পরিদর্শন: একটি ক্ষতিগ্রস্ত, বিপজ্জনক বাড়ির অবস্থা খতিয়ে দেখছেন মেট্রোর আধিকারিকেরা। শনিবার, দুর্গা পিতুরি লেনে। নিজস্ব চিত্র।
এ যেন ঘোলা জলে মাছ ধরার চেষ্টা চলছে!
এই সুযোগে পুরনো ও বিপজ্জনক বাড়িগুলি যদি নতুন হয়ে যায়, তা হলেই আর সারানো নিয়ে দায় ঠেলাঠেলির ঝক্কি থাকে না! স্থানীয় সূত্রের খবর, বৌবাজারের ভাঙা মহল্লার পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের অনেকেরই এখন এমন মনোভাব।
জানা যাচ্ছে, তাঁরা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, যে বাড়ির যতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটুকু মেরামত করলেই হবে না। এলাকা পুরো মাঠ করে দিয়ে নতুন ভবন না তোলা পর্যন্ত তাঁরা ফিরবেন না! বিপজ্জনক বোর্ড লাগানো পুরনো বাড়ির বাসিন্দারাও বলছেন, ‘‘সব ভেঙে নতুন করে গড়ে দিতে হবে মেট্রোকেই। এই সুযোগে আমাদের বাড়িটা অন্তত পাঁচতলা হবে।’’
সূত্রের খবর, এই দাবি যাঁরা করছেন, তাঁদের বেশির ভাগই পুরনো ভাড়াটে। স্থানীয় নেতা-দাদাদের একাংশের সমর্থন রয়েছে তাঁদের সঙ্গে। এলাকায় এমন ভাড়াটের দাপট অবশ্য কান পাতলেই শোনা যায়। এই তল্লাটে এমন বহু বাড়ি রয়েছে, যেখানে ভাড়াটের দাপটে মালিকই বাড়িতে ঢুকতে পারেন না। ফলে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা ভাড়ায় থাকা ভাড়াটেদের মধ্যে বাড়ির সংস্কার নিয়ে দায় ঠেলাঠেলি চলতেই থাকে।
রয়েছে অনেক বাড়ির শরিকি বিবাদও। বাড়ির সংস্কার না করে দেবোত্তর সম্পত্তির নামে আঁকড়ে থাকার উদাহরণও এলাকায় প্রচুর। পুরকর্তারাই বলছেন, ‘‘এমন বহু বাড়িই রয়েছে, যেগুলির সংস্কার হয় না বছরের পর বছর। বার বার বোঝালেও এগিয়ে আসেন না কেউ। কোথাও বাড়িওয়ালা দোষ চাপান ভাড়াটের উপরে। কোথাও উল্টোটা। ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি হলে ‘বিপজ্জনক’ লেখা বোর্ড পুরসভা ঝুলিয়ে দেয়। রাতে সেটাও খুলে ফেলা হয়। ঝড়-বৃষ্টি এলে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে রাখা হয়। পরে তাঁরা ফিরে যান।’’
এ ভাবেই চলতে চলতে ২০১৯ সালে ঘটে প্রথম দফার বিপর্যয়। সেই সময়ে ভেঙে পড়া ও বিপর্যস্ত মিলিয়ে মোট ২৩টি বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা করেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। আরও ২৩টি বাড়িতে মেরামতি করা হয়। পরিবার-পিছু পাঁচ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি মেরামত করা বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয় বাসিন্দাদের। তবে যে বাড়িগুলি নতুন করে তৈরির কথা, সেগুলির কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাসিন্দাদের রাখা হয় শহরের নানা জায়গায়। ওই সমস্ত পরিবার-পিছুও দেওয়া হয়েছে পাঁচ লক্ষ করে টাকা। এক পুর আধিকারিক বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ ভেঙে যে ২৩টি বাড়ি ফের তৈরি করার কথা, সেগুলির মধ্যেও বেশ কয়েকটি পুরনো ও বিপজ্জনক ছিল। ওঁরা পেলে আমরা কেন পাব না, এই ভাবনা থেকেই মেরামত করা সম্ভব, এমন বাড়ির বাসিন্দারাও এখন চাইছেন নতুন বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হোক। এমন বাড়ির সংখ্যা আটটি।’’
স্থানীয় ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিশ্বরূপ দে বললেন, ‘‘কিছু ক্ষেত্রে তো শাপে বর হচ্ছেই! এই এলাকায় প্রচুর পুরনো বাড়ি রয়েছে। শরিকি বিবাদে তালাবন্ধ হয়ে থাকে, এমনও বাড়ি আছে। মালিকেরা আসেনও না। এই সুযোগে যদি সমস্যার সমাধান হয়, মন্দ কী?’’
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর নির্মাণকারী কেএমআরসিএল-এর জিএম (প্রশাসন) এ কে নন্দী বললেন, ‘‘সব সময়েই কিছু মানুষ লাভ করে নেওয়ার সুযোগ খোঁজেন। এ ক্ষেত্রে কিন্তু ফাটল ধরা বাড়ির পরিস্থিতি কেমন, তা খতিয়ে দেখবে বিশেষজ্ঞ কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টের উপরে ভরসা রেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy