প্রতীকী ছবি।
কিছু মাস ধরেই দেশের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। তার ছোঁয়া কি এ বার লাগল কেপমার এবং পকেটমারদের গায়েও? এখনও পর্যন্ত গড়িয়াহাট, ধর্মতলা, হাতিবাগানের পুজোর বাজার এবং শপিং মলগুলি থেকে পকেটমারি বা কেপমারির যথেষ্ট সংখ্যক অভিযোগ দায়ের না হওয়ায় অন্তত তেমনটাই মনে করছে স্থানীয় থানা। কলকাতা পুলিশ অবশ্য হাত গুটিয়ে বসে নেই। বরং স্থানীয় থানা এবং ‘ওয়াচ সেকশন’-এর অফিসারেরা কড়া নজরদারি চালাচ্ছেন ভিড় বাজারগুলিতে। পুজোর আগে মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকে পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাও সব ডিভিশনের ডিসি এবং থানার ওসিদের নির্দেশ দিয়েছেন নিজের নিজের এলাকায় টহলদারি বাড়ানোর জন্য।
কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মার কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি বলে সতর্কতা মোটেও কমানো হয়নি। বরং নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে।’’
পুলিশ জানাচ্ছে, এই কেপমারি বা পকেটমারি দলের লোকজন সাধারণত ভিন্ রাজ্যের হয়। কোনও দল আসে মহারাষ্ট্র থেকে, কোনও দল ঝাড়খণ্ডের, কেউ বা দিল্লির। সাধারণত কোনও উৎসবের মরসুম শুরুর ঠিক আগে শহরে ঘাঁটি গাড়ে এরা। আবার উৎসব মিটলেই পাড়ি দেয় অন্যত্র। পুলিশের দাবি, আগে স্থানীয় দল এই ধরনের কাজ করত। কিন্তু বাজার-শপিং মলগুলিতে সিসি ক্যামেরা বসার পর থেকে তারা সাবধান হয়ে গিয়েছে। কারণ তারা জানে, ক্যামেরায় ছবি ওঠার অর্থ, পুলিশের হাতে ধরা পড়া সহজ হয়ে যাবে। ফলে এখন রমরমা বেড়েছে ভিন্ রাজ্যের কেপমারদের। তাদের দলে অনেক সময়ে বাচ্চা কোলে থাকে মহিলারাও। অনেকে আবার যাযাবর প্রকৃতির হয়। ফলে তারা অপরাধ করে পালিয়ে গেলে ধরাই মুশকিল হয়ে পড়ে। তবে এ বছর এখনও পর্যন্ত এই কেপমারেরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। কারণ হিসেবে পুলিশ জানাচ্ছে, ক্রেতারা অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন।
এ ধরনের কেপমার বা পকেটমারদের কাজের ধরন ঠিক কেমন?
লালবাজারের ওয়াচ সেকশনের প্রাক্তন এক অফিসার জানাচ্ছেন, এই সব পকেটমার বা কেপমারের দল কাজ করে নিজস্ব কায়দায়। যেমন, পুজোর ভিড় কাটিয়ে দোকানের নতুন পসরা দেখতে দেখতে হয়তো এগিয়ে চলেছেন কোনও মহিলা। আচমকা পিছন থেকে কেউ তাঁকে ডেকে বলল, ‘মাসিমা, আপনার টাকা পড়ে গেল ব্যাগ থেকে।’ যে মুহূর্তে মহিলা পিছনে ঘুরে দেখতে গেলেন, তখনই তাঁর ব্যাগে টান দিয়ে ভিড়ে মিলিয়ে গেল অন্য কেউ। আর যে ওই মহিলাকে ডেকেছিল, সে-ও নিমেষে হাওয়া।
আবার কোনও ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে টাকা তুলে নিয়ে যাচ্ছেন মহাজনের কাছে। আচমকা একটা ধাক্কায় তিনি পড়ে গেলেন। কেউ হাত বাড়িয়ে দিল তাঁকে উঠতে সাহায্য করার জন্য। আর এক জন এগিয়ে এল ব্যবসায়ীর হাতের ব্যাগটা ধরতে। ওই ব্যক্তি উঠে তো দাঁড়ালেন, কিন্তু যার হাতে ব্যাগটা দিলেন সে-ই দেখা গেল কোন ফাঁকে বেপাত্তা!
পুলিশ অফিসারেরা বলছেন, কলকাতার রাস্তায় কেপমারির এমন ঘটনা নতুন নয়। পুজোর ঠিক আগে যা বাড়ে গড়িয়াহাট, বড়বাজার, নিউ মার্কেট, ধর্মতলা, হাতিবাগানের মতো ভিড় এলাকাগুলিতে। শুধু বাজারই নয়। ঝাঁ-চকচকে শপিং মলেও ঘুরে বেড়ায় এই কেপমারেরা। ওত পেতে থাকে বিভিন্ন বাজার এলাকাগুলির এটিএম সংলগ্ন জায়গাতেও। এই দলের লোকজন জানে, পুজোর বাজারে আসা ক্রেতাদের পকেটে অন্তত কয়েক হাজার টাকা থাকবেই। ক্রেতারা যখন মশগুল থাকেন দোকানে থাকা নতুন পসরা দেখতে, সেই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করে তারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy