মুখ ঢেকেছে: একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে মাস্ক পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে এক রিকশাচালককে। সোমবার, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এত দিন যা ছিল শুধুমাত্র বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা আটকানোর ‘বর্ম’, কোভিড-১৯-এর সংক্রমণে সেই ‘বর্ম’-এর ব্যবহারই আমূল পাল্টে গিয়েছে। মাস্ক পরার সংজ্ঞা ও অভ্যাসই বদলে দিয়েছে নোভেল করোনাভাইরাস। পথেঘাটে সর্বত্র এখন মাস্কের যথেচ্ছ ব্যবহার। এর ফলে এক দিকে যেমন মাস্কের আকাল এবং কালোবাজারি শুরু হয়েছে, ঠিক তেমনই এই অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতে শহরবাসীর একটা বড় অংশ দূষণ সম্পর্কে সচেতন হতে পারেন, এমন আশাও রয়েছে চিকিৎসক ও পরিবেশবিদদের একটা বড় অংশের মধ্যে।
তাঁদের বক্তব্য, কোভিড-১৯ সংক্রমণের আগে মানুষ মাস্ক পরতেন দূষণ এড়াতে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা (পিএম১০) ও অতি সূক্ষ্ম ধূলিকণার (পিএম২.৫) শ্বাসযন্ত্রে প্রবেশ ঠেকাতে। কিন্তু তার জন্য মাস্কের এমন বিপুল চাহিদা ছিল না। যাঁরা দূষণ সম্পর্কে সচেতন, তাঁদের মধ্যেই মাস্কের ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল। মূলত আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল গোষ্ঠীই মাস্কের ব্যবহার করতেন। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘শহরের দূষণ নিয়ে এত কথা হলেও সর্বস্তরে তার কোনও প্রভাব পড়েনি এত দিন। যাঁরা বাতাসের মান সম্পর্কে অবহিত বা বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন, তাঁদের মধ্যেই এর ব্যবহার সীমাবদ্ধ ছিল।’’ কিন্তু স্বচ্ছল থেকে শুরু করে আর্থিক লেখচিত্রে নীচের দিকে রয়েছেন, এমন মানুষও এখন মাস্ক ব্যবহার করছেন। যদিও যানবাহন না-চলার কারণে বা হোটেল-রেস্তরাঁ, নির্মাণকাজ বন্ধের কারণে দূষণের মূল উৎসগুলি না থাকায় শহরের বাতাসে এই মুহূর্তে দূষণের পরিমাণ কম। তবু মাস্ক রয়েছে শহরের মুখে। যদিও সে মাস্কে কতটা লাভ হচ্ছে বা আদৌ লাভ হচ্ছে কি না, সে নিয়ে সংশয়ী পরিবেশবিদেরা।
‘সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’-এর একাধিক গবেষণা ইতিমধ্যেই দেখিয়েছে, কী ভাবে শহরের বাতাসে পিএম১০ ও পিএম২.৫-এর পরিমাণ বৃদ্ধির পাশাপাশি যানবাহনের ধোঁয়ার কারণে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণও বেড়েছে। সংস্থার এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর (রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি) অনুমিতা রায়চৌধুরী বলছেন, ‘‘সংক্রমণের আতঙ্ক আমাদের জীবনের নিজস্ব ছন্দে পরিবর্তন আনার পাশাপাশি মাস্ক পরার ক্ষেত্রেও বদল এনেছে। সকলেই এখন মাস্ক পরছেন। এই অভ্যাস তৈরির মাধ্যমে যদি ভবিষ্যতে শহরবাসীর একটা অংশও দূষণ সম্পর্কে সচেতন হন, তাতে সকলের লাভ।’’
মাস্ক নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) গবেষণায় উঠে এসেছে, যেহেতু উন্নয়নশীল দেশগুলিতে মাস্ক ব্যবহারের সার্বিক চল নেই, তাই সংক্রমণের সময়ে হু হু করে মাস্কের চাহিদা বেড়ে যায়। এক গবেষক জানাচ্ছেন, উন্নত দেশের নাগরিকেরা সচরাচর দূষণ বা মাস্ক পরা নিয়ে সচেতন। তাই সেখানে মাস্কের চাহিদা সব সময়েই থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই চাহিদাও অনেক গুণ বেড়ে গিয়েছে। ফলে মাস্ক প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে বাড়তি মাস্ক তৈরি করতে হচ্ছে। ভারতের মতো দেশে পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। ওই গবেষকের কথায়, ‘‘এখন সকলেই মাস্ক পরতে চাইছেন। এন ৯৫, এন ৯৯ বা সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া অন্য কোনও মাস্ক সংক্রমণ ঠেকাতে কার্যকর না হলেও সকলেই এর জন্য লাফিয়ে পড়ছেন।’’ আর তার ফলে মাস্কের সঙ্কট তৈরি হচ্ছে। চলছে কালোবাজারি।
বক্ষরোগ চিকিৎসক রাজা ধরের কথায়, ‘‘স্বাস্থ্য সচেতনতা নাগরিকদের বৃহত্তর অংশে এত দিন ছিলই না। এখন অনেকে সংক্রমিত হওয়ার ভয়েই সচেতন হচ্ছেন। কিন্তু এমনও অনেকে মাস্ক কিনে রাখছেন, যাঁরা বাড়িতেই রয়েছেন বা যাঁরা অসুস্থও নন। তাঁরা হাসপাতাল বা সংক্রমিত রোগীদের আশপাশেও যাচ্ছেন না। অর্থাৎ সেই অর্থে তাঁদের মাস্ক প্রয়োজন নেই। তাঁদের অহেতুক আতঙ্কের কারণে যাঁদের প্রকৃত প্রয়োজন, তাঁরা মাস্ক পাচ্ছেন না। এতে পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy