গোটা কলকাতায় হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক দেওয়ার হার ৭০ শতাংশ পেরোলেও গার্ডেনরিচ এবং মেটিয়াবুরুজে সেই হার মাত্র ৩০ শতাংশ। প্রতীকী ছবি।
পাল্স পোলিয়োর প্রতিষেধক প্রদানের ক্ষেত্রে যে সমস্যা বার বার সামনে এসেছে, কোভিড প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও যা ভাঁজ ফেলেছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের কপালে, হাম-রুবেলার প্রতিষেধকের ক্ষেত্রেও সেই একই সমস্যা গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকা ঘিরে।
হাম-রুবেলার প্রতিষেধক প্রদানে সারা রাজ্যের নিরিখে সবার চেয়ে পিছিয়ে কলকাতা। আবার, কলকাতার মধ্যে ভাবাচ্ছে শহরের সংযুক্ত এলাকা ১৫ নম্বর বরোর গার্ডেনরিচ এবং মেটিয়াবুরুজ। পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, মঙ্গলবার পর্যন্ত গোটা কলকাতায় হাম ও রুবেলার প্রতিষেধক দেওয়ার হার ৭০ শতাংশ পেরোলেও গার্ডেনরিচ এবং মেটিয়াবুরুজে সেই হার মাত্র ৩০ শতাংশ। ওই দুই জায়গায় এই হার বাড়াতে স্থানীয় মসজিদের ইমামদের কাজে লাগানো হচ্ছে। মেটিয়াবুরুজের বিধায়ক আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘‘নাগরিক সচেতনতার অভাবেই মেটিয়াবুরুজের অধিকাংশ শিশু-কিশোর হাম, রুবেলার প্রতিষেধক নিচ্ছে না। অভিভাবকদের সচেতন করতে পুরসভার তরফে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন মসজিদের ইমামরাও প্রচারে শামিল হয়েছেন।’’
পুরসভার ১৫ নম্বর বরোর অধীনে ন’টি ওয়ার্ড রয়েছে। কলকাতা পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রের খবর, এই বরোর অধিকাংশ ওয়ার্ডে হাম, রুবেলার প্রতিষেধক প্রদানের হার একেবারেই সন্তোষজনক নয়। যা নিয়ে চিন্তায় পুর প্রশাসনও। গার্ডেনরিচে সেই হার বাড়াতে মাসকয়েক আগেই মেয়র ফিরহাদ হাকিম নিজে ইমামদের নিয়ে কর্মশালার আয়োজন করেছিলেন।
অভিযোগ, এই এলাকায় শিশুদের প্রতিষেধক না নেওয়ার প্রবণতা নতুন নয়। অতীতে পাল্স পোলিয়োর প্রতিষেধক দিতেও মেটিয়াবুরুজ এলাকার অভিভাবকেরা অনীহা দেখাতেন। তাঁদের উৎসাহ বাড়াতে আগেও ইমামদের নিয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেওয়া হয়েছিল। গত জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নজরদারিতে গার্ডেনরিচ এলাকায় নর্দমায় পোলিয়োর জীবাণু মিলেছিল। সেই ঘটনার পরে ওই এলাকায় নতুন করে কেউ পোলিয়োয় আক্রান্ত হয়েছে কি না, তা খুঁজে বার করতে তৎপর হয় পুরসভা। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও পোলিয়ো আক্রান্তের হদিস মেলেনি ওই দুই এলাকায়।
১৫ নম্বর বরোর চেয়ারম্যান রঞ্জিত শীল বলেন, ‘‘এই বরোর বেশির ভাগ ওয়ার্ডের মানুষই যে কোনও রকম প্রতিষেধক নিতে অনীহা দেখান। এ নিয়ে বহু কর্মসূচি, ইমামদের মাধ্যমে একাধিক কর্মশালার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবুও কাজ হচ্ছে না।’’ মেটিয়াবুরুজের ১৪০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবু তারিক মোল্লার কথায়, ‘‘যে কোনও ধরনের প্রতিষেধক নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা কাজ করে চলেছে। সকলে যাতে প্রতিষেধক নিতে এগিয়ে আসে, সে জন্য আমার পরিবারেরশিশু-কিশোরদের হাম, রুবেলার প্রতিষেধক প্রদানের ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেছি।’’
১৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ মোস্তাক আহমেদের পর্যবেক্ষণ, ‘‘বিভিন্ন ভাবে বোঝানো সত্ত্বেও প্রতিষেধক নেওয়ার বিষয়ে মানুষের মধ্যে কোথাও অবিশ্বাস কাজ করছে। অভিভাবকদের কিছুতেই বোঝানো যাচ্ছে না। প্রতিষেধকের বিষয়ে কুসংস্কার দূর করতে প্রশাসনিক স্তরে লাগাতার সচেতনতামূলক কর্মসূচি জরুরি।’’
মেটিয়াবুরুজ এলাকার একটি মসজিদের ইমাম উমের আহমেদ বুখারির কথায়, ‘‘মানুষ যাতে হাম, রুবেলার প্রতিষেধক নেন, সে বিষয়ে মসজিদে নমাজের সময় বার্তা দেওয়া হচ্ছে। তা সত্ত্বেও নিশ্চয়ই কোথাও ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ বার তাই বাসিন্দাদের প্রতিষেধক দেওয়ার বিষয়ে জোর দিতে সরকারি স্তরে ভাবনাচিন্তা করার দরকার।’’
কলকাতা-সহ তিনটি পুর এলাকা এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় হাম, রুবেলা প্রতিষেধক প্রদানের হার অত্যন্ত কম থাকায় ওই পাঁচ জায়গায় এই কর্মসূচি আগামী ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু শহর কলকাতায় প্রতিষেধক প্রদানের যা হার, তাতে আদৌ কি ২১ ফেব্রুয়ারি মধ্যে ১০০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো যাবে?
কলকাতা পুরসভার এক শীর্ষ আধিকারিকের কথায়, ‘‘১৫ নম্বর বরো ছাড়া বেসরকারি স্কুলগুলিতে প্রতিষেধক প্রদানের হার বেড়েছে। আরও একাধিক বেসরকারি স্কুল প্রতিষেধক নিতে এগিয়ে এসেছে। আশা করা হচ্ছে, ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সেই হার সন্তোষজনক জায়গায় গিয়ে পৌঁছবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy