Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

জেলজয়ী সাইমার মুক্তি এখন কাপড়কলেই

দশ দিনের একরত্তি শিশুটিকে বুকে আঁকড়েই দশ বছর আগে জেলে গিয়েছিলেন তিনি। হাওড়ার হাটে সেই ছেলে সাহিলের নামেই লেবেল, বিল বই ছাপিয়ে নিজের হাতে তৈরি প্যান্ট বিক্রি করতে বসেন সাইমা খাতুন।

সপুত্র: ছেলের সঙ্গে কারখানায় সাইমা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

সপুত্র: ছেলের সঙ্গে কারখানায় সাইমা। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৭ ১২:৪৩
Share: Save:

দশ দিনের একরত্তি শিশুটিকে বুকে আঁকড়েই দশ বছর আগে জেলে গিয়েছিলেন তিনি। হাওড়ার হাটে সেই ছেলে সাহিলের নামেই লেবেল, বিল বই ছাপিয়ে নিজের হাতে তৈরি প্যান্ট বিক্রি করতে বসেন সাইমা খাতুন।

সাহিলের পিঠোপিঠি মেজো ছেলে সালেহিন আর বড় মেয়ে সনজিদার থেকেও কোলেরটির উপরেই মায়া বেশি মায়ের। সাইমা লাজুক হাসেন, ‘‘জেল খাটার সময়ে বড় ছেলেমেয়ে দুটোকে বাপের বাড়ি রেখে আসতে হয়েছিল। কোলেরটাই তো গায়ে লেপ্টে তখন।’’ গরাদের ও পারে ওই শিশুই সে দিন সবটুকু তরুণী মায়ের।

কলকাতার ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে বিবিরহাটের পরাশর নস্করপাড়া গ্রামে সাইমার কাপড় কল সাহিলের নামেই। মায়ের চোখের মণি, ক্লাস ফাইভের পড়ুয়া নিজেও প্যান্টে বোতাম বসানো, লেবেল সাঁটা, প্যাকিংয়ে হাত লাগায়। জেল থেকে মুক্ত হয়ে এই খুদে কারখানা ঘিরেই ঘা-খাওয়া মেয়ের ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প।

শ্বশুরের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে খুনের মামলায় ফেঁসে জেলযাত্রার পরে সাইমার খালাস হতে চারটি বছর লেগেছিল। আলিপুর সেশন্‌স কোর্টে সাহিলকে কোলে নিয়েই বন্দিনী মা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘আমার শ্বশুর যা-ই করুন, এতটুকু ছেলে কী দোষ করল?’’ ছেলেটা তত দিনে জেলের ওয়ার্ডার বা অন্য বন্দি মাসিদের কোলে কোলে কথা বলা শিখেছে। সন্ধ্যায় লক-আপে বন্দিদের গুনতি করানো থেকেই সাহিল আধো স্বরে বলে, ‘এক-দুই-তিন...!’ খুনে জড়িত থাকার প্রমাণ কিন্তু মেলেনি সাইমার বিরুদ্ধে। শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামী মামলায় সাজা পেলেও তাঁকে নির্দোষ বলে রায় দেন বিচারক।

জেল থেকে বেরিয়ে একটা বছর সাইমাও লোকলজ্জায় গুটিয়ে ছিলেন। গ্লানি ছাপিয়ে ক্রমশ শুরু হল উজান ঠেলার লড়াই। সমাজসেবী সংস্থার ‘সিস্টার-দিদি’ অ্যালেক্সিয়া, শিজাদের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল জেলেই। তাঁরাই সাহায্যের হাত বাড়ান। ‘সিস্টার-দিদি’র কিনে দেওয়া দু’টি সেলাইকলে বসেই শুরু হয় সাইমার নতুন জীবন।

দুটোর জায়গায় এখন আটটা মেশিন। কিছু কেনা, কিছু ভাড়ার। টিনের চালের কারখানায় ছোট দেওর রাজু নস্করও ব্যবসায় বৌদির শরিক। গ্রামের আরও দু’চার জন মজুরির বিনিময়ে হাত লাগায় প্যান্ট তৈরিতে। ছিটকাপড় কিনে এনে কেটেছেঁটে হাওড়ায় বিক্রি হয় ‘সাহিল জিন্স’।

এই ব্যবসার টাকাই ঢালা হয়েছে হাইকোর্ট থেকে সাইমার শ্বশুর, শাশুড়ি, স্বামীর জামিন করাতে। ছেলেমেয়েদের ইস্কুলও চলছে। সিস্টার শিজার কথায়, ‘‘বাচ্চাদের মানুষ করার জেদটাই পরিশ্রমী মেয়েটাকে তাড়া করে বেড়ায়।’’ সাইমার আশা, হাটে নিজের দোকান হবে এ বার।

জেলের ক’টা বছরে তছনছ জীবন গোছাতে মাথা তোলে নাছোড় অঙ্গীকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Prisoner Saima Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy