বিপজ্জনক: বেহালায় রাস্তার ধারে বিশালাকার গর্তে জমে রয়েছে জল। (ইনসেটে) ক্যানাল ইস্ট রোডে অরক্ষিত অবস্থায় খুঁড়ে রাখা রাস্তার এই অংশ। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য
কোথাও রাস্তার ধারে স্রেফ দু’টো লোহার রড পোঁতা। পাশে ছড়ানো ইটের টুকরো। অন্ধকার তো দূর, রাস্তা কখন শেষ হয়ে গর্ত শুরু হচ্ছে দিনের আলোতেও বোঝা দায়। কোথাও মাঝ রাস্তায় খোঁড়া গর্ত বোজানোর পরেও ফের প্রকট হয়েছে তা দেখার লোক নেই। ই এম বাইপাসে আবার রাস্তার মাঝের গর্ত এতটাই চওড়া যে সেখানে তাতে গাড়ির চাকা পড়ে শূন্যে লাফিয়ে ওঠে। দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে বাইকচালকদের!
পুজোর সময়ে কলকাতার চেহারা বদলায়। আলোর সাজের সঙ্গে রং চড়ে বাড়ির দেওয়ালে, সেতুর গায়ে। তবে ‘মৃত্যু ফাঁদে’র মতোই শহরের রাস্তার বুকে একের পর এক গর্ত মুখ হাঁ করে থাকে বলে অভিযোগ। গড়িয়ার সন্ধ্যাবাজার এলাকায় এমনই একটি গর্ত থেকে শনিবার উদ্ধার হয়েছে অরূপ সরকার (৪৩) নামে এক যুবকের মৃতদেহ। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ‘‘প্রায় সাত ফুট গভীর ওই গর্তটি নজরে পড়ার অবস্থা ছিল না।’’ রবিবার শহরের উত্তর এবং দক্ষিণে তেমনই মৃত্যুফাঁদের মতো একাধিক গর্ত দেখা গেল।
ভাঙা রাস্তা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ রয়েছে বেহালা, তারাতলা, জিঞ্জিরাবাজার এলাকার বাসিন্দাদের। বেহালার অজন্তা মোড়ের কাছে দেখা গেল খোঁড়া হয়েছে এক দিকের রাস্তা। তবে তা পথচারীদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার উপায় নেই। স্রেফ মাটি থেকে উপরের দিকে উঠে রয়েছে কয়েকটি লোহার রড। আশপাশে ছড়ানো ইটের টুকরো। কাছে গিয়ে দেখা গেল ,বিরাট গর্তের মধ্যে জল জমে রয়েছে। শ্যামল হাজরা নামে এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘পথচলতি মানুষ তো বটেই। গাড়ির চাকাও এখানে ঢুকে যেতে পারে।’’ তাঁর দাবি, ডায়মন্ড হারবার রোডের উপরে এমন একাধিক গর্ত রয়েছে। অটোচালক সুনীল দত্ত বললেন, ‘‘বন্দরের দিকে যত যাবেন, রাস্তা না জয়-রাইড বুঝতে পারবেন না।’’
উত্তর কলকাতার ক্যানাল ইস্ট রোডে জলের পাইপ লাইনের কাজ চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে কাজ বন্ধ ছিল। খোঁড়া রাস্তা তখন অরক্ষিত অবস্থাতেই পড়ে থাকত। স্থানীয় বাসিন্দা গৌরী দে-র কথায়, ‘‘বিপদের কথা কারও মাথাতেই আসে না। অন্ধকারে যে কেউ ঢুকে যেতে পারেন। উন্নয়নের কাজ হচ্ছে, তার স্মৃতি হয়ে গর্ত পড়ে থাকছে।’’
রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটে একটি পুজো মণ্ডপের সামনে দেখা গেল, রাস্তায় কাজ হওয়ার পরে মাটি দিয়ে গর্তের মুখ বন্ধ করা হলেও তা বেরিয়ে এসেছে। তা নিয়ে অবশ্য কারও হেলদোল দেখা গেল না।
পুজোর মুখে প্রতিবারই রাস্তা মেরামতির কাজ হয়। এ বছর কি পুজোর আগে পথের ক্ষত সারবে? সেই প্রশ্নের উত্তর তো দূর, রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সংস্থাই ব্যস্ত দায় নিয়ে ঠেলাঠেলিতে। কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (রাস্তা) রতন দে বলেন, ‘‘রাস্তা কেন খারাপ তা পূর্ত দফতর বলতে পারবে। বেশির ভাগ রাস্তাই ওদের।’’ পূর্ত দফতরের রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক অবশ্য বললেন, ‘‘ডায়মন্ড হারবার রোড এবং ময়দান এলাকায় ভিআইপিরা চলাচল করেন। সেগুলি ছাড়া সব রাস্তাই কলকাতা পুরসভাকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ডায়মন্ড হারবার রোডে কাজ চলছে। বাকি রাস্তার এই অবস্থা কেন, তা পুরসভাই বলুক।’’
একই রকম দায় এড়ানো উত্তর মিলেছে কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি-র (কেএমডিএ) তরফেও। সংস্থার রাস্তার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ই এম বাইপাসের রাস্তার যে অংশ আমাদের মধ্যে আছে, তার মেরামতির কাজ চলছে। মেট্রোর কাজের জন্য যে অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা সারাই করে দেওয়ার কথা রেল নিগমের।’’ রেল বিকাশ নিগম লিমিটেডের (আরভিএনএল) বক্তব্য, কেএমডিএ-র সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে তাদের যে রাস্তার কাজ করার কথা ছিল তা করে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy