতিমার ১০০টি মেয়ের হাতে এক বছর ধরে বিনামূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্রতী হয়েছেন বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুলের শিক্ষক মলয়কুমার ঘোষ। পাশে পেয়েছেন প্রাক্তন ছাত্র, ‘কলকাতার প্যাডম্যান’ শোভন মুখোপাধ্যায়কে।
কেন এই উদ্যোগ? শোভন জানাচ্ছেন, সুন্দরবনের অধিকাংশ মেয়ে ন্যাপকিন ব্যবহার করেন না। বাকিদের ইচ্ছে থাকলেও ন্যাপকিনে নির্ভরশীল হওয়ার উপায় নেই। আমপান এবং ইয়াস সেই সমস্যাকেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা থানা এলাকার বনশ্যামনগর গ্রামে সমীক্ষা চালিয়ে ১০০টি মেয়েকে (বিশেষত কিশোরী) বেছে নিয়েছেন মলয়বাবুরা, যাঁদের হাতে আগামী এক বছর ধরে ন্যাপকিন পৌঁছে দেবেন তাঁরা। পরিকল্পনা রয়েছে, পরের বছর ওঁদের সঙ্গে জুড়ে যাবেন পাশের গ্রামের আরও ১০০টি মেয়ে। এ ভাবেই ক্রমশ পরিধি বাড়বে ‘ইচ্ছেডানা’র।
মাস্টারমশাই বলছেন, ‘‘ওই মেয়েদের শুধু ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতার শিক্ষা দেওয়া নয়। তাঁদের ন্যাপকিনের ব্যবহারে অভ্যস্ত করানোই আমাদের লক্ষ্য। ঋতুকালীন পরিচ্ছন্নতা যে অবহেলার বিষয় নয়, সেই সচেতনতাটুকু তৈরি করতে চাই।’’
ইতিমধ্যেই সেই মেয়েদের কাছে ন্যাপকিন পৌঁছনোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই কাজে মলয়বাবুকে সাহায্য করছেন তাঁরই শিষ্যেরা। পাথরপ্রতিমার বাসিন্দা প্রীতম মিশ্র, প্রীতম গিরিরা যেমন আশাকর্মী ও স্থানীয় মেয়েদের মাধ্যমে ন্যাপকিন বিলির দায়িত্বে রয়েছেন, তেমনই আর্থিক দিক সামলাচ্ছেন প্রতিষ্ঠিত প্রাক্তন ছাত্রেরা। ভাল ন্যাপকিন জোগানোর দায়িত্বে রয়েছেন শোভন। মলয়বাবুর কথায়, ‘‘এই কাজে ছাত্ররাই বেশি উৎসাহী। আমি শুধু পথটুকু দেখিয়ে দিয়েছি মাত্র।’’
‘কলকাতার প্যাডম্যান’ অবশ্য শুধু পাথরপ্রতিমাতেই আটকে থাকতে নারাজ। আর্থিক ভাবে দুর্বল মেয়েদের কম দামে ভাল ন্যাপকিন দিতে এবং তাঁদের স্বাবলম্বী করে তুলতে ‘ঘরে ঘরে স্যানিটারি প্যাড’ প্রকল্পে কাজ করছেন শোভন। এতে গুজরাত থেকে ন্যাপকিন আনানোর পরে তা বাড়িতে প্যাকেটবন্দি করে কম দামে বিক্রি করার কাজ করছেন স্থানীয় মেয়েরা। ফলে ন্যাপকিনের চাহিদা যেমন বাড়ছে, তেমনই হাতে কিছু টাকা আসছে ওই মেয়েদের। হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, কুলপি এমনকি কলকাতার কিছু বস্তি এলাকাতেও ইতিমধ্যে এই কাজ শুরু হয়েছে। কুলপিতে ন্যাপকিন বিলির দায়িত্বে থাকা প্রিয়াঙ্কা মণ্ডল বলছেন, ‘‘গ্রামের মেয়েদের সঙ্কোচবোধ বেশি। তবু মেয়ে বলে আমাদের থেকে সহজে ন্যাপকিন নেন তাঁরা, ঋতু-সমস্যার কথাও জানান।’’
আর শোভন বলছেন, ‘‘কোনও গ্রামে দোকান না থাকলে বা বন্ধ থাকলে মেয়েরা প্যাড কিনতে পারেন না। ফলে কাপড় ছাড়া তাঁদের উপায় থাকে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়েও একই সমস্যা। এই প্যাড না পাওয়ার আশঙ্কাটাই সমূলে বিনষ্ট করতে চাই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy