ছবি: সংগৃহীত
বিমানসেবিকার কোর্সে ভর্তি হতে গিয়ে একাধিক তরুণ-তরুণী প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ জমা পড়েছিল। এ বার অভিযোগ গড়াল ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে। তিলজলার বাসিন্দা এক তরুণীর দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে সম্প্রতি কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালত অভিযুক্ত সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দিয়েছে।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বিমানসেবিকার পাঠক্রমে ভর্তি হতে ক্যামাক স্ট্রিটের ‘ফ্রাঙ্কফিন অ্যাভিয়েশন সার্ভিস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে বলেন, ‘‘ওই সংস্থার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জমা পড়েছে। বেকার তরুণ-তরুণীদের চাকরির লোভ দেখিয়ে যে পদ্ধতিতে ওরা প্রতারণা করেছে তাতে শীঘ্রই আমরা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করব।’’
সিঁথির বাসিন্দা মনোস্মিতা সেনগুপ্তের অভিযোগ, ‘‘সংস্থার ওয়েবসাইট দেখে বছর দু’য়েক আগে বিমানসেবিকার পাঠক্রমে ভর্তি হয়েছিলাম। কয়েক মাস ক্লাস করার পরে সংস্থার তরফে আমাকে জানানো হয়, বয়স বেড়ে যাওয়ার জন্য ওই পাঠক্রমে পড়ে লাভ হবে না। তত দিনে সংস্থাকে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কোর্স ছেড়ে দেওয়ার পরে বারবার আবেদন করেও টাকা ফেরত পাইনি। বাধ্য হয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ দায়ের করি।’’ আর এক অভিযোগকারী, গড়িয়ার
বাসিন্দা প্রিয়ান্তু আচার্যের কথায়, ‘‘সংস্থার বিজ্ঞাপন দেখে চলতি বছরের জুন মাসে ভর্তি হয়েছিলাম। প্রথমে ভর্তি হতে পনেরো হাজার টাকা বললেও ডেবিট কার্ড দিলে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে আটত্রিশ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হয়।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘পনেরো হাজার টাকার বিনিময়ে আটত্রিশ হাজার টাকা কেটে নেওয়ায়, টাকা ফেরতের কথা বলতেই আমাকে সংস্থার প্রতিনিধিরা অনলাইনে আবেদন করতে বলেন। বারবার আবেদন করেও টাকা ফেরত না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে অভিযোগ দায়ের করি।’’
তিলজলার কুস্টিয়া রোডের বাসিন্দা রিজওয়ানা পারভিন সংস্থার ওয়েবসাইট দেখে বছর দু’য়েক আগে ‘কেবিন ক্রু’-র ডিপ্লোমা পাঠক্রমে ভর্তি হন। সেই বাবদ তিনি সংস্থাকে দেড় লক্ষ টাকা দেন। অভিযোগ, পাঠক্রম শেষ হওয়ার পরে দু’টি বেসরকারি বিমান সংস্থায় ‘কেবিন ক্রু’ পদে ইন্টারভিউ দিতে গেলে উচ্চতা কম থাকায় তাঁকে বাতিল করা হয়। পারভিনের আইনজীবী সুব্রত মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘ক্যামাক স্ট্রিটের সংস্থার চরম প্রতারণার জন্য আমার মক্কেলের জীবনে বড় ক্ষতি হয়ে গেল।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘বিমানসেবিকার মতো পদে চাকরি পেতে উচ্চতা একটা বিষয় অবশ্যই। অথচ আমার মক্কেলের উচ্চতা না দেখেই তাঁর থেকে মোটা টাকা নিয়ে ভর্তি করা হয়েছিল।’’ গত ২৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দুই বিচারক স্বপনকুমার মোহান্তি এবং সাহানা আহমেদ বসু তাঁদের রায়ে বলেন, ‘‘বিমান সেবিকার পদে আবেদনকারীর উচ্চতা যথেষ্ট নেই জেনেও তাঁকে ভর্তি নেওয়া হয়েছিল। সংস্থার অসাধু ব্যবসার জন্য তরুণীর ভবিষ্যতের যাবতীয় স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেল।’’
রায় বেরোনোর পঁয়তাল্লিশ দিনের মধ্যে অভিযোগকারিণীকে মামলা চলানোর খরচ, ক্ষতিপূরণ বাবদ প্রায় দু’লক্ষ টাকা ফেরত দিতে নির্দেশ দেয় আদালত। রায় প্রসঙ্গে অভিযুক্ত সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট (লিগ্যাল) সঞ্জয় গুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের সংস্থার যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। কলকাতা জেলা আদালতের রায়ে আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। এই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে গিয়েছি।’’ ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে সংস্থার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগ প্রসঙ্গে সঞ্জয়বাবু বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই দফতরে যোগাযোগ করে ওই সমস্ত অভিযোগের মীমাংসা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy