গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
শরীরে দু’ডজনেরও বেশি গভীর ক্ষত। পেট আড়াআড়ি ভাবে চেরা। ধর থেকে মুন্ডু আলাদা হয়ে গিয়েছে। গড়চা রোডের বাসিন্দা ঊর্মিলাদেবীর দেহ এই অবস্থাতে পড়ে ছিল বিছানায়। কলকাতার বুকে এমন নৃশংস খুনের ঘটনা খুব কমই ঘটেছে। যা দেখে শিউরে উঠেছেন গোয়েন্দারা। তাঁদের অনুমান, কারও উপর যদি খুব আক্রোশ থাকে তবেই তার পক্ষে এমন ভাবে খুন করা সম্ভব। গড়িয়াহাট থানার পুলিশের কাছে খুনের এই ভয়াবহতার খবর শুনে গড়চা রোডে পৌঁছন খোদ গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা।
পুলিশ সূত্রে খবর, ওই বৃদ্ধার বয়স প্রায় ৬০ বছর। গলায় হার, কানের দুল এবং হাতের বালা খোয়া যায়নি। ঘরে দু’শো টাকা নোটের বান্ডিল ছিল, তা-ও আততায়ী নিয়ে যায়নি। তা দেখে গোয়েন্দাদের অনুমান, চুরি করতে এসে খুন করলেও, সোনা-গয়না ফেলে যাওয়ার কথা নয়।
গরচা রোডের ওই বাড়িতে তিনটি ঘর রয়েছে। মাঝের ঘরের বিছানায় ক্ষতবিক্ষত এবং মুন্ডু কাটা অবস্থায় বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার হয়েছে। দেওয়ালের সঙ্গে সাটা একটি আলমারির জামাকাপড় মেঝেতে পড়ে ছিল। কিন্তু আরও একটি আলমারি ছিল। তা খোলেনি আততায়ী। এক গোয়েন্দা কর্তা বলেন, “চুরি বা ডাকাতি করতে এলে, সরঞ্জাম নিয়েই আসে তারা। যে ভাবে খুন করা হয়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে আক্রোশের জেরে খুন করা হয়েছে। প্রথমে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গভীর ক্ষত করা হয়। প্রায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চির প্রচুর ক্ষত রয়েছে দেহে। তখন চিকিৎসা পরিভাষায় ঊর্মিলাদেবীর মৃত্যু হয়ে হয়েছে বলা যায়। কিন্তু ‘ব্রেন ডেথ’ হয়নি তাঁর। এটাকে বলে ‘পেরিমর্টাম স্টেজ’। ওই অবস্থাতেই তাঁর পেট চিরে দেওয়া হয়। তার পর মুণ্ড থেকে ধড় আলাদা করে দেওয়া হয়।”
ঘটনাস্থলে গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা ও ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালি।—নিজস্ব চিত্র।
এই নৃশংস খুনের ঘটনায় গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা নিজে ঘটানাস্থল পরিদর্শন করে খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেন। এমনকি তিনি পুলিশ কুকুর যে দিকে গিয়েছে, তার পিছনেও ছুটে বেড়িয়েছেন। তা দেখে ঘটনাস্থলে হাজির পুলিশ কর্মীদের বলতে শোনা যায়, এমন আইপিএস অফিসার খুব কমই আছে যিনি নিজে তদন্তের কিনারা করতে পুলিশ কুকুরের পিছনে ছুটে বেড়াচ্ছেন। শুধু তাই নয়, বৃদ্ধার দেহ পরীক্ষার জন্যে ঘটনাস্থলে আনা হয় ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহালিকে। কলকাতা পুলিশের বহু ঘটনার কিনারার নেপথ্যে তাঁর ভূমিকা রয়েছে।
আরও পড়ুন: এসএসকেএমে যৌন হেনস্থা, যুবককে পাকড়াও করে পুলিশে দিলেন তরুণী নিজেই
এক অফিসার বলেন, ‘‘বিকেল চারটের পর ময়নাতদন্ত হয় না।’’ তিনি জানাচ্ছেন, কী অবস্থায় দেহ পড়ে রয়েছে, কত ক্ষণ আগে ওই বৃদ্ধা খুন হয়েছেন, এ বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা পেতে চিকিৎসক বিশ্বনাথ কাহলিকে ঘটনাস্থলে আনা হয়। গোয়েন্দাদের অনুমান, ঊর্মিলাদেবী খুন হয়েছেন, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টার মধ্যে। কারণ, শুক্রবার রাতে দিদার জন্যে খাবার এনেছিলেন নাতনি। রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে চলেও যান তিনি। রাত ১২টা নাগাদ পর্যন্ত জেগেছিলেন। ফলে তার আগে খুন হওয়া সম্ভব না। দেশি মদের দোকান লাগোয়া ওই বাড়িটির অবস্থান। সদর দরজা বন্ধ থাকে না। জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে ওই বৃদ্ধার ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল না। প্রশ্ন উঠছে, পরিচিত কারও হাতে কি খুন হয়েছেন, ঊর্মিলাদেবী? না কি পরিচিত কেউ সুপারি কিলার দিয়ে খুন করিয়েছেন? এ বিষয়টি ভাবাচ্ছে পুলিশকেও।
আরও পড়ুন: এনআরসি-সিএবি এক বন্ধনীতে এনে অস্ত্রে শান কুশলী প্রশান্তের
তিন ছেলের মধ্যে, বড় ছেলে মারা গিয়েছেন, ছোট বলরামকুমারের সঙ্গে থাকতেন ঊর্মিলাদেবী। প্রতি দিন ভোরে কাজে আসতেন পরিচারিকা। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার সময় আসেন। বলরাম স্ত্রীকে নিয়ে কোচবিহারে বিয়েবাড়িতে গিয়েছিলেন। তাই বাড়ি ফাঁকাই ছিল। ওই পরিচালিকা এ দিন কাজ করতে এসে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় বিছানায় পড়ে রয়েছেন ঊর্মিলাদেবী। প্রতিবেশীদের খবর দেন। প্রত্যক্ষদর্শী ইন্দ্রনীল চন্দ্র জানিয়েছেন, জানলা সরাতেই দেখা যায়, বিছানায় পড়েছিল দেহ। পেট চেরা শরীরের বিভিন্ন জায়গা ক্ষত বিক্ষত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy