রবীন্দ্রপল্লির বাড়িতে সুকুমারী সাহা। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
অশীতিপর এক বৃদ্ধার দেখভালের জন্য বাড়িতে রাখা হয়েছিল এক জন করে নার্স এবং আয়া। সম্প্রতি ওই বৃদ্ধার মুখে একাধিক কালশিটের দাগ দেখে চিন্তায় পড়ে যান পরিবারের লোকজন। এর পর তাঁর ঘরে রাখা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে জানা যায়, ওই নার্সের হাতেই নিয়মিত মারধর খেতে হচ্ছিল বৃদ্ধাকে! বিষয়টি দেখে পরিবারের লোকজন আঁতকে ওঠেন! এক জন বৃদ্ধাকে দিনের পর দিন এ ভাবে মারধর করা হত! সিসি ক্যামেরার ফুটেজ-সহ শুক্রবার পাটুলি থানায় সংযুক্তা পাইক নামে ওই নার্সের নামে অভিযোগ জমা পড়ে। এর পরেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গাঙ্গুলিবাগান এলাকার বাসিন্দা ৮৫ বছরের বৃদ্ধা সুকুমারী সাহা বেশ কয়েক বছর ধরেই অসুস্থ। বছর দুয়েক আগে তাঁর ব্রেন স্ট্রোক হয়। তার পর থেকেই তিনি শয্যাশায়ী। বৃদ্ধা মায়ের দেখভালের জন্য তাঁর বড় ছেলে উত্তম সাহা দিন এবং রাতের জন্য এক জন করে নার্স এবং আয়া রাখেন। ওষুধপত্র, খাবারদাবার খাওয়ানোর পাশাপাশি রক্তচাপ মাপা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার কাজও তাঁরাই করতেন। মাঝে মাঝেই নার্স-আয়া বদল হত। উত্তমবাবু এ দিন বলেন, ‘‘সংযুক্তা গত চার মাস ধরে দিনের বেলা মায়ের দেখাশোনা করতেন। বেশ কিছু দিন ধরেই দেখছিলাম মায়ের সারা গায়ে কালশিটের দাগ। সংযুক্তাকে জিজ্ঞেস করলেই তিনি বলতেন, পাশ ফেরার সময় বিছানার রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে কালশিটে পড়েছে।’’
গত ১৯ জুন সুকুমারী দেবীর মুখে বেশ কয়েকটি কালশিটের দাগ দেখতে পান উত্তমবাবুর ছেলে হ্যাপি সাহা। তিনিও নার্সকে জিজ্ঞাসা করে একই উত্তর পান। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট না হয়ে হ্যাপি ঠাকুমার ঘরের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখেন। আর তাতেই দেখা যায়, বৃদ্ধাকে চুলের মুঠি ধরে মারধর করছেন সংযুক্তা। এক বার নয়, একাধিক বার সুকুমারী দেবীকে মারতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ দিন হ্যাপি বলেন, ‘‘বাবা তখন বাড়িতে ছিলেন না। তিনি একটা কাজে দিল্লিতে গিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বাড়ি ফেরেন। বাবাকে ওই ফুটেজ দেখাই। তার পর আজ আমি পাটুলি থানায় এফআইআর করেছি ওই নার্সের নামে।’’
আরও পড়ুন: সোয়াইন ফ্লুয়ে আরও দুই আক্রান্ত
এফআইআর পেয়েই পুলিশ তদন্তে নামে। গ্রেফতার করা হয় সংযুক্তা পাইককে। পাটুলি থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘অভিযোগ পেয়েই আমরা ফুটেজটা খতিয়ে দেখি। তার পর ওই নার্সকে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের সময় মারধরের কথা তিনি স্বীকারও করেছেন। তবে কেন ওই বৃদ্ধাকে তিনি মারতেন, সে ব্যাপারে এখনও স্পষ্ট ভাবে কিছু জানা যায়নি।’’
ঘটনায় রীতিমতো চমকে গিয়েছে সাহা পরিবার। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘এই চার মাসে ওই নার্স আমাদের পরিবারেরই এক জন হয়ে উঠেছিলেন। দিনের পর দিন কেন উনি আমাদের সঙ্গে মিথ্যা কথা বলে গিয়েছেন জানি না। তার চেয়েও বড় বিষয়, আমার অশীতিপর মা কী এমন অন্যায় করতেন যে, তাঁকে ও ভাবে মারতে হত! ভাবতেই পারছি না!’’
আরও পড়ুন: নির্দেশ মেনে ধরপাকড় শহরের সর্বত্র
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy