পছন্দসই: ধর্মতলার বিধান মার্কেটে জার্সি কিনতে ব্যস্ত দুই খুদে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
পর পর সাজানো নীল জার্সি। তার কয়েকটি দেখতে দেখতেই দাম জিজ্ঞাসা করলেন এক যুবক। অন্য ক্রেতাদের সামলানোর ফাঁকে দোকানদারের উত্তর, ‘‘ওটা আজ ২২০। কাল কত হবে, জানি না!’’ শুনে অবাক যুবক বললেন, ‘‘এক সপ্তাহ আগেই তো বিরাটের জার্সি ২০০ টাকা ছিল। এর মধ্যে ২০ টাকা বেড়ে গেল?’’ কথা শেষ না হতেই দোকানির সপাট জবাব, ‘‘আজ এসেছেন বলে তা-ও দিতে পারছি, কাল এলে সেটাও হয়তো পাবেন না।’’
ধর্মতলার বিধান মার্কেটে জার্সি কেনার এই ছবিই বলে দিচ্ছে, শহর কতটা ক্রিকেট-জ্বরে কাবু। এর সঙ্গেই পাল্লা দিচ্ছে উড়ানের ভাড়া। অবস্থা এমনই যে, সিঙ্গাপুর থেকে কলকাতায় যাতায়াতের দু’জনের টিকিটের দাম যেখানে ৮০ হাজার টাকার কাছাকাছি, সেখানে কলকাতা-আমদাবাদে দু’জনের যাতায়াতের জন্য লাগছে প্রায় ৯৬ হাজার টাকা!
ভারত সেমিফাইনালে ওঠার পরে যে উন্মাদনার আঁচ মিলতে শুরু করেছিল, ওয়াংখেড়েতে নিউজ়িল্যান্ডকে ছিটকে দিতে তা প্রবল আকার নিয়েছে। ছেলেকে নিয়ে সিঙ্গাপুর থেকে রবিবার আমদাবাদে আসছেন অমিত জৈন। শুক্রবার ফোনে অমিত বললেন, ‘‘মুম্বই থেকে বন্ধু বলল ফাইনালের টিকিট পেয়েছে। মাত্র ১০ দিন আগে ঠিক করি, ছেলেকে নিয়ে আসব। কিন্তু টিকিটের দাম তো এই। হোটেলেও এক রাতে এক লক্ষ টাকা চাইল! তাই ঠিক করেছি, শনিবার কলকাতায় এসে আমাদের বাড়িতে থাকব। রবিবার ভোরের উড়ানে আমদাবাদ। ফেরার টিকিট সোমবার ভোরের। খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকেই বিমানবন্দর চলে যাব।’’ আবার ব্যক্তিগত কাজে ভিলাইয়ে এসে সেখান থেকে সোজা ট্রেনে আমদাবাদ যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন উল্টোডাঙার বাসিন্দা অভিজিৎ ঘোষ।
‘ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন’-এর পূর্বাঞ্চলের সেক্রেটারি অঞ্জনি ধানুকা বলেন, ‘‘শেষ মুহূর্তে এক-এক জনের যাতায়াতের টিকিট ৮০ হাজার দিয়েও কেটেছি।’’ আজ, শনিবার পর্যটন ওয়েবসাইটে কলকাতা-আমদাবাদ এক পিঠের সরাসরি উড়ানের টিকিট বিকোচ্ছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকায়। ‘ট্র্যাভেল এজেন্টস ফেডারেশন’-এর ন্যাশনাল কমিটির সদস্য অনিল পঞ্জাবি বললেন, ‘‘একটু আগে থেকে যাঁরা পরিকল্পনা করেছেন, তাঁরা তুলনায় কম টাকায় টিকিট পেয়েছেন।’’
গুজরাতে তুঙ্গে ঘরের ভাড়াও। ‘ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব টুর অপারেটর্স’-এর গুজরাতের চেয়ারম্যান রণধীর সিং বাগেলা শুক্রবার আমদাবাদ থেকে ফোনে জানালেন, অতিথিশালায় এক রাত থাকার খরচ ছুঁয়েছে গড়ে ১০ হাজার টাকা। হোম-স্টে ৩৫ হাজার, চারতারা মানের হোটেলের ভাড়া অন্তত ৭০ হাজার। তা-ও সহজে ঘর মিলছে না।
খাস কলকাতাতেও উত্তেজনা কম নয়। বিধান মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সেমিফাইনালে ভারত ব্যাট করে সাড়ে তিনশোর গণ্ডি পেরোতেই দু’-একটি করে অর্ডারের ফোন পাচ্ছিলাম। এখন আর ফোন বন্ধ রাখা যাচ্ছে না। তা-ও ভাগ্যিস কলকাতায় ফাইনাল হচ্ছে না!’’ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বিরাট ও রোহিতের নাম লেখা জার্সির চাহিদাই বেশি। এক ব্যবসায়ী রাকেশ সিংহের কথায়, ‘‘সকলেরই ১৮ নম্বর জার্সি চাই। শেষ মুহূর্তে তড়িঘড়ি কিছু অর্ডার দিয়েছি।’’
নতুন জার্সি গায়ে ধর্মতলা চত্বরে ঘুরছিলেন বাঘা যতীনের সৌম্য রক্ষিত। বললেন, ‘‘গত দু’বার সেমিফাইনালে যে ভাবে হেরেছিলাম, তাই আগে জার্সি কেনার সাহস পাইনি। এ বার সেমিফাইনালের গাঁট পেরোতেই চলে এসেছি। আমাদের আর আটকায় কে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy