অপ্রতুল: যথেষ্ট গণপরিবহণ না থাকায় বাসে ওঠার জন্য যাত্রীদের ঠেলাঠেলি । মানা যাচ্ছে না দূরত্ব-বিধি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ
এ যেন আবোল-তাবোলের সেই ‘খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’র মতো পরিস্থিতি!
বেসরকারি বাসের ভাড়া কি বেড়েছে? উত্তরটা একই সঙ্গে হ্যাঁ এবং না। ভাড়া যে বাস্তবে বেড়ে গিয়েছে, তা জানেন সকলেই। কিন্তু খাতায়-কলমে, অর্থাৎ সরকারি ভাবে তা এখনও বাড়েনি। এর ফলে ভোগান্তি হচ্ছে কিন্তু সেই সাধারণ মানুষেরই, যাঁদের কথা ভেবে ভাড়া বাড়াতে চাইছে না রাজ্য সরকার। কিন্তু তাদের এই অবস্থান যে প্রকৃতপক্ষে ভাবের ঘরে চুরি বই কিছু নয়, সে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী যাত্রীদের অধিকাংশই। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি হারে ভাড়া কিছুটা বাড়লে ততটা অসুবিধা হত না। কিন্তু এখন বাসমালিকেরা যে চড়া হারে দ্বিগুণ বা তার কাছাকাছি ভাড়া নিচ্ছেন, তা সত্যিই চাপে ফেলে দিয়েছে অনেককে।
যে সমস্ত বাসমালিক পুরনো ভাড়ায় বাস চালাতে অস্বীকার করেছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী। প্রয়োজনে বাস ভাড়ায় নিয়ে চালানোর কথাও শুনিয়েছিলেন। বেসরকারি বাস এখন সংখ্যায় কিছুটা বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু বাসে উঠলেই গুনতে হচ্ছে ১০, ১২, ১৫ বা ২০ টাকা।
সাধারণ বাসে প্রথম চার কিলোমিটারে এখন গুনতে হচ্ছে ১০ টাকা। মিনিবাসে ১০ টাকা প্রথম তিন কিলোমিটারের জন্য। সাধারণ বাসে পরের চার কিলোমিটার, অর্থাৎ মোট আট কিলোমিটারে ভাড়া ১৫ টাকা। এই হার থাকছে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত। তার পর থেকে প্রতি চার কিলোমিটারে ভাড়া পাঁচ টাকা করে। মিনিবাসে সাত কিলোমিটার গেলেই ভাড়া ১৫ টাকা। আর প্রতি চার কিলোমিটারে পাঁচ টাকা অতিরিক্ত। কিছু রুটে ১০, ১২, ১৫ টাকাও নেওয়া হচ্ছে। গত বছরও বাসে উঠে যাঁরা সাত টাকা দিয়েছেন, তাঁরা এখন দিচ্ছেন ১০ টাকা।
শ্রীরামপুরের বাসিন্দা ভগীরথ দাস বৌবাজারের একটি বিপণির কর্মী। সরকারি বাস না-পেলে বেসরকারি বাসে চড়া ভাড়া দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। সোনারপুরের ধনঞ্জয় সর্দার ভবানীপুরে এক অটোমোবাইল সংস্থার কর্মী। ‘স্টাফ স্পেশ্যাল’ ট্রেনেই ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন। বালিগঞ্জ থেকে গড়িয়াহাট আসার জন্য অটোয় ১৫ টাকা ভাড়া গুনতে হচ্ছে। গড়িয়াহাট থেকে বাসে আরও ১৫ টাকা। যাত্রীদের অভিযোগ, অটো বা অন্য কোনও উপায়ে কাজের জায়গায় পৌঁছতে খরচ হচ্ছে চার-পাঁচ গুণ বেশি। তাই বাসই মন্দের ভাল।
বাসমালিক সংগঠনগুলি অবশ্য অভিযোগ মানতে চায়নি। ‘‘বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বললেন, ‘‘আমরা সরকারি ঘোষণা ছাড়া বেশি ভাড়া নেওয়ার বিরুদ্ধে। যাত্রীদের থেকে অনুদান হিসেবে কিছু টাকা নেওয়া হচ্ছে। অনেকে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আপত্তি করছেন। এ নিয়ে সংঘাত চাই না।’’ ‘মিনিবাস অপারেটর্স কোঅর্ডিনেশন কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন ঘোষ বলেন, ‘‘মালিকদের জোর করছি না। যাঁরা পারছেন, তাঁরা চালাচ্ছেন।’’ ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর সাধারণ সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘আমরা বেশি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু সরকার ভাড়া না বাড়ানোয় সমস্যা দেখা দিচ্ছে।’’ ভাড়া বৃদ্ধির দাবিতে এ দিন যাত্রীদের সই সংগ্রহ করেন ওই সংগঠনের সদস্যেরা।
পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম অবশ্য ভাড়া না বাড়ানোর যুক্তি হিসেবে গত শনিবার বলেছিলেন, ‘‘মানুষই বা দেবেন কী করে?’’ মঙ্গলবার বক্তব্য জানতে মন্ত্রীকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy