সারিবদ্ধ: ক্যানাল ওয়েস্ট রোড জুড়ে পরপর দাঁড়িয়ে লরি। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
অনেকেই বলছেন, সমাধান রয়েছে হাতের কাছে। কিন্তু অভিযোগ, পুলিশকর্মীদের একাংশের গাফিলতির কারণেই সেই রাস্তা অধরা থেকে যাচ্ছে এখনও। আর তাই টালা সেতুকে ঘিরে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন ভোগান্তি একচুলও কমছে না।
টালা সেতুতে বাস বা ভারী গাড়ি নিষিদ্ধ হওয়ার পরে তিন সপ্তাহ কেটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও বিকল্প কোনও পথের সন্ধান দিতে পারেনি পুলিশ। ফলে অটোয় বাড়তি ভাড়া যেমন গুনতে হচ্ছে, তেমনই দীর্ঘ যানজটে আটকে নষ্টও হচ্ছে প্রচুর সময়। অথচ পুলিশকর্মীদেরই একাংশ বলছেন, খালের দুই দিকে ক্যানাল ইস্ট ও ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ব্যবহার করে এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান করা যেত। কিন্তু বেআইনি পার্কিং এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নিয়ে পুলিশের ‘চোখ বুজে’ থাকা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে। সেই সুযোগে খালের পাড়ে সর্বক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে
সারিবদ্ধ লরি। বাস নিয়ে যাওয়া তো দূর, জরুরি পরিস্থিতিতে অ্যাম্বুল্যান্সও বার করানো যায় না।
খালের সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত উত্তর কলকাতা যুব কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার বললেন, ‘‘বারবার বললেও খালধারের রাস্তা সাফ হয়নি। ওখানেই দমকল কেন্দ্র রয়েছে। দমকলের গাড়ি বার করতে গেলে অনেক সময় নষ্ট হয়। অনেকে আবার খালের পাড়ে পুরসভার থেকে লিজ় নিয়ে পার্কিং ব্যবসা করবেন ভেবেছিলেন। স্থানীয় কিছু দাদা বেআইনি পার্কিং করিয়ে ব্যবসা লাটে তুলে দিয়েছেন। খালের রাস্তা সাফ করতে অনেকেরই সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।’’ টালা বারোয়ারির পুজো উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘‘টালা সেতুর কাছেই আমার বাড়ি। ক্যানাল ইস্ট ও ক্যানাল ওয়েস্ট রোড ব্যবহার করতে না পারলে সমস্যার পাকাপাকি সমাধান হবে না।’’
তাঁর মতোই অনেকের পরামর্শ, ডানলপের দিক থেকে আসা বাসগুলিকে লকগেট উড়ালপুল, ক্যানাল ইস্ট রোড তথা প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোড হয়ে ব্যারাকপুর সেতু দিয়ে শ্যামবাজারে নিয়ে যাওয়া হোক। যে বাসগুলি বিধান সরণি যেতে চায়, তাদের জন্য ক্যানাল ইস্ট রোডের আরও কিছুটা অংশ ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। ফেরার পথেও একই ভাবে ক্যানাল ওয়েস্ট রোড তথা গ্যালিফ স্ট্রিট হয়ে চিৎপুর দিয়ে বি টি রোডে পাঠানো যেতে পারে বাসগুলিকে। এতে শ্যামবাজারের চাপ কমবে।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানালেন, তাঁরাও তাঁদের প্রাথমিক রিপোর্টে ওই একই পথের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ওই পথে প্রচুর লরি দাঁড়িয়ে থাকে। তা ছাড়া, ঝুপড়ির জেরে রাস্তা সরু হয়ে গিয়েছে। তাই সে প্রস্তাব বাতিল করে দেওয়া হয়। পুলিশেরই একাংশের ‘গাফিলতি’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন ওই পুলিশকর্তা। এক দুপুরে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, শিশু উদ্যান ও স্কুলের গেট আটকে বেআইনি পার্কিং তো চলছেই, ক্যানাল ইস্ট রোড জুড়ে থাকা বিভিন্ন রকম গুদামের সামগ্রী লরিতে বোঝাই করা হচ্ছে রাস্তা আটকেই। পিছনে লম্বা গাড়ির লাইন দেখেও কারও হুঁশ নেই। কলকাতা স্টেশন পার করে আবার গাড়ি দাঁড় করাতেই এক যুবক এগিয়ে এসে বললেন, ‘‘৩০ মিনিট গাড়ি রাখতে ১০০ টাকা লাগবে।’’ পার্কিং কি পুরসভার? জবাব মেলেনি।
একই ভাবে জবাব মেলে না খালের পাড়ের রাস্তা ঠিক ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্নেরও। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) অখিলেশ চতুর্বেদী শুধু বললেন, ‘‘সব দিক ভেবে যে রাস্তা সব চেয়ে ভাল মনে হয়েছে, সেটাই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ তাতে যে ভোগান্তি কমছে না? উত্তর পাওয়া যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy