সকাল সওয়া ৯টার শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বুধবার কি আরও একটি ছুটির দিন ছিল? দশকের প্রথম ধর্মঘটের দিন বুধবার উত্তর কলকাতার বাসিন্দাদের হাবভাব অন্তত তেমনই প্রশ্ন তুলে দিল। বেলা বাড়তে দক্ষিণ কলকাতায় কর্মব্যস্ততা দেখা গেলেও উত্তর যেন রইল শীতঘুমেই! অপেক্ষাকৃত কর্মব্যস্ত মধ্য কলকাতাও।
এ দিন সকালে তাঁর চায়ের দোকান খুললেও উত্তর কলকাতার রাজবল্লভপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল দত্ত বেলা বাড়তেই ঝাঁপ নামিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা দেন। যাওয়ার পথে বললেন, ‘‘দেশে যা চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। তবে ধর্মঘট ডাকা সমর্থন করি না।’’ তা হলে দোকান বন্ধ করলেন কেন? ভদ্রলোক বলেন, ‘‘দিদির এতে সমর্থন আছে কি না, ঠিক বুঝতে পারছি না। চা খেতে আসেন যাঁরা, তাঁরাও ঠিক বলতে পারছেন না। দিদির সমর্থন থাকলে এই ধর্মঘটই সফল হয়ে যাবে। এখন চলি, সন্ধ্যায় আবার দোকান খুলব।’’
বাম, কংগ্রেস-সহ একাধিক শ্রমিক ও কৃষক সংগঠনের ডাকা এ দিনের ২৪ ঘণ্টার ভারত ধর্মঘট স্থির হয় কিছু দিন আগেই। এর মধ্যেই জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশ। প্রতি মুহূর্তেই সোশ্যাল মিডিয়ায় জমা হচ্ছে বিজেপি বিরোধী পোস্টের পাহাড়। এ দিনের ধর্মঘটের বিরোধিতা করলেও যে বিষয়গুলি নিয়ে ডাকা হয়েছে, তা তিনি সমর্থন করেন বলে জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে যতটা এই ধর্মঘট সফল হওয়ার ছিল, তার চেয়ে একটু বেশি হওয়ার কারণ এই বিষয়গুলিই বলে মনে করছেন অনেকে। গিরিশ পার্ক মোড়েই অটোর অপেক্ষায় থাকা তথ্য-প্রযুক্তি সংস্থার কর্মী সুলগ্না সরকার যেমন বললেন, ‘‘এই প্রজন্মের কেউ ধর্মঘট সমর্থন করেন না। তবু যেটুকু যা সমর্থন দেখছেন তার কারণ, এই মুহূর্তে বেশির ভাগ মানুষের মত কিছু নির্দিষ্ট বিষয়ে মিলে যাচ্ছে। কোনও মানুষই জাত-পাতের ভাগাভাগি মানতে পারছেন না।’’
এ দিন সকাল থেকেই পথে যানবাহনের সংখ্যা অন্য দিনের তুলনায় কম ছিল। প্রায় ফাঁকা শিয়ালদহ, কলকাতা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা। বেলা ১২টা পর্যন্ত উল্টোডাঙা, শ্যামবাজার মোড়ের কাছে রাস্তা প্রায় সুনসান দেখা গিয়েছে। যে কারণে বেলা সাড়ে ১২টায় চাঁদনি চক থেকে গাড়িতে বেরিয়ে মৌলালি হয়ে মল্লিকবাজার, পার্ক সার্কাস, সিআইটি রোড, শিয়ালদহ ঘুরে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে যেতে সময় লেগেছে মাত্র ৩৫ মিনিট। অন্য কাজের দিনে যা প্রায় অসম্ভব।
এর সঙ্গেই নজরে পড়ছিল ধর্মঘট সফল করানোর উদ্যোগ। সকাল থেকেই মোড়ে মোড়ে গাড়ি আটকানোর চেষ্টা করেন ধর্মঘটীরা। বাস ভাঙচুরের খবর মিলেছে শহরের কয়েক জায়গায়। মানিকতলা, উল্টোডাঙার, মধ্য কলকাতার বেলেঘাটায় বেশ কয়েকটি বাজারের দোকানও তাঁরা বন্ধ করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। তবে প্রতিটি মোড়েই রাখা হয়েছিল বাড়তি পুলিশকর্মী। লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন শহরের নানা প্রান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ৯০ জনকে।
তবে রাসবিহারী মোড়ের কাছে এলাকায় বিক্ষিপ্ত গোলমাল হলেও বেলা বাড়তেই চেহারা বদলাতে শুরু করে দক্ষিণ কলকাতার। হাজরা মোড়, যাদবপুরের রাস্তা ধরে তখন
স্বাভাবিক ছন্দেই ছুটতে শুরু করেছে গাড়ি। দক্ষিণ এবং দক্ষিণ শহরতলির মেট্রো স্টেশনগুলির সামনেও দেখা গিয়েছে প্রচুর অটো। বেলা ১১টা নাগাদ এক অটোচালক বলেন, ‘‘সকালের দিকে লোক ছিল না। এখন হচ্ছে। বেসরকারি বাস অবশ্য কম।’’ সাঁতরাগাছি থেকে রুবি যেতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসে ওঠা দীপান্বিতা বাগচী আবার জানান, তাঁদের বাসে এতই ভিড় ছিল যে, দরজা খুলে চালানোর প্রস্তাব দেন কয়েক জন যাত্রী। এই ভিড়ের কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘তবে সেটা রাস্তায় কম বাস বলে কি না, জানি না।’’
ধর্মঘটের চেহারাই দেখা গিয়েছে গড়িয়াহাট বাজারে। সেখানে বেশির ভাগ দোকানই দুপুর পর্যন্ত বন্ধ ছিল। ফুটপাতে প্লাস্টিকবন্দি ডালার ছবিও সে ভাবে নেই এ দিন। সেখানকার ব্যবসায়ী বিকাশ সাহা যদিও বললেন, ‘‘দোকান খোলা হবে কাদের নিয়ে? বহু দোকানেই তো কর্মী আসেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy