মর্মান্তিক: এই সিঁড়ি ভেঙে পড়েই মৃত্যু হয় সোমনাথের। ছবি: রণজিৎ নন্দী
প্রায় ৭০ ফুট উঁচু জলাধারের সংস্কার করছিলেন দুই নির্মাণকর্মী। কিন্তু কোনও সুরক্ষা নির্দেশিকা মানা হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে মঙ্গলবার দুপুরে বাঁশের ভারা এবং জলাধারের গায়ের মরচে ধরা লোহার সিঁড়ি ভেঙে পড়ে মৃত্যু হল এক নির্মাণকর্মীর। অন্য জন গুরুতর জখম অবস্থায় পঞ্চসায়রের এক বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রাজ্য সরকারের মৎস্য সমবায় সংস্থা ‘বেনফিশ’-এর পঞ্চসায়র চকগড়িয়া কমপ্লেক্সেই এমন ঘটনা ঘটায় কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সুরক্ষা নির্দেশিকা অমান্য করে কী ভাবে কাজ চলছিল, উঠছে সেই প্রশ্নও।
পুলিশ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টা নাগাদ ওই জলাধারের নীচ থেকে দু’জনকে উদ্ধার করে পঞ্চসায়রের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁদের নাম সোমনাথ দাস ওরফে দীপক এবং নারায়ণ ঘোষ। দু’জনেরই বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ে। হাসপাতালে পৌঁছতেই বছর চৌত্রিশের সোমনাথকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা। নারায়ণ গুরুতর জখম অবস্থায় ওই হাসপাতালেই ভর্তি। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, অত উঁচু থেকে পড়ে যাওয়ায় নারায়ণের পেটে বড় ক্ষত তৈরি হয়েছে। সেই অংশ দিয়েই পেটের ভিতরের সব কিছু বেরিয়ে আসে! ওই অংশ সেলাই করে রোগীকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।
জানা গিয়েছে, ওই বেনফিশ কমপ্লেক্স লিজ়ে দেওয়া রয়েছে ১০ জনকে। তাঁরা একটি ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেছেন। তাতে ওই ১০ জন ছাড়া সংস্থার এক জন প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটির সিদ্ধান্তেই মঙ্গলবার ওই জলাধারে কাজ চলছিল। সেই সময়ই ঘটে অঘটন। এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, জলাধারের নীচে পড়ে রয়েছে নানা নির্মাণ সামগ্রী। বিদ্যুতের তার চার দিকে ছড়ানো। জলাধারের গায়ে লাগানো লোহার সিঁড়ি ভেঙে ঝুলছে। বাঁশ এবং সিঁড়িতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ার চিহ্ন স্পষ্ট। জায়গাটা দেখাতে ওই কমপ্লেক্সের কর্মী শ্যামল হালদার বলেন, ‘‘কোমরটা অন্তত বাঁধা থাকলেই লোকটা বেঁচে যেত।’’
একাধিক দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে শহরের উঁচু জায়গায় কাজ করার জন্য বেশ কিছু সুরক্ষামূলক নির্দেশিকা রয়েছে। পুরসভা এবং নির্মাণ সংস্থাগুলির সংগঠন ক্রেডাই জানাচ্ছে, নির্মাণস্থলে প্রাথমিক শুশ্রূষা ব্যবস্থা রাখার কথা। পাশাপাশি, কর্মীদের কোমরে সুরক্ষা বেল্ট, মাথায় হেলমেট এবং পায়ে সুরক্ষা বুট থাকাও বাধ্যতামূলক। যাতে কোনও ভাবে হাত বা পা ফস্কে গেলে ওই বেল্ট কর্মীকে কাঠামোর সঙ্গে ধরে রাখতে পারে। ক্রেডাইয়ের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুশীল মেহতা বললেন, ‘‘কাজের সময়ে কর্মীদের গায়ে গেরুয়া বা হলুদ রঙের চকচকে পোশাকও থাকা চাই। যাতে দূর থেকে সহজেই চোখে পড়ে। নিরাপত্তা আধিকারিকদেরও নিয়ম করে নির্মাণস্থল ঘুরে দেখার কথা। সম্ভবত বেনফিশের ওই কমপ্লেক্সে এ সব কিছুই মানা হয়নি।’’
বিষয়টি নিয়ে বেনফিশ-এর এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন সুরক্ষা নিয়ম মানা হয়নি, তা ওই ম্যানেজিং কমিটির কাছে জানতে চেয়েছি আমরা। কোনও রকম গাফিলতি হয়ে থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ ওই ম্যানেজিং কমিটির সম্পাদক তাজ মহম্মদ বললেন, ‘‘এখন রোগীকে নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। যা বলার বেনফিশকে বলব!’’
কিন্তু আগেই সতর্ক হলে তো এই দুর্ঘটনা এড়ানো যেত? উত্তর দিতে পারেননি কেউই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy