Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Lynching

Pick Pocket: বাঁধা গতের ভাবনা থেকেই গণপিটুনির হিংসা

অসমে সদ্য পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির উপরে প্রশাসন ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর নাচের স্মৃতিও টাটকা।

দুষ্কৃতী সন্দেহে ধৃতের বুকে লাথি মারার এই ভিডিয়ো ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

দুষ্কৃতী সন্দেহে ধৃতের বুকে লাথি মারার এই ভিডিয়ো ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২১ ০৭:০৮
Share: Save:

কাউকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানো গিয়েছে। কিন্তু মনে নিষ্ঠুর হিংসার বসত পাল্টায়নি। দুষ্কৃতী সন্দেহে ধৃত তরুণের বুকে পা চেপে দাঁড়ানো সিভিক ভলান্টিয়ার তথা গ্রিন পুলিশের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়ার পরে এটাও মনে হচ্ছে অনেকের। মনঃসমাজকর্মী মোহিত রণদীপের মনে পড়ছে, কয়েক বছর আগে লোকাল ট্রেনের একটি ঘটনা। শ্রীরামপুর থেকে বালির পথে জনৈক পকেটমারকে ঘিরে সামাজিক মননের যে চেহারা তিনি নিজেই দেখেন।

মোহিতের অভিজ্ঞতা, একটি ছেলে ভিড়ের মধ্যে তাঁর পকেটেই হাত দিয়েছিল। কিন্তু অন্য সহযাত্রীরা তাকে ধরে ফেলেন। মুহূর্তে বদলে যায় কামরার পরিবেশ। চারপাশের জনতাকে মারমুখী দেখে মোহিত নিজেই ছেলেটির হাত ধরে বলেন, যা করার আমিই করব। বালিতে নেমে জিআরপি-র হাতে তুলে দেব। কিন্তু তত ক্ষণে ওই কামরায় ওঠা এক ব্যক্তি অভিযুক্তের বুকে টেনে লাথি কষিয়ে দিয়েছেন। বলাবলি হচ্ছে, পরে বালি এলেই ওকে ট্রেন থেকে খালে ফেলে দেব।

কলকাতার গ্রিন পুলিশের ঘটনাটির পরে মোহিত সোমবার বলছিলেন, ‘‘আগেও দেখেছি, ঘটনার সঙ্গে যোগ নেই, এমন অনেকেই এসে একটু হাতের সুখ করে নেন!’’ কলকাতার এক প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার প্রসূন মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ওই পুলিশকর্মী অত্যন্ত গর্হিত কাজ করেছেন, তাঁর না-হয় শাস্তিও হল। কিন্তু ওই ভিডিয়োয় পাশ থেকে যাঁরা গালাগাল ছুড়ে ওই পুলিশটিকে পেটানোয় উৎসাহ দিচ্ছিলেন, তাঁদের কী বলা হবে? আবার অন্য অনেক কারণে গরু চোর বা ছেলেধরা সন্দেহেও গণপিটুনির হিংসা দেখা যায়।’’

সাম্প্রতিক অতীতে ডাক্তারির ছাত্রদের হাতে কলকাতায় কোরপান শাহ নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু বা এ দেশে বিভিন্ন রাজ্যে ‘জয় শ্রী রাম’ বলার দাবিতে হিংসা অথবা গো-হত্যাকারী সন্দেহে হিংসার বেশ কয়েকটি নমুনা রয়েছে। অসমে সদ্য পুলিশের গুলিতে নিহত ব্যক্তির উপরে প্রশাসন ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির নিষ্ঠুর নাচের স্মৃতিও টাটকা। মোহিতের মতে, এ দেশে গণপিটুনির পিছনে নানা মনস্তত্ত্ব থাকে। এমনটা ভাবা যায়, হয়তো অনেক বড় অন্যায় বা দুর্নীতির প্রতিকার হয় না, তাই লোকে খুচখাচ চুরি, পকেটমারি নিয়েই ভয়ানক উগ্র। আবার পোশাক দেখে অমুক কোনও নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণি বা ধর্মের বলে মালুম হলেও কখনও আক্রোশের ভাগটা বেশি হয়।

গণপিটুনি রুখতে পশ্চিমবঙ্গে আইন চালুর চেষ্টাও আইনি জটিলতায় আটকে। প্রাক্তন সিপি-র মতে, জনমানসে এই হিংসার প্রবণতা বহু ক্ষেত্রে পুলিশের জন্যও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ জটিল করে তোলে। আমেরিকায় কোনও পথ দুর্ঘটনা ঘটলে যে চালক তা ঘটিয়েছেন, তাঁর উপরেই আহত ব্যক্তিকে সাহায্য করার দায় বর্তায়। এবং তিনি সেটা না-করলেই কড়া সাজার মুখে পড়েন। কিন্তু এ দেশে বেশির ভাগ চালকই তাঁর দোষ থাক বা না-থাক, ছোট-বড় কোনও দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেললেই সটান আপন প্রাণ বাঁচাতে আগে গা-ঢাকা দেন। গণপিটুনিতে নিজের শেষ হওয়ার ভয়টাই তাঁর প্রধান হয়ে ওঠে।

‘‘তবে নিষ্ঠুর মর্ষকামিতা বা হিংস্র সামাজিক মননের কোনও সরল ব্যাখ্যা নেই,’’ বলছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের শিক্ষক উপল চক্রবর্তী। উপলের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় হয়তো গোষ্ঠী-হিংসার কিছু ইতিহাস আছে। আবার পাশ্চাত্যের জাতি-বিদ্বেষ বা বর্ণবাদেরও একটা ধারা আছে। নানা ঘটনার পিছনে তার ছায়া দেখা যায়। অনেকেই মনে করেন, মিনিয়াপোলিসের জর্জ লয়েডের ঘটনাও আদতে স্রেফ বিচ্ছিন্ন এক জন পুলিশের ঘৃণার প্রকাশ নয়। উপল তাই বলছেন, ‘‘বেশির ভাগ গণপিটুনির প্রবণতার পিছনেই কিছু সামাজিক ধ্যানধারণার গত কাজ করে। তা বেশ জটিল। ধর্ম, জাতি বা লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য কেউ ভিড়ের নিশানা হন, আবার হয়তো তাঁর পেশার জন্যও হতে পারেন। সমাজমাধ্যমের গণ-আক্রোশেও এই সব ধ্যানধারণারই ছাপ পড়ে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Lynching Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy