Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
Brain Death

Organ Donation: মঞ্জুবালার হৃদ্‌যন্ত্রে বাঁচল ফরাক্কার জিয়াউলের প্রাণ

জরুরি ভিত্তিতে অন্য হাসপাতালের এক সঙ্কটজনক রোগীকে সেই হৃদ্‌যন্ত্র দেওয়া হয়। অগত্যা ফিরে যান ওই যুবক।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০২২ ০৭:৫২
Share: Save:

‘বেঁচে থাকতে গেলে, হার্ট পাল্টাতে হবে!’— কথাটা শুনে কার্যত মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল ফরাক্কার বাসিন্দা জিয়াউল হকের পরিজনদের। কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে সেই অস্ত্রোপচার করার সামর্থ্য ছিল না সামান্য দর্জির কাজ করা ওই যুবকের। শেষে হাবড়ার বাসিন্দা স্কুলশিক্ষিকা মঞ্জুবালা ভক্তের ব্রেন ডেথ হওয়ার পরে, তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করে নতুন জীবন পেলেন জিয়াউল।

এই অস্ত্রোপচারের জন্য স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে মিলেছে পাঁচ লক্ষ টাকা। বাকি কয়েক লক্ষ টাকা হাসপাতাল জোগাড় করে দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন যুবকের পরিজনেরা। গত ১০ জুলাই, রবিবার হয়েছে সেই প্রতিস্থাপন। এখনও মেডিকা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও, আপাতত সুস্থ ফরাক্কার যুবক। ওই হাসপাতালের ‘কার্ডিয়োথোরাসিক অ্যান্ড ভাস্কুলার সার্জারি’ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক কুণাল সরকার বলেন, ‘‘অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে প্যাকেজ আছে বলে জানা নেই। কিন্তু বিষয়টি জানাতেই স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে অস্ত্রোপচারের অনুমোদন দেয় স্বাস্থ্য ভবন। তার পরেই প্রক্রিয়া শুরু করি।’’ জিয়াউলের নাম নথিভুক্ত করা হয় রিজিয়োন্যাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন (রোটো) এবং ন্যাশনাল অর্গান অ্যান্ড টিসু ট্রান্সপ্লান্ট অর্গানাইজ়েশন (নোটো)-এর পোর্টালে।

মা-বাবা, স্ত্রী ও তিন ছেলেকে নিয়ে সংসার জিয়াউলের। গত কয়েক মাস ধরে মাঝেমধ্যেই বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হত বছর ৩৩-এর যুবকের। অল্প হাঁটাচলা করেই হাঁপিয়ে উঠতেন। বহরমপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলাকালীন হৃদ্‌যন্ত্রে সমস্যা ধরা পড়ে। এর পরে মুর্শিদাবাদে হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত স্বাস্থ্যশিবিরে কুণালবাবুর কাছে দেখান জিয়াউল। ওই চিকিৎসকের কথায়, ‘‘পরীক্ষা করে বোঝা যায়, ওই যুবক হার্ট ফেলিয়োরের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছেন। তাই প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই। এর পরে কলকাতায় আমাদের হাসপাতালে এসে কিছু পরীক্ষা করেও দেখা যায়, বাঁচতে গেলে ওটাই একমাত্র পথ।’’ স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় অর্থের সংস্থান হয়ে গেলেও অপেক্ষা চলছিল হৃদ্‌যন্ত্র পাওয়ার। জুলাইয়ের প্রথমে ‘রোটো’-র মাধ্যমে দাতার খোঁজ মেলে। খবর পেয়েই তড়িঘড়ি কলকাতায় চলে আসেন জিয়াউল। কিন্তু জরুরি ভিত্তিতে অন্য হাসপাতালের এক সঙ্কটজনক রোগীকে সেই হৃদ্‌যন্ত্র দেওয়া হয়। অগত্যা ফিরে যান ওই যুবক।

এর কয়েক দিন পরেই আবার সুযোগ আসে। বাইক থেকে পড়ে মাথায় চোট পাওয়া মঞ্জুবালাদেবীর ব্রেন ডেথ ঘোষণা হয় ৯ জুলাই। তাঁর হৃদ্‌যন্ত্র ওই যুবক পাবেন খবর পেয়েই ডেকে পাঠানো হয় জিয়াউলকে। তাঁর এক আত্মীয় মহম্মদ জামাউল শেখ বলেন, ‘‘ইদের আগের দিন অত রাতে কী ভাবে আসব, বুঝতে পারছিলাম না। হাসপাতালের ডাক্তারবাবুরাই সব ব্যবস্থা করে দেন।’’ কুণালবাবু জানান, ওই হাসপাতালে কোভিডের সময়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন বেনিয়াপুকুর থানার ওসি অলোক সরকার। মেডিকার চিকিৎসক অর্পণ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সমস্যাটি জেনে অলোকবাবুকে জানাই। তিনি ফরাক্কার এক সমাজসেবীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করা দেন। তাতেই রাত তিনটের সময়ে কলকাতায় এসে পৌঁছন জিয়াউল।’’ আসার পরেই তাঁকে আইসিসিইউ-তে নিয়ে গিয়ে অস্ত্রোপচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

১০ জুলাই সকালে এসএসকেএমে পৌঁছে যান মেডিকার চিকিৎসকেরা। মঞ্জুদেবীর হৃদ্‌যন্ত্র তোলার পরে তা গ্রিন করিডর করে পৌঁছে যায় বাইপাসের ওই হাসপাতালে। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে প্রতিস্থাপন। জামাউল বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার ও চিকিৎসকদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। এখন শুধু বাড়ি ফেরার অপেক্ষা।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE