Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫

সূত্র এসএমএস, সাড়ে তিন মাস পরে মহিলাকে খুনে ধৃত যুবক

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ অগস্ট দক্ষিণ দমদমের দক্ষিণপাড়ায় নিজের ঘরে বিছানার উপরে নিথর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সুমিতাকে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৪৩
Share: Save:

রাতের খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে এসে মা দেখেছিলেন, ঘরে বিছানায় পড়ে মেয়ের দেহ। চিকিৎসক এসে মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে অস্বীকার করায় এক প্রকার বাধ্য হয়ে সেই মৃতদেহ পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন তাঁর পরিজনেরা। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, শ্বাসরোধ করার জন্যেই মৃত্যু হয়েছে সুমিতা ভট্টাচার্য (৪৪) নামে ওই মহিলার। কিন্তু আর কোনও সূত্র পুলিশের হাতে আসেনি। এমনকি, সুমিতার বাড়ি থেকে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি।

শেষে সুমিতার ফোনে আসা একটি এসএমএসের সূত্র ধরে মৃত্যুর ঘটনার সাড়ে তিন মাস পরে, রবিবার খুনের অভিযোগে গ্রেফতার করা হল এক ব্যক্তিকে। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম চিরঞ্জীব রায়। সে সুমিতার পরিচিত বলে জানিয়েছে পুলিশ। সোমবার ধৃতকে ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে তিন দিনের পুলিশি হেফাজকের নির্দেশ দেন বিচারক।

পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ অগস্ট দক্ষিণ দমদমের দক্ষিণপাড়ায় নিজের ঘরে বিছানার উপরে নিথর অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল সুমিতাকে। ওই বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতেন তিনি। উপরে বৃদ্ধা মা আর নীচের ঘরে থাকতেন সুমিতা। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁর মা সুমিতাকে ডাকতে এসে তাঁকে বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। অনেক ডেকেও তাঁর সাড়া না পেয়ে শেষে প্রতিবেশীদের ডাকেন বৃদ্ধা। শেষে পাড়ার এক চিকিৎসক এসে জানান, সুমিতার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে রাজি হননি ওই চিকিৎসক। এর পরে আরও তিনজন চিকিৎসককে এনে মৃত্যু শংসাপত্র জোগাড়ের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁরা কেউই তা দিতে রাজি হননি। শেষে খবর পেয়ে দমদম থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুমিতার দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায়।

দিনকয়েক পরে ময়না-তদন্তের রিপোর্ট এলে জানা যায়, রাত ১০টার কিছু আগে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে সুমিতাকে। কিন্তু পরিবারের তরফ থেকে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় দমদম থানার আইসি সুবীর রায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুনের মামলা শুরু করেন।

কিন্তু পুলিশের হাতে প্রথমে কোনও সূত্র ছিল না। শেষে সুমিতার মোবাইল ফোন থেকে জানা যায়, রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ একটি এটিএম থেকে তাঁর ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে ৩০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে। এই সূত্র ধরেই তদন্তে নেমে মুম্বই থেকে ওই এটিএমের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আনিয়ে দেখা যায়, সুমিতার কার্ড দিয়ে টাকা তুলছে মাস্ক পরা এক যুবক। বিশেষ সফটওয়্যার ব্যবহার করে অভিযুক্তের মুখ থেকে মাস্ক সরানো হয়। দিন দশেক আগে পুলিশের হাতে সেই ছবি আসে।এর পরে সুমিতার কয়েক জন বন্ধু সেই ছবিটি সুমিতার এক পরিচিত চিরঞ্জীবের বলে জানান। তার বাড়ি বেলেঘাটা মেন রোডে। কিন্তু পুলিশ তার বাড়ি গিয়ে জানতে পারে, সে অনেক দিন আগেই মা-কে নিয়ে অন্যত্র চলে গিয়েছে।

ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (সাউথ) শ্রীহরি পাণ্ডেও এই মামলায় তদন্তে নামেন। শেষ পর্যন্ত চিরঞ্জীবের কয়েক জন বন্ধুর থেকে তার মোবাইল নম্বর মেলে। জানা যায়, কেষ্টপুরের বারোয়ারিতলায় ভাড়াবাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকছে সে। রবিবার সেখান থেকেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় প্রথমে খুনের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে খুনের কথা কবুল করে চিরঞ্জীব। জেরায় সে জানায়, দীর্ঘদিনের পরিচিত সুমিতার থেকে টাকা ধার নিলেও তা ফেরত দেয়নি সে। ঘটনার রাতে ফের টাকা চাইতেই সুমিতার বাড়িতে গিয়েছিল সে। সেই সময় মত্ত অবস্থায় সুমিতা চিরঞ্জীবের মায়ের নামে আপত্তিকর কথা বলেন। তাতেই রাগের মাথায় ঘরে থাকা একটি কাপড়ের টুকরো সুমিতার গলায় পেঁচিয়ে তাঁকে খুন করে চিরঞ্জীব এবং তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে পালায়। আগে একাধিক বার তার সামনেই সুমিতা ওই কার্ড দিয়ে টাকা তুলেছিলেন বলে তার পিন নম্বর জানা ছিল চিরঞ্জীবের। খুনে ব্যবহৃত কাপড়টিও পুলিশ একটি ঝোপ থেকে উদ্ধার করেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Crime murder Arrest
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy