অভিযুক্ত রাঘিব পারভেজ। —নিজস্ব চিত্র।
শেকসপিয়র সরণির জাগুয়ার দুর্ঘটনায় নাটকীয় মোড়। বুধবার পুলিশ দাবি করল, আরসালান পারভেজ নন, শুক্রবার মধ্যরাতে দুর্ঘটনার সময় ওই গাড়িটি চালাচ্ছিলেন তাঁর দাদা রাঘিব পারভেজ। ঘটনার পর দিন তিনি দুবাই পালিয়ে যান। এ দিন দুপুরে দুবাই থেকে ফেরার পরেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ। কিন্তু দাদাকে বাঁচাতে দুর্ঘটনার দায় কেন নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ভাই আরসালান? সে প্রশ্নের জবাব এখনও অধরা পুলিশের কাছে। রাঘিব গোটা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছেন বলে পুলিশের দাবি।
এ দিন বিকালে লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘দুর্ঘটনার রাতে ঘাতক জাগুয়ারের স্টিয়ারিং ছিল আরসালানের দাদা রাঘিব পারভেজের হাতে। আখতার পারভেজের বড় ছেলেকে বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করানো হয় তাঁর ছোট ছেলেকে। এ দিন বেনিয়া পুকুর থানার পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে।’’
কী ভাবে জানা গেল, আরসালান নন, গাড়ি চালাচ্ছিলেন রাঘিব?
গোয়েন্দা প্রধানের দাবি, আরসালানকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর থেকেই গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়ছিল। তাঁদের প্রথম সন্দেহ হয় আরসালানের মেডিক্যাল পরীক্ষার পর। কারণ, দুর্ঘটনার সময় ঘাতক জাগুয়ারের এয়ারব্যাগ খুলে গিয়েছিল। গোয়েন্দাদের দাবি, কোনও দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়ির এয়ারব্যাগ খুলে গেলে চালকের শরীরে তাঁর আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা। গায়ে র্যাশও বেরিয়ে যায়। কিন্তু আরসালান পারভেজের শরীরে এমন কোনও চিহ্ন মেলেনি।
আরও পড়ুন: জাগুয়ারের গতি জানতে ডেটা রেকর্ড চায় পুলিশ
এর পরই দুর্ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ খতিয়ে দেখতে শুরু করেন গোয়েন্দারা। খতিয়ে দেখা হয় আশেপাশের দোকান এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রায় ৪৫টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ। আরসালান বিরিয়ানি চেনের মালিক আখতার পারভেজের সৈয়দ আমির আলি অ্যাভেনিউয়ের বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও জোগাড় করা হয়। এই ফুটেজ খতিয়ে দুটো জিনিস গোয়েন্দাদের চোখে পড়ে। প্রথমত, দুর্ঘটনা ঘটে রাত একটা নাগাদ। তার পরেই শেকসপিয়র সরণি ধরে কলামন্দিরের দিকে কখনও হেঁটে, কখনও দৌড়ে যেতে দেখা যায় এক যুবককে। কিন্তু সেই যুবকের মুখ খুব একটা স্পষ্ট ছিল না। দ্বিতীয়ত, আখতার পারভেজের বাড়ি থেকে শুক্রবার রাত ১১টা নাগাদ এক যুবককে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। শেকসপিয়র সরণি ধরে দৌড়নো এবং বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা যুবকের মুখের মিল ছিল।
অন্য দিকে, ঘাতক জাগুয়ারের ইভেন্ট ডেটা রেকর্ডার (ইডিআর) থেকে জানা যায় অত্যাধুনিক ওই গাড়িটি চালু করতে গেলে একটি মোবাইল নম্বর প্রয়োজন হত। এ ক্ষেত্রে পারভেজ পরিবারের একাধিক সদস্যের মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। যে মোবাইল নম্বরের কোনও একটি ছাড়া ওই গাড়িটি চালু করা সম্ভব নয়। ইডিআর থেকেই পুলিশ জানতে পারে শেষ বার গাড়িটি চালু করার সময় কোন মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছিল। জানা যায়, ওই নম্বরটি রাঘিব পারভেজের। তিনি আরসালানের দাদা অর্থাৎ আখতার পারভেজের বড় ছেলে। ওই মোবাইল নম্বরের হোয়াটসঅ্যাপ ডিপি দেখে পুলিশ চমকে যায়। ওই ছবি মিলে যায় আখতার পারভেজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসা এবং ওই রাতে শেকসপিয়র সরণি ধরে হেঁটে-দৌড়ে যাওয়া যুবকের সঙ্গে। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন গোয়েন্দারা।
আরও পড়ুন: জাগুয়ারের ‘ডেটা রেকর্ড’ উদ্ধার করলেন নির্মাতারা
পারভেজ পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে গোয়ান্দাদের তাঁরা জানান, বাড়ির বড় ছেলে অর্থাৎ রাঘিব তাঁদের কারও সঙ্গে যোগাযোগ না করে মামার পরামর্শে দুবাই চলে গিয়েছে। এর পর পুলিশ জানতে পারে, দুবাই থেকে ফিরে রাঘিব বেনিয়াপুকুর থানা এলাকার একটি নার্সিং হোমে ভর্তি হয়। এ দিন দুপুরে সেখান তেকেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গোয়েন্দা প্রধান জানিয়েছেন, ঘটনার পর দিন অর্থাৎ শনিবার মামা মহম্মদ হামজার সাহায্যে বিকেলের উড়ানে দুবাই পালিয়ে যান রাঘিব। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর মামাকেও। কিন্তু বড় ছেলের অপরাধের দায় ছোট ছেলের ঘাড়ে কেন চাপান হল? কেনই বা তাঁকে আত্মসমর্পণ করানো হল, তা এখনও স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy