Advertisement
E-Paper

পরিচয় জানানোর ভয়েই কি দায়ের হয় না অভিযোগ

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ প্রতি বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময়ে অভিযোগ নেওয়ার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলে।

এই দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়।—ফাইল চিত্র।

এই দৃশ্য প্রায়ই দেখা যায়।—ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০১৯ ০২:৪৪
Share
Save

‘নাম কী? ঠিকানা বলুন।’ থানায় অভিযোগ করতে গেলে এই দুই প্রশ্নের মুখোমুখি হওয়ার ভয়ে পিছু হটছেন অনেকেই। আর তাই শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেদার শব্দবাজি ফাটলেও অভিযোগ জমা পড়ে সেই তুলনায় অনেক কম। পরিবেশকর্মীদের একটা বড় অংশ জানাচ্ছেন, নিজের পরিচয় প্রকাশ্যে চলে আসার ভয়ে অনেকেই শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ করেন না। কারণ, তাঁদের অভিজ্ঞতা বলছে, এক বার পরিচয় প্রকাশ্যে চলে এলেই তাঁদের চিহ্নিত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। তখন সেই সময়ের মতো শব্দবাজির দৌরাত্ম্য বন্ধ হলেও পরবর্তীকালে নিয়মভঙ্গকারীদের শিকার হতে হয় তাঁদেরকেই।

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ প্রতি বছর কালীপুজো, দীপাবলির সময়ে অভিযোগ নেওয়ার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলে। গত বছর কালীপুজো এবং দীপাবলি, শুধু এই দু’দিনেই সেখানে ১৮৯টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত পবন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে এত সংখ্যক অভিযোগ দায়েরের একটাই কারণ হল, মানুষ এখানে নিশ্চিন্তে নিজেদের অভিযোগটা জানাতে পারেন। আমরা তাঁদের পরিচয় জিজ্ঞেস করি না। ফলে তাঁদের চিহ্নিত হয়ে পড়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না।’’ তাঁদের বক্তব্য, থানায় ফোন করলে এই নিশ্চিন্ত ভাবটা বহু ক্ষেত্রেই থাকে না। আর এক পরিবেশকর্মীর অভিযোগ, ‘‘অতীতে এমন ঘটনাও ঘটেছে যে, কেউ হয়তো নিজের পরিচয় দিয়ে অভিযোগ জানালেন, কিন্তু পুলিশের কোনও একটা অংশ থেকে সেই অভিযোগকারীর তথ্য আইনভঙ্গকারীদের কাছে চলে গেল। তখন দেখা যায়, শব্দবাজির দাপট তো কমলই না, উল্টে যিনি অভিযোগ জানিয়েছেন, তাঁকে নানা ভাবে হেনস্থার শিকার হতে হল।’’

কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ১০০ নম্বরে ডায়াল করে কেউ এ বিষয়ে অভিযোগ জানাতেই পারেন। কমিশনারের কথায়, ‘‘এ ক্ষেত্রে নিজের পরিচয় জানানো বাধ্যতামূলক নয়।’’ কিন্তু এই ধরনের অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগকারীর পরিচয় জানা আবশ্যিক কেন হবে? কেন অভিযোগকারীর পরিচয়ে গুরুত্ব দেওয়ার পরিবর্তে পুলিশ অভিযোগটির নিষ্পত্তি করার ব্যাপারেই তৎক্ষণাৎ উদ্যোগী হবে না, সেই প্রশ্নের নির্দিষ্ট জবাব পুলিশকর্তাদের কাছে পাওয়া যায়নি।

সবুজ মঞ্চের সম্পাদক নব দত্ত বলছেন, ‘‘পুলিশের একটি অংশ চেষ্টা করে। কিন্তু অন্য অংশ আবার শব্দবাজির বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ তো করেই না। উল্টে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার আইনভঙ্গকারী বা রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে চলে। ফলে কেউ যদি নিজের পরিচয় জানান, তখন ওই দলবল সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর উপরে চড়াও হয়।’’ অথচ কে অভিযোগ করছেন সেটা জানার চেয়ে কী নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানাচ্ছেন পরিবেশকর্মীরা।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছে, পরিচয় গোপন রেখে তাদের কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ জানানো যায়। পর্ষদের সদস্য-সচিব রাজেশ কুমার বলেন, ‘‘পর্ষদের যে কন্ট্রোল রুম থাকে, সেখানে কেউ নিজের পরিচয় না জানিয়েও বাজি সংক্রান্ত অভিযোগ করতে পারেন। তবে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমরা কী ব্যবস্থা নিলাম সেটা জানাতেই সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীর ফোন নম্বরটা চেয়ে রাখি।’’

পরিবেশকর্মীরা মনে করছেন, যত ক্ষণ না সাধারণ মানুষ এই আশ্বাস পাবেন যে, তাঁদের পরিচয়ের চেয়ে শব্দবাজির দৌরাত্ম্যই বেশি গুরুত্ব পাবে পুলিশ প্রশাসনের কাছে, তত ক্ষণ জনমত গড়ে তোলা যাবে না। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘ব্যক্তিগত নিরাপত্তা না পেলে কেউ এগিয়ে এসে অভিযোগ জানাবেন না। ফলে বছরের পর বছর শহরে শব্দ-দৌরাত্ম্যের কেন্দ্রগুলি একই রকম থেকেই যাবে।’’

Complaint Sound Pollution Pollution Control Board Kolkata Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।