Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Covid Warrior

রোগীর মুখে হাসি ফোটাতে কেক কাটছেন নার্সেরা

জন্মদিন পালনের সঙ্গে সঙ্গে বাকি রোগীদের মুখেও কেক তুলে দিয়েছেন তৃণা মণ্ডল, শম্পা মান্নারা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০২১ ০৬:৩১
Share: Save:

আলিপুরের উত্তীর্ণ-র সেফ হোমে ভর্তি এক করোনা রোগীর থেকে এক নার্স জানতে পেরেছিলেন, সেখানে ভর্তি এক স্কুলছাত্রের জন্মদিনের কথা। শ্যামবাজারের বাসিন্দা, দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র মণীশ শর্মার জন্মদিন ছিল গত শুক্রবার। সে কথা জানতে পেরে মণীশের মুখে হাসি ফোটাতে চুপি চুপি নিজেরাই কেক কিনে আনেন সেখানকার নার্সেরা। আর তা দেখে হতবাক মণীশ! বলছে, ‘‘এত ঘটা করে বাড়িতেও কোনও দিন জন্মদিন পালন করা হয়নি। আমার বিশেষ দিনটিকে স্মরণ করার জন্য নার্সদের কাছে কৃতজ্ঞ।’’ আর জন্মদিন পালনের সঙ্গে সঙ্গে বাকি রোগীদের মুখেও কেক তুলে দিয়েছেন তৃণা মণ্ডল, শম্পা মান্নারা।
আলিপুরে উত্তীর্ণ-র সেফ হোমে নার্স হিসেবে কর্মরত, ক্যানিংয়ের বাসিন্দা তৃণা অবশ্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাড়ির পথ ধরেননি। বাড়ি ফিরলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় তৃণার মতোই দু’সপ্তাহ বাড়ি যাননি উত্তীর্ণে নার্স হিসেবে কাজ করা তুলি মণ্ডল, রিনা মণ্ডল, শম্পা মান্নারাও।
আলিপুরে উত্তীর্ণ সভাঘরের এক থেকে চারতলার পুরোটাই এখন তৈরি হয়েছে সেফ হোমে। সেখানেই দোতলায় থাকেন দূরদূরান্ত থেকে আসা নার্সেরা। কয়েক ঘণ্টা ঘুমনোর সময়টুকু বাদ দিয়ে দিনের বাকি সময়টুকু কোভিড রোগীদের জন্য কাজ করে চলেছেন তাঁরা। দিন চারেক আগের এক দুপুরে জনা কুড়ি রোগীকে সামলানোর দায়িত্ব ছিল নার্স শম্পা মণ্ডলের উপরে। রোগীদের ওষুধ দেওয়া থেকে শুরু করে রোগীর দেহের অক্সিজেন ও রক্তচাপ মাপা, খাবার পৌঁছনো, সব কিছু একার হাতে সামলাচ্ছেন শুনে কোনওরকমে পোশাক আর মাস্ক পরে দোতলা থেকে দৌড়ে চারতলায় হাজির বীণা মণ্ডল। তাঁর কথায়, ‘‘আমার আজ নাইট ডিউটি। রুমে সবে স্নান করে বেরিয়েছি। শম্পা একা আছে শুনে রোগীদের কষ্ট হবে বুঝে ওয়ার্ডে চলে এলাম। এখানেই তো রয়েছি। কী আর অসুবিধা!’’
এই সেফ হোমে কর্মরত নার্সদের কাজে মুগ্ধ উত্তীর্ণ-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত মেডিকেল অফিসার, কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী। বলছেন, ‘‘নিজের জীবন বিপন্ন করে নার্সেরা অত্যন্ত দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কোভিড ওয়ার্ডে নিজের কর্তব্য পালন করে চলেছেন। তাঁরা ছাড়াও চিকিৎসক, অচিকিৎসক সমস্ত কর্মীরাই কোভিডের সামনের সারিতে থেকে লড়াই করছেন। ওঁদের সকলের সাধুবাদ প্রাপ্য।’’
ওয়ার্ডে শয্যা ধরে ধরে সংক্রমিতদের দফায় দফায় একই প্রশ্ন করে যেতে হয় তাঁদের— ‘শরীর ঠিক আছে তো?’ বা ‘শ্বাসপ্রশ্বাসের কোনও কষ্ট হচ্ছে না তো’। বারবার একই প্রশ্নে রোগীরা কখনও কখনও কিঞ্চিৎ বিরক্ত হলেও নার্সদের কোনও ক্লান্তি নেই। ২৪ ঘণ্টা কোভিড ওয়ার্ডে থাকার ঝক্কি সামলে ওঁরা এমনিতেই কেউ সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কায় বাড়ি যাওয়া প্রায় বন্ধ করেছেন। দিন পাঁচেক আগে, সপ্তাহের ছুটির দিনে খুব প্রয়োজনীয় কাজে ক্যানিংয়ে নিজের গ্রামে গেলেও বাড়িতে ঢোকেননি তৃণা। তাঁর কথায়, ‘‘গ্রামের সুরক্ষার জন্যেই গ্রামবাসীরা আমাকে বাড়ি থেকে দূরে একটি স্কুলঘরে রাতে রাখার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। বাড়ির লোকেরা সেখানে এসেই আমার সঙ্গে দেখা করেন। বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসেছিলেন আমার জন্য।’’ ক্যানিংয়েরই বাসিন্দা আরও চার নার্স— তুলি, শম্পা, বীণা বা রঞ্জিতারা অবশ্য বাড়ির লোকেদের সুরক্ষার কথা ভেবেই নিজেদের গ্রামে ফেরার কথা ভাবছেন না। ক্যানিংয়ের দেউলির বাসিন্দা বীণার কথায়, ‘‘আমার জন্য বাড়ির লোকেরা অসুস্থ হোক, চাই না। দিনরাত কোভিড আক্রান্তদের সঙ্গে থাকছি। আমি বাড়ি গেলে ওদের কারও মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে না, তা কে বলতে পারে?’’
বর্তমানে উত্তীর্ণ-র চারতলায় ১০০টি শয্যায় ছেলেদের ভর্তি করার সুযোগ রয়েছে। তিনতলার ১০০টি শয্যা মহিলাদের জন্য। আর তাঁদের তদারকি করার জন্য বর্তমানে রয়েছেন ২৪ জন নার্স, ৫ জন স্থায়ী চিকিৎসক। উত্তীর্ণ-র নোডাল অফিসার দীপঙ্কর হাজরা বলেন, ‘‘এখানে করোনা চিকিৎসার জন্য ৫০০টি শয্যা শীঘ্রই চালু হবে। দোতলা ছাড়া বাকি চারটি তলায় অক্সিজেন প্লান্ট থাকবে। সোমবার আরও কয়েক জন নার্স নিয়োগের জন্য ইন্টারভিউ ডাকা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Covid Warrior
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy