Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

অবসাদ কাটাচ্ছে ছাদের জৈব বাগান

খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান বিজয় ঘোষের মস্তিষ্কপ্রসূত, ছাদে বাগান করার এই কাজ শুরু হয়েছে বছর দশেক আগেই।

যত্ন: একটি জৈব বাগানের পরিচর্যায় বিজয়বাবু। নিজস্ব চিত্র

যত্ন: একটি জৈব বাগানের পরিচর্যায় বিজয়বাবু। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৩
Share: Save:

লকডাউনে এখন ঘরবন্দি প্রায় সকলেই। মাঝেমধ্যে কর্মক্ষেত্রে যেতে হলেও বেশির ভাগ সময় কাটছে বাড়িতে। শরীরে-মনে চেপে বসছে অবসাদ আর মানসিক ক্লান্তি। এই সময়টুকু কাজে লাগিয়ে বাড়িতে থেকেই সদর্থক কিছু করা যায় কি না, সেই ভাবনা থেকে শুরু হয়েছে ছাদে বাগান করার উদ্যোগ।

বিষয়টি নতুন নয়। খড়্গপুর আইআইটি-র কৃষি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান বিজয় ঘোষের মস্তিষ্কপ্রসূত, ছাদে বাগান করার এই কাজ শুরু হয়েছে বছর দশেক আগেই। সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাড়ির ছাদে কী ভাবে জৈব উপায়ে দৈনন্দিনের খাদ্যতালিকায় থাকা আনাজপাতি উৎপাদন করা যায়, তার সহজ পাঠ নিয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন বিজয়বাবু। ৮০ পেরিয়ে এখনও এ নিয়ে তিনি পরামর্শ দিয়ে চলেছেন নিয়মিত। তাঁর কাছে এই লকডাউনের সময়ে ছাদে বাগান করার বহু আবেদন এসে জমেছে।

বিজয়বাবুর কথায়, ‘‘এতে একসঙ্গে অনেক উপকার হচ্ছে। প্রথমত, অলস ভাবে সময় নষ্ট না-করে দিনে তিন-চার ঘণ্টা ছাদে কাটালে টাটকা আনাজ হাতে পাওয়া যাচ্ছে। দ্বিতীয়ত, করোনা পরিস্থিতিতে বয়স্ক মানুষজন বাজারের ভিড় এড়াতে চাইছেন। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আনাজের কিছুটা যদি ছাদেই তৈরি করা যায়, তা হলে সেই উদ্দেশ্য সফল হচ্ছে। তিন, বাজারে রাসায়নিক দেওয়া আনাজের চেয়ে ছাদে তৈরি জৈব আনাজ শরীরের পক্ষে অনেক ভাল। চার, এতে পরিবেশ দূষণ কমছে। শরীর ও মন দুই-ই ভাল থাকছে।’’

সোনারপুরের বাসিন্দা, পেশায় স্থপতি রূপম দেব লকডাউনের পরপরই বাড়ির ছাদে আনাজের চাষ শুরু করেন। তাঁর কথায়, ‘‘সংক্রমণের ভয়ে নিয়মিত বাজার যাওয়া বন্ধ। গেলেও একসঙ্গে অনেক আনাজ কিনে আনছিলাম। কিন্তু অনেক সময়েই সেগুলি নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এখন ছাদে ঢেঁড়স, ঝিঙে, উচ্ছে, শসা, ক্যাপসিকাম, লঙ্কা, বিভিন্ন শাক তৈরি হচ্ছে। সেই আনাজের স্বাদই আলাদা।’’ আইআইটি-র এক বন্ধুর মারফত বিজয়বাবুর খোঁজ পান রূপম। তাঁর পরামর্শ নিয়ে এই কাজ শুরু করে এখন তিনি বেশ খুশি।

বরাহনগরের গৌতম ধরও বিজয়বাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। গৌতম বলেন, ‘‘কুরিয়র সংস্থায় কাজ করতাম। সে সব এখন বন্ধ। বাড়িতে বন্দি থেকে এটা করতে পেরে ভাল লাগছে। তরতাজা থাকছে শরীর-মন।’’ আনন্দপুরের বাসিন্দা, ব্যবসায়ী বিপ্লব সর্দারও ইন্টারনেট মারফত এমন বাগানের কথা জানতে পেরেছেন। বললেন, ‘‘আগে ছাদে টবে কিছু আনাজ ফলাতাম ঠিকই। কিন্তু বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এমন বাগান করতে পারলে যে কতটা লাভ, তা বুঝতে পারছি। বাবার বয়স হয়েছে। ছাদে ভাল করে বাগান করতে পারলে বাবারও সময় কাটবে।’’

৮০ পেরিয়ে যাওয়া সল্টলেকের বাসিন্দা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী দিলীপ দাস অবশ্য ছাদে বাগান করছেন কয়েক বছর ধরেই। পাতিলেবু, কমলালেবু, পেঁপে, লাউ, কুমড়ো, লঙ্কা, বেগুন, ঢেঁড়স, গুলঞ্চ শাক এমনকি তেজপাতাও হচ্ছে তাঁর ছাদে। তাঁর সঙ্গে বিজয়বাবুর যোগাযোগ দীর্ঘ দিনের। তিনি এসে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছেন দিলীপবাবুকে। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এই সময়ে আমাদের বুড়ো-বুড়িকে বাজারে কম যেতে হচ্ছে। সেটা অনেক বড় কথা।’’

আর লকডাউনে বিজয়বাবুর নিজেরও কাজ বেড়েছে। সকাল-বিকেল প্রায় ঘণ্টা চারেক তিনি দিব্যি কাটিয়ে দিচ্ছেন ছাদের আনাজ-বাগানে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy