Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coronavirus

ভয় সরিয়ে পুজো প্রস্তুতিতে কোভিডজয়ী দুই বৃদ্ধা

নারীশক্তির আরাধনায় আরও অনেক নারী নেমে পড়েছেন ময়দানে। পাড়ার যে জমি ছিল আগাছায় ভর্তি, যেখানে জমত আবর্জনার স্তূপ, রাতে চলত অসামাজিক কাজকর্ম— তা সাফ-সুতরো করে পুজোর শুরু বছর পাঁচেক আগে। সেই লড়াই এখনও অব্যাহত

সেই দুর্গামণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

সেই দুর্গামণ্ডপ। নিজস্ব চিত্র

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৪২
Share: Save:

কোমর বেঁধেছেন তাঁরা। মনে মনে মন্ত্র জপছেন, যতই প্রতিকূল পরিস্থিতি আসুক, থাকুক কোভিডের চোখরাঙানি— উদ্যম হারিয়ে ফেললে চলবে না। পুজোটা কিন্তু করতে হবে।

তাই এক নারীশক্তির আরাধনায় আরও অনেক নারী নেমে পড়েছেন ময়দানে। পাড়ার যে জমি ছিল আগাছায় ভর্তি, যেখানে জমত আবর্জনার স্তূপ, রাতে চলত অসামাজিক কাজকর্ম— তা সাফ-সুতরো করে পুজোর শুরু বছর পাঁচেক আগে। সেই লড়াই এখনও অব্যাহত।

গড়িয়া অঞ্চলের এই পুজোর চালিকাশক্তি মহিলারাই। পুজো কমিটিতে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা যেমন রয়েছেন, তেমনই সক্রিয় ভাবে আছেন রোজকার সংসার সামলে খেটে খাওয়া যুবতীরাও। কমিটির সদস্য, ৭৫ বছরের দীপ্তি সরকারের কোভিড ধরা পড়েছিল এপ্রিলে। এক বোন ছাড়া কেউ নেই তাঁর। বৃদ্ধার পাশে দাঁড়ান অন্য সদস্যেরা। তাঁরাই উদ্যোগী হয়ে দীপ্তিদেবীকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে সুস্থ করে তুলেছেন। মনের মধ্যে একটাই ভাবনা ঘুরপাক খাচ্ছিল, পুজোটা করতে হবে।

পুজোর প্রেসিডেন্ট, বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত সঙ্গীতা দে জানিয়েছেন, দীপ্তিদেবীর পরে মে মাসে করোনা আক্রান্ত হন আর এক সদস্য দেবশ্রী সাধু। তিনিও সত্তরোর্ধ্ব। তাঁকে অবশ্য হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়নি। সকলের প্রচেষ্টায় এখন সুস্থ দেবশ্রীদেবী।

তার পরে শুরু হয়েছে পুজো কমিটির বৈঠক। সঙ্গীতার কথায়, ‘‘জাঁকজমকের কোনও প্রশ্ন নেই। দূরত্ব-বিধির কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে। প্রতি বছর তিন দিন খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা থাকে। এ বার সেটা সম্ভব নয়। হবে না ফল কাটা বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাঁদা তোলাও। ঢাকিকেও আসতে বারণ করা হয়েছে। প্রয়োজনে ক্যাসেটে ঢাক বাজবে। কিন্তু পুজো হবেই।’’

সঙ্গীতা জানিয়েছেন, পাড়ায় কালীপুজো হলেও দুর্গাপুজো ছিল না। একটি জমি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছিল বহু দিন। কার জমি, জানা যায়নি। সেই জমিতেই স্তূপীকৃত হত আবর্জনা। রাতে বসত নেশার আসর। এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে বেরোতে একজোট হন তাঁরা। জমি পরিষ্কার করে পুজো শুরুর প্রস্তাব দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। সম্মত হন সকলে।

সঙ্গীতা বলেন, ‘‘স্থানীয় ১০০ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর সুস্মিতা দাম এগিয়ে আসেন। সহযোগিতার হাত বাড়ান নেতাজিনগর থানার পুলিশকর্তারাও। জমির মালিকের খোঁজ শুরু হয়। সংবাদপত্রেও বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। ঘাঁটা হয় পুরসভার নথি। কিন্তু মালিককে পাওয়া যায়নি।’’

২০১৫ সালে শুরু হয় পুজো। তার পর পাঁচিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে সেই জমি। পাকাপাকি দালান তৈরি হয়েছে। দুর্গাপুজোর পাশাপাশি সারা বছর বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয় সেখানে। সে ইংরেজি নববর্ষ পালনই হোক বা বসন্তোৎসব। অন্য সময়ে জমিতে ঢোকার দরজা বন্ধ থাকে।

কিন্তু জমির আসল মালিক ফিরে এলে?

সঙ্গীতারা জানেন, জমি ফেরত দিয়ে দিতে হবে। তাঁদের আশা, নতুন কোনও উপায় ঠিক বেরোবে। লড়াই ছাড়লে তো চলবে না। পুজোটা করতে হবে। প্রত্যয়ী শোনায় তাঁদের গলা।

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

অন্য বিষয়গুলি:

CoronaVirus Covid19 Garia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy