বধূর অস্বাভাবিক মৃত্যুতে গ্রেফতার স্বামী।
বিয়ের পর থেকেই মেয়ের উপরে চলত নির্যাতন। সেই নির্যাতনের মাত্রা বোঝাতে বধূর মা অভিযোগ করেন, এক বার মেয়ের চোখে লঙ্কার গুঁড়ো পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছিলেন শাশুড়ি। আর এক বার চুলের মুঠি ধরে গলা টিপে ধরেন। এত কিছুর পরেও বাগুইআটি থানার অন্তর্গত আটঘরায় শ্বশুরবাড়িতেই থেকেছেন বছর পঁচিশের নাসিমা বিবি। রবিবার রাতে মেয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়ার খবর পাওয়ার পর থেকে মা আক্ষেপ করে বলছেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে চলে আসতে বললে মেয়ে বলত, সংসার করব। মেয়েটাকে শেষ করে ছাড়ল।’’ পুলিশ সূত্রে খবর, আশি শতাংশ অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় বাঙুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নাসিমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। চরম অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ওই বধূ গায়ে আগুন দেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। পুলিশ সূত্রের খবর, তাঁর স্বামী শাহজাহান তরফদারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
পরিবার সূত্রে খবর, আট বছর আগে আটঘরার পূর্বপাড়ার বাসিন্দা শাহজাহানের সঙ্গে রাজারহাটের জগদীশপুরের নাসিমার বিয়ে হয়। ঝালমুড়ি বিক্রেতা শাহজাহানের সঙ্গে আগে থেকেই আলাপ ছিল তাঁর। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিমার বাপের বাড়ির আর্থিক অবস্থা ভাল না হওয়ায় শাশুড়ি তাঁর উপরে প্রায়ই অত্যাচার করতেন। রবিবার রাতে অশান্তি শুরু হলে আচমকা অগ্নিদগ্ধ নাসিমার চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা বেরিয়ে আসেন। নাসিমার বাবা আহমেদ আলি জানিয়েছেন, মেয়ে গায়ে আগুন দিয়েছে বলে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ তিনি খবর পান। আহমেদের অভিযোগ, স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি ষড়যন্ত্র করে তাঁর মেয়ের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়েছেন। নাসিমার মা-ও বলেন, ‘‘বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে বলা হত মেয়েকে। টাকা না আনলে চলত মারধর। অশান্তির সময়ে শ্বশুর-শাশুড়ি প্রায়ই বলতেন, তোর গায়ে আগুন দিয়ে জেলে যাব। সেটাই করে দেখালেন!’’
নাসিমার দাদা আনসার আলি জানান, প্রায়ই চলত তাঁর বোনের উপরে অত্যাচার। এক বার চুলের মুঠি ধরে শাশুড়ি নাসিমার গলা টিপে ধরেছিলেন বলে অভিযোগ। প্রতিবেশীরা চলে আসায় সে বার নাসিমা রক্ষা পেয়েছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, নাসিমাকে তাড়িয়ে ছেলের আবার বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আশুরা বিবির। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাশুড়ি।
আরও পড়ুন: ‘ধর্ষক’কে ফোন কেন, বালিগঞ্জ মামলায় প্রশ্ন আদালতে
এমন নির্যাতনের কথা জেনেও কেন নাসিমাকে জগদীশপুরের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়নি? আনসার বলেন, ‘‘শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে থানায় বেশ কয়েক বার অভিযোগ করা হয়েছে। লঙ্কার গুঁড়ো দেওয়ার পরে নাসিমার শ্বশুরবাড়ির লোকজন মুচলেকা দিয়েছিলেন, আর এ রকম হবে না। দুই ছেলের কথা ভেবেই ও শ্বশুরবাড়ি ছাড়েনি!’’ নির্যাতিতার আর এক দাদা নুর ইসলাম জানান, ফোনে প্রায়ই তাঁর বোন অত্যাচারের বর্ণনা দিতেন। স্থানীয় কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডলের দ্বারস্থ হয়ে তাঁরা অনেক বার স্বামী-স্ত্রীর ঝগড়া মেটানোর চেষ্টা করেছেন। যদিও আজিজুল বলেন, ‘‘বারবার থানায় যাওয়ার পরামর্শই দিয়েছি। সালিশি কি আমরা করতে পারি!’’
নাসিমার পাঁচ বছরের ছেলে নীরজ ও তার চেয়ে তিন বছরের ছোট নিজাম এখন আটঘরার বাড়িতেই রয়েছে। নাসিমার দাদা জানান, ভাগ্নেদের সঙ্গে তাঁরা এখনও কথা বলতে পারেননি। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনার সময়ে বাড়িতে কে কে ছিলেন, কী ভাবে ওই বধূর গায়ে আগুন লাগল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy