Advertisement
০৬ নভেম্বর ২০২৪
kolkata protest

চাকরির দাবিতে পোস্টার হাতে সাতাত্তরের বৃদ্ধ

সৃজন সেন বললেন, ‘‘চাকরি করি না ঠিকই। গণ আন্দোলনই আমার সব। পার্টির ‘হোল টাইমার’ ভাববেন না আবার! যেখানে আন্দোলন হয়, সেখানেই চলে যাই। আমার ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু এ প্রজন্মের তো চাকরি চাই!’’

পোস্টারে প্রতিবাদ। শনিবার ধর্মতলায় সৃজন সেন। নিজস্ব চিত্র

পোস্টারে প্রতিবাদ। শনিবার ধর্মতলায় সৃজন সেন। নিজস্ব চিত্র

নীলো‌ৎপল বিশ্বাস
শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:১৯
Share: Save:

৫১ বছর ধরে তিনি নিজেই বেকার। তবু শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কলকাতায় আগমনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী জমায়েতে তাঁর গলাতেই শোনা গেল চাকরির দাবি। বাড়ি থেকে লিখে আনা পোস্টার দু’হাতে শূন্যে তুলে ধরে নাগেরবাজারের বাসিন্দা, বছর সাতাত্তরের সৃজন সেন বললেন, ‘‘চাকরি করি না ঠিকই। গণ আন্দোলনই আমার সব। পার্টির ‘হোল টাইমার’ ভাববেন না আবার! যেখানে আন্দোলন হয়, সেখানেই চলে যাই। আমার ব্যাপারটা আলাদা। কিন্তু এ প্রজন্মের তো চাকরি চাই!’’

কথা শেষ করেই মুহূর্তে চেঁচিয়ে ওঠেন, ‘‘তুমি এসপার না ওসপার, ঠিক করবে কোন সরকার?’’

তত ক্ষণে ধর্মতলা মোড়ের সব দিকেই যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা সারিবদ্ধ গাড়ির দিকে মুখ করে এর পরে এক পথচলতিকে তিনি অনুরোধ করলেন, ‘‘হাতের ব্যানারটা একটু ধরবেন? আরও অনেকগুলো এঁকে এনেছি, একটু বার করি!’’ বৃদ্ধের ঝোলা থেকে এর পরে বেরোল সাদা আর্ট পেপার সাঁটা একাধিক পিস বোর্ড। কোনওটায় ব্যঙ্গ করা হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে। কোনওটায় আবার মোদী এবং অমিত শাহ, দু’জনকেই। এমনই একটি বোর্ডে আবার জ্বলজ্বল করছেন অভিনেতা শাহরুখ খান। তাতে লেখা, ‘দুর্জয় বাংলার ডোবালেন মান, বাংলার রাজদূত শাহরুখ খান। জেএনইউ-তে গুন্ডামি দেখেন না তিনি। কে বলবে, বাংলার প্রতিনিধি ইনি?’

আরও পড়ুন: প্রতিবাদে ‘বন্ধু’ অসম আর কলকাতা

এমন কত রয়েছে?

হাঁপাতে থাকা বৃদ্ধ খানিক শ্বাস নিয়ে বললেন, ‘‘বাড়িতে অনেক আছে। অত তো বয়ে আনা যায় না! কালই যেমন পার্ক সার্কাসের প্রতিবাদসভায় অন্য রকম একটা লিখে নিয়ে গিয়েছিলাম। আজ ভোর থেকে এই মিছিলের জন্য লেখা শুরু করেছি।’’ একের পর এক নিজের কাজ দেখাতে থাকা বৃদ্ধের চোখ-মুখ জ্বলজ্বল করে। বলেন, ‘‘আমি কিন্তু শিল্পী নই। আঁকাও শিখিনি। তবে দেখে দেখে এঁকে দিতে পারি।’’

জানালেন, কলেজে পড়া শেষ করে এক সময়ে চাকরিতে ঢুকেছিলেন। কিন্তু বেসরকারি সংস্থার কাজ বেশি দিন ভাল লাগেনি। খাদ্য আন্দোলন থেকে শুরু করে তত দিনে তাঁর বেশ কয়েকটি গণ আন্দোলনে হাজির থাকা হয়ে গিয়েছে। ১৯৬৯ সালে চাকরি ছেড়ে দিয়ে পাকাপাকি ভাবে গণ আন্দোলনই করবেন বলে ঠিক করেন। সে সব দিনের কথা শোনানোর ফাঁকেই হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘আমার স্ত্রী স্কুলে পড়াতেন। তাই আন্দোলন করে যেতে পেরেছি। আমার ভাবনায় তাঁরও যথেষ্ট সমর্থন রয়েছে। এখন অবশ্য তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এই সব আঁকার জন্য রং-তুলি কেনার প্রয়োজন হলে এখন একটু মেজাজ হারান। তবে সে সব মুহূর্তে ভুলেও যান।’’ স্ত্রী মিছিলে আসেননি? বৃদ্ধের উত্তর, ‘‘এলে ভালই হত। এতগুলো আঁকা রয়েছে। দু’জনে মিলে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা যেত।’’

কত রাত পর্যন্ত থাকবেন? শীতের রাত বাড়ে। বৃদ্ধের হাত তবু শূন্যে তুলে ধরা পোস্টার ছাড়ে না। বন্ধ হয় না তাঁর গলায় কবিতাও— ‘‘তুমি তোমার বুকের ভিতর আগুন জ্বেলে রাখো। হৃদয়কলস পূর্ণ করে রাখো প্রবল ঘৃণা। বীজ ও মাটির শস্য দিয়ে যাচাই করে দেখো, ঘৃণা ছাড়া আমায় ভাল বাসতে পারো কি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Protest Narendra Modi Joblessness in India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE