তপসিয়া-তিলজলা এলাকায় বেআইনি ভাবে পাশাপাশি উঠেছে একাধিক বহুতল। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
কোথাও একটি বহুতলের এক দিকের স্তম্ভের ভরসায় আরও নতুন দু’টি স্তম্ভ বানিয়ে পাশের জমিতে পৃথক বাড়িই তুলে ফেলা হয়েছে! অভিযোগ, রাতারাতি ঢালাই হয়েছে একের পর এক ছাদ। কোথাও আবার এমন ভাবে দু’টি বহুতল পাশাপাশি উঠেছে যে, পুরসভার নিয়ম মেনে জায়গা ছাড়ার ব্যাপারই নেই। একাধিক এমন বহুতলও আছে, যা হেলে পড়েছে পাশের বহুতলের দিকে। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করে পুরসভা ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝুলিয়ে দিয়ে গিয়েছে— এমন বহুতলের সংখ্যাও নেহাত কম নয়!
গার্ডেনরিচের ফতেপুরে বহুতল ভেঙে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার শহর ঘুরে এমনই নানা বেআইনি নির্মাণ চোখে পড়ল। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, একটি ঘটনায় এত জনের মৃত্যুর পরে কেন হুঁশ হয়? এমন নির্মাণ কি পুলিশ বা প্রশাসনের আগে চোখে পড়েনি?
কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘চেষ্টা করেও এমন বেআইনি নির্মাণ আটকাতে পারছি না।’’ লালবাজারের কর্তারা অবশ্য কেউই প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে চাননি। তবে যুগ্ম নগরপাল পদমর্যাদার এক পুলিশকর্তা জানিয়েছেন, ডিসি স্তরে সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরসভার তরফে অভিযোগ পেলেই অতীতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিলজলার শিবতলা লেনে এমনই একটি পাঁচতলা বাড়ি পাশের অন্য একটি পাঁচতলা বাড়ির উপরে হেলে পড়েছে বলে শোরগোল পড়ে ২০১৮ সালে। সেই সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছিল, ১২/১১ নম্বর শিবতলা লেনের বাড়িটি ১২/১২ নম্বর বাড়ির দিকে হেলে রয়েছে। হেলে পড়া বাড়িটির ১৮টি ফ্ল্যাটে সব মিলিয়ে ৯০ জনের বাস। পুরসভার তরফে রাতারাতি বাড়ি দু’টি ফাঁকা করিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ মাসখানেক পরেও বাড়ি দু’টি সম্পূর্ণ ফাঁকা করিয়ে উঠতে পারেনি।
এ দিন ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, হেলে পড়া বাড়িটির আর অস্তিত্ব নেই। শুধু রয়েছে ১২/১২ নম্বর বাড়িটি। স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ার শহিদ দাবি করেন, ‘‘পুরসভা হেলে পড়া বাড়িটি ভেঙে দিয়েছে। যে পরিবারগুলি ওই বাড়িতে ছিল, তারা রাতারাতি রাস্তায় এসে পড়েছে। যে যেমন পারেন, কোনও মতে এখন ভাড়া নিয়ে রয়েছেন।’’ পাশেই দাঁড়ানো আর এক মহিলার মন্তব্য, ‘‘ওই বহুতল যে প্রোমোটার তৈরি করেছিলেন, করোনায় তিনি মারা গিয়েছেন। মোটা টাকায় ফ্ল্যাট কিনে এখন পথে বসেছেন বহু মানুষ।’’
কিন্তু এই ঘটনার পরেও তিলজলা জুড়ে পরিস্থিতি বদলের কোনও চিহ্ন চোখে পড়ে না। যে জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা চলছিল, তার পাশেই দেখা গেল, একের পর এক বেআইনি নির্মাণ মাথা তুলেছে। একটির সঙ্গে অন্য বহুতলের ছাড় মাত্র কয়েক আঙুল। এমন বাড়িও চোখে পড়ল, যা পাশের বাড়ির উপরেই হেলে পড়েছে। যার জেরে প্রায় বেঁকে গিয়েছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের অংশ। তিলজলা রোডের উপরে একটি বাড়ি দেখা গেল, পাশের বাড়ির সানশেডের চাপে যার বারান্দার গ্রিল আবার বেঁকে ভিতরের দিকে ঢুকে এসেছে। একই চিত্র তপসিয়া, পিকনিক গার্ডেন এলাকাতেও। সেখানে আবার একাধিক বাড়ি পুরসভার তরফে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হলেও তাতে বসবাস বন্ধ করা যায়নি।
গার্ডেনরিচে ফতেপুরে যেখানে বাড়ি ভেঙে এই ঘটনা ঘটেছে, তার পাশেই আবার এমন বহুতল চোখে পড়ল, যার দেওয়াল পাশের বহুতলের পিলারের অংশ ফাটিয়ে দিয়েছে। ৪৭০ নম্বর পাহাড়পুর রোডের সেই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েই এক ব্যক্তির মন্তব্য, ‘‘এ রকম আরও আছে। পুরসভা নাকি মাত্র ছ’টা এমন বাড়ি খুঁজে পেয়েছে। কিন্তু এমন বড় ঘটনা না ঘটলে কি এ সবে নজর পড়ত?’’ এর পরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এর পরেও কি পরিস্থিতি বদলাবে?’’ নিশ্চিত উত্তর অবশ্য মেলেনি প্রশাসনের কোনও পক্ষ থেকেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy