ফাইল চিত্র।
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শেষ দেখা হয়েছে প্রায় বছর দুই আগে। এখন চোখে দেখার সহায় বলতে শুধুমাত্র ভিডিয়ো কল। তা-ও প্রতিদিন করা হয়ে ওঠে না। করোনা সংক্রমণের আতঙ্কে বাইরে বেরোনোও পুরোপুরি বন্ধ। বন্ধ হয়ে গিয়েছে বৃদ্ধাশ্রমের ভিতরে হওয়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। চার দেওয়ালের মধ্যে একপ্রকার বন্দি হয়েই জীবন চলছে। অসহায় ভাবে দিন কাটছে শহরে থাকা কয়েকশো বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের। ভগ্ন শরীরের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যেরও অবনতি হচ্ছে দিন দিন।
শহরে ছোট-বড় মিলিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা কম নয়। এই বৃদ্ধাশ্রমগুলিই শহরের কয়েক হাজার বৃদ্ধ-বৃদ্ধার স্থায়ী ঠিকানা। কারও পুত্র-পুত্রবধূ কাজের সূত্রে বিদেশে থাকেন। কারও সন্তান আবার চাকরি বা অন্য কোনও কারণে ভিন্ রাজ্যের বাসিন্দা। তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে দেখভালের জন্য বৃদ্ধাশ্রমে রেখে বিদেশ অথবা ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিতে বাধ্যা হয়েছেন অনেকে। বৃদ্ধাশ্রমে থাকা আবাসিকদের কারও বয়স ৭০, কারও বয়স ৮০ পেরিয়েছে। কেউ আবার ৯০ পেরিয়ে জবুথবু অবস্থায় প্রায় শয্যাশায়ী।
করোনা অতিমারির আগে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে বৃদ্ধাশ্রমেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হত। বিশেষ দিনগুলিতে থাকত ঘরোয়া অনুষ্ঠানের আয়োজন। রাখি পূর্ণিমা, দোল উৎসবে বাইরে থেকেও আশপাশের ছেলেমেয়েরা এসে সকলের সঙ্গে সময় কাটিয়ে যেতেন। থাকত আবাসিকদের জন্মদিন উদ্যাপনের ব্যবস্থা। পাশাপাশি, বছরে বেশ কয়েক বার দ্রষ্টব্য স্থানে নিয়ে যাওয়ার আয়োজন করা হত। কিন্তু করোনার জেরে শেষ এক বছরেরও বেশি সময় সবই বন্ধ। সংক্রমণের ভয়ে হয় না কোনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এমনকি, গত বছর থেকে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও দেখা হয়নি কারও। আগে মাঝেমধ্যে আবাসিকদের সন্তানেরা এসে তাঁদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে গেলেও সংক্রমণের ভয়ে আপাতত তা-ও বন্ধ করেছেন অধিকাংশ বৃদ্ধাশ্রমের কর্তৃপক্ষ। এখন সকলের সঙ্গী বলতে সংবাদপত্র ও টিভি। বেশ কয়েকটি বৃদ্ধাশ্রমে গান শোনার ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ আবাসিকেরই সে দিকে আগ্রহ কম বলেই জানা গেল।
কলকাতার সার্ভে পার্ক এলাকায় একটি বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্বে থাকা জয়ত্রী দাস বলেন, ‘‘প্রায় বছর দেড়েক ধরে বাইরের কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যা হত, করোনার কারণে সেগুলি বন্ধ। আপাতত আবাসিকদের পরিবারের লোকদেরও দেখা করার অনুমতি নেই। ভিডিয়ো কলেই সকলে কথা বলেন।’’
মুকুন্দপুরের কাছে একটি বৃদ্ধাশ্রমে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, আবাসিকদের অনেককেই করোনার প্রতিষেধক পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। বৃদ্ধাশ্রমের দায়িত্ব থাকা এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘সংক্রমণের
ভয়ে অনেকের সন্তান বাবা-মাকে বাইরে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেননি।
স্বাধীনতা দিবস, রাখিপূর্ণিমা, পয়লা বৈশাখ, রবীন্দ্রজয়ন্তী বা দুর্গাপুজোর সময়ে যে সব অনুষ্ঠান হত, সে সবও গত বছর থেকেই বন্ধ।’’ এমনকি, আবাসিকদের কারও বাইরে বেরোনো এবং বাইরের কেউ ভিতরে আসার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে ওই ব্যক্তি জানান। সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর ব্যবস্থা হলেও কার্যত এই বন্দিজীবনে আবাসিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে, সেই প্রশ্ন অবশ্য বেশির ভাগ বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষই এড়িয়ে গিয়েছেন।
মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে চার দেওয়ালের মধ্যে কাটানোর প্রভাব পড়তে পারে বৃদ্ধাশ্রমের আবাসিকদের মানসিক স্বাস্থ্যে। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রত্যেকের মেলামেশাটা জরুরি। দীর্ঘদিন ধরে এই ভাবে চলতে থাকলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের স্মৃতিশক্তিতে প্রভাব পড়তে পারে।’’ তাঁর পরামর্শ, মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতে আবাসিকদের যতটা সম্ভব খোলা জায়গায় সময় কাটাতে দিতে হবে, অন্যান্য আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় দিতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy