ভোগান্তি: ভিআইপি রোডে গাড়ির দীর্ঘ সারি। শনিবার সন্ধ্যায় হেঁটেই হাওড়া স্টেশনের পথে নিত্যযাত্রীরা (নীচে)। ছবি: নিজস্ব চিত্র ও রণজিৎ নন্দী
নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক পঞ্জির (এনআরসি) বিরোধিতায় রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে যে কালো পতাকা দেখানো হবে, তা জানানো হয়েছিল আগেই। কিন্তু সেই বিক্ষোভের মাত্রা যে এমন হবে, তা আঁচ করা যায়নি। যার ফল, পথে বেরোনো মানুষজনের চরম ভোগান্তি। শহরের একাধিক রাস্তা বিভিন্ন সময়ে বন্ধ থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রইলেন অফিস ফেরত যাত্রীরা। পুলিশ রাস্তা পেরোতে না দেওয়ায় কাউকে হেঁটে যেতে হল এক কিলোমিটারেরও বেশি, কেউ যানজটে আটকে রইলেন পাক্কা ঘণ্টা দুয়েক। এক সময়ে তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙল। শনিবার বেলায় শুরু হওয়া এই
দুর্ভোগ চলল রাত পর্যন্ত। দিনভর অবরুদ্ধ হয়ে রইল ধর্মতলা মোড়ও। বিমানবন্দর সংলগ্ন একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ায় যানজটের কবলে পড়ে সেখানকার যশোর রোড ও ভিআইপি রোড-সহ বিভিন্ন রাস্তা।
প্রধানমন্ত্রীর সফর বাধাহীন রাখতে এ দিন সকাল থেকে অ্যালুমিনিয়াম ব্যারিকেড ও গার্ডরেল দিয়ে ধর্মতলা এবং বি বা দী বাগ চত্বরের একাধিক রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয় ওয়াটারলু স্ট্রিট, আর এন মুখার্জি রোড, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ের মতো রাস্তাতেও। লালবাজার জানিয়েছে, মোদীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে বিকেলে যান নিয়ন্ত্রণ করা হয় রেড রোড, গভর্নমেন্ট প্লেস (ইস্ট), ওল্ড কোর্ট হাউস স্ট্রিট, স্ট্র্যান্ড রোডের মতো অফিসপাড়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলিতে। একটা সময়ে বন্ধ করে দেওয়া হয় ওই সব রাস্তার আশপাশের ছোট-বড় রাস্তাও। এমনকি, একাধিক মোড় থেকে দুপুরের পরে পথচারীদের রাস্তা পেরোতেও দেওয়া হয়নি। ছুটির পরে অফিস থেকে বেরিয়ে বাধা পেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন যাত্রীদের একটা বড় অংশ। বিকেলে বি বা দী বাগের কারেন্সি বিল্ডিং এবং সন্ধ্যায় মিলেনিয়াম পার্কে অনুষ্ঠানের পরে জলপথে প্রধানমন্ত্রীর বেলুড় মঠ রওনা হওয়া পর্যন্ত চলেছে ওই হয়রানি। সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ বন্ধ করে দেওয়া হয় এস এন ব্যানার্জি রোডের মুখও। রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ দিয়ে মিছিল যাওয়ার সময়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বিক্ষোভকারীদের। রাত পর্যন্ত ধর্মতলায় বসে থাকেন আন্দোলনকারীরা। বেশ কিছু ক্ষণ পর থেকে মধ্য, উত্তর এবং দক্ষিণ কলকাতায় যান চলাচল ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
আরও পড়ুন: মোদী বিরোধী বিক্ষোভে সড়ক-পাতালে চরম দুর্ভোগ, নাজেহাল শহরবাসী
গভর্নমেন্ট প্লেসে অফিস জৈশ আগরওয়ালের। এ দিন অফিস ছুটির পরে গাড়ি পেতে তাঁর সময় লেগেছে প্রায় এক ঘণ্টা। ক্ষুব্ধ জৈশের অভিযোগ, ছুটি হলেও পুলিশ গাড়ি আসতে দিচ্ছিল না। শেষে মহাকরণ পর্যন্ত হেঁটে গিয়ে তিনি গাড়ি ধরেন। ব্রেবোর্ন রোডের একটি অফিসের কর্মী কেকা দাশগুপ্তকে আবার অফিস থেকে হাওড়া স্টেশন পর্যন্ত হেঁটেই যেতে হয়েছে। কারণ, লঞ্চ বন্ধ! তিতিবিরক্ত কেকা বলেন, ‘‘যানজটে দু’ঘণ্টা আটকে ছিলাম।’’
পুলিশ জানায়, ডোরিনা ক্রসিং, ধর্মতলা মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে দেওয়া হয়েছিল বেলা ১২টা থেকে। ফলে যান চলাচলের গতি বাধা পায় এসপ্লানেড ইস্ট, এস এন ব্যানার্জি রোড, লেনিন সরণিতে। বেশ কিছু গাড়িকে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলে দেখা গিয়েছে গাড়ির লম্বা সারি। অন্য দিকে, প্রধানমন্ত্রীর যাতায়াতের জন্য বি বা দী বাগের মূল রাস্তা বন্ধ থাকায় হাওড়া সেতু দিয়ে আসা সব গাড়িকে মহাত্মা গাঁধী রোড এবং পোস্তা দিয়ে পাঠানো হয়। এর জেরে বড়বাজারের গাড়ির লাইন পৌছে যায় কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত। একই সঙ্গে ধর্মতলা আটকে থাকায় অবস্থা সামাল দিতে মৌলালি এবং শিয়ালদহ থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। রাতে সব গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়া হয় নিউ রোড দিয়ে। মিছিলের জন্য আশুতোষ মুখার্জি রোডেও গাড়ির দীর্ঘ লাইন ছিল। পরে চৌরঙ্গি থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়ার চেষ্টা হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy