উঠে এসেছেন একঝাঁক নতুন শিল্পী। এ বার উৎসব কাপে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাজিমাত করেছেন তাঁরা। তবে পুরনোরাও হারিয়ে যাননি। ভবতোষ, সুব্রত, অমরের মতো নামী শিল্পীরা দেখিয়ে দিয়েছেন, এখনও পুরনো চাল ভাতে বাড়ে। এই প্রবাদ অবশ্য খাটছে পুজোগুলির ক্ষেত্রেও। কয়েকটি নতুন পুজো উঠে এলেও ভিড় টানার লড়াইয়ে সমানে সমানে টক্কর দিয়েছে কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্কের মতো নামী পুরনো পুজোগুলি।
ঠাকুরপুকুরের এস বি পার্ক সর্বজনীনের পুজো এ বার অন্যতম বিস্ময়। তার পিছনে মূল কারিগর পুরনো খেলুড়ে ভবতোষ সুতার। থিম পুজোর গো়ড়া থেকে কাজ করে আসা ভবতোষ এ বার এস বি পার্কে বেছে নিয়েছেন ‘বাঁক’-কে। সেই থিম ধরেই সেজেছে মণ্ডপ। সামনে মানুষের শিরদাঁড়ার আদলে রয়েছে বাঁক। ভবতোষ এ বার কাজ করেছেন পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের পুজো চেতলা অগ্রণীতেও।
থিম পুজোর গোড়াতেই ভবতোষের সঙ্গে জুড়ে থাকত অমর সরকারের নাম। প্রবীণ এই শিল্পী এ বার বাবুবাগানে ‘বাংলার ব্রতচারী’-কে তুলে ধরেছেন। তা দেখে প্রশংসা করেছেন দর্শকেরা। হরিদেবপুর নিউ স্পোর্টিংয়েও তাঁর কাজ তারিফ কুড়িয়েছে।
থিম পুজোর নামী শিল্পীর তালিকায় বহু বছর ধরেই জায়গা করে নিয়েছেন শিল্পী সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ক্লাব সুরুচি সঙ্ঘের ‘ঘরের ছেলে’ তিনি। প্রতি বছরই নিউ আলিপুরের ওই পুজোয় তুলে ধরেন নতুন নতুন কাজ। এ বার সেখানে মণ্ডপ সেজে উঠেছে ভুটানের বৌদ্ধ মঠের আদলে। রংবেরঙের কাজ দেখতে দুপুর থেকে ভোর পর্যন্ত লম্বা লাইন পড়ছে।
উৎসব কাপের আর এক পুরনো শিল্পী সুশান্ত পাল এ বার সাড়া জাগিয়েছেন খিদিরপুরের পল্লি শারদীয়ায়। সেখানে ‘সত্যম শিবম সুন্দরম’-এর থিম দেখে মুগ্ধ হয়েছেন দর্শকেরা। তারিফ কুড়িয়েছেন থিম পুজোর বোদ্ধাদেরও। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পুজো বলে খ্যাত নাকতলা উদয়নেও ভিড় টেনে দেখিয়েছেন সুশান্ত। লালাবাগান নবাঙ্কুরে ও়ড়িশার রঘুরাজপুরকে তুলে এনে চমক দিয়েছেন প্রশান্ত পাল। হরিদেবপুর বিবেকানন্দ স্পোর্টিংয়েও তাঁর কাজ ভিড় টেনেছে। বেহালা নতুন সঙ্ঘে নতুনত্বের চমক দিয়েছেন তিনি।
কলকাতার পুজোর পুরনো তারকা সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ার, মহম্মদ আলি পার্ক এ বছরও ভিড় টানার লড়াইয়ে প্রথম সারিতে। মহম্মদ আলি পার্কে স্বামীনারায়ণ মন্দিরের আদলে সেজে উঠেছে মণ্ডপ। দর্শকদের কথায়, মণ্ডপ যাই হোক, এই পুজো না দেখলে ঠিক ঘোরাটা সম্পূর্ণ হয় না। একই কথা খাটে কলেজ স্কোয়ারের ক্ষেত্রেও। মণ্ডপ যেমনই হোক, গোলদিঘির জলে আলোর কারুকাজ দেখতেই লোকে ভিড় করে। নবমীর রাতে কলেজ স্কোয়ারের লাইনে দাঁড়ানো প্রদীপ বসুর কথায়, ‘‘এখানকার প্রতিমারও একটা আলাদা টান রয়েছে।’’ শিয়ালদহ স্টেশনে নেমে ভিড়ের পুজো দেখা শুরুই হয় সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার থেকে। এ বার সেখানে চাঁদের বাড়ি দেখতে ষষ্ঠী থেকেই লাইন। নবমীর মাঝরাতেও ফুরোয়নি সেই ভিড়।
শহরের তিন পুরনো ‘পুজো’ তারকার সামনে ডিউটিতে থাকা পুলিশকর্মীরা সন্ধ্যা থেকে ভিড় সামলাতে হাঁফিয়ে উঠছেন। নবমীর রাতে দেখা গেল এক প্রবীণ পুলিশকর্মী তাঁর অনুজ এক সহকর্মীকে বলছেন, ‘‘প্রায় ত্রিশ বছর ধরে কলকাতার পুজোয় ডিউটি করছি। কোনও বার এই পুজোগুলিতে ভি়ড় কমতে দেখি না।’’
একই কথা অবশ্য বাগবাজার সর্বজনীন এবং ম্যাডক্স স্কোয়ারের ক্ষেত্রেও খাটে। যদিও ওই দু’টি পুজোকে অবশ্য তারকা-তালিকায় ফেলতে চান না পুজো ময়দানের কর্তারা। থিম পুজো, সাবেক পুজো— যে ধরনের কমিটিরই কর্তা হোক না কেন, একবাক্যে সবাই বলছেন, বাগবাজার এবং ম্যাডক্স—কলকাতার পুজোর ‘মুখ’। তাই কলকাতার কোনও পুজোতে ভি়ড় না হলেও ওই দুই পুজোতে হবেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy