নাজেহাল: (ডান দিকে) কিডনির চিকিৎসা করাতে এসে ফিরে যাওয়া রোগী মিহির বিশ্বাস। আর জি কর হাসপাতাল চত্বরে। (বাঁ দিকে) অন্য এক রেফার রোগীর চিকিৎসার অনুরোধ জানিয়ে এক নেতার চিঠি। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
বারো দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অস্ত্রোপচারের তারিখ পাওয়া যায়নি। অথচ রোগীর পরিবারের দাবি, প্রতি বারই দু’দিনের মধ্যে অস্ত্রোপচার করা হবে বলে আশ্বাস দিয়ে ওই ক’দিনে রোগীর করোনা পরীক্ষা করানো হয়েছে অন্তত তিন বার! শেষে কয়েক দিন পরের একটি তারিখ জানিয়ে হাসপাতাল থেকে বলা হয়, ‘করোনায় হাসপাতালের অবস্থা ভাল নয়। রোগীকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে রাখা ভাল। যে তারিখ দেওয়া হল, সে দিন এলে অস্ত্রোপচার করা হবে।’
কিডনিতে পাথর নিয়ে কাতরাতে থাকা রোগীকে ওই নির্দিষ্ট দিনে, অর্থাৎ গত সোমবার হাসপাতালে নিয়ে গেলে পরিজনেরা জানতে পারেন, সে দিনও অস্ত্রোপচার হবে না। উল্টে বহির্বিভাগ থেকে তাঁদের বলা হয়, ‘চিকিৎসা শুরু করতে হবে প্রথম থেকে। মঙ্গলবার আবার আসুন!’
কোভিড পরিস্থিতিতে করোনা হয়নি এমন রোগীরা পরিষেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাস্তব চিত্র দেখতে গত সোমবার আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল, সকাল থেকে হাজার হাজার রোগীর ভিড়। অনেকেরই দাবি, দু’সপ্তাহ ধরে বার বার ঘোরার পরেও নতুন তারিখ লিখে দেওয়া হচ্ছে। এক রোগীর আত্মীয়ের দাবি, ‘‘বেশি অনুরোধ করলে বলা হচ্ছে, করোনায় শহরের অবস্থা জানেন না! তারিখ নিলে নিন, না-হলে করোনা মিটলে আসুন।” দুপুরের দিকে ওই হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে ট্রলিতে শুয়ে ছটফট করতে দেখা গেল কিডনিতে পাথর জমার সমস্যায় ভোগা, মধ্যমগ্রামের মিহির বিশ্বাসকে। আশপাশে যাঁকেই যেতে দেখছেন, হাতজোড় করে ওই রোগী বলছেন, “দয়া করে একটু দেখবেন, পেটের পাথরটা যদি বার করানোর ব্যবস্থা করা যায়! আর তো পারছি না।”
পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা, মিহিরবাবুর ভাইপো মধুকুমার বিশ্বাস জানালেন, বছর পঁয়তাল্লিশের মিহিরবাবুকে গত মাসের শেষে বারাসত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে তাঁকে দ্রুত কলকাতার কোনও হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে বলা হয়। সেই মতো গত ২৮ জুন ওই রোগীকে আর জি করের জরুরি বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছিল। কিন্তু তার পরের ১২ দিনেও তাঁর অস্ত্রোপচার করা হয়নি। মিহিরবাবুর ভ্রাতৃবধূ মিঠু বিশ্বাসের অভিযোগ, “এত দিন ফেলে রাখার পরে গত বৃহস্পতিবার চিকিৎসকেরা বললেন, অস্ত্রোপচার করাতে সোমবার নিয়ে আসুন। এখন হাসপাতালে ফেলে রাখলে নির্ঘাত করোনা হবে। তার থেকে রোগীকে বাড়ি নিয়ে যান। আমাদের দিয়ে কাগজে সই করিয়ে নিয়ে ওই আশ্বাস দিয়ে বাড়ি পাঠানো যে কত বড় মিথ্যা ছিল, তা এখানে এসে বুঝলাম।”
মিঠুদেবীর দাবি, সোমবার সকালে হাসপাতালে পৌঁছে জরুরি বিভাগে গেলে জানানো হয়, ভর্তি নেওয়া হবে না। এর পরে বহির্বিভাগে গেলে সেখান থেকেও মঙ্গলবার ফের আসতে বলা হয় বলে অভিযোগ। মিঠুদেবী বলেন, “সুপারের ঘর পর্যন্তও গেলাম। কেউ দেখা করলেন না। এই রোগী নিয়ে কি আবার ফিরে যাব! গত বার ৭০০ টাকা খরচ করে গিয়েছি। এ দিন এলাম ৩০০ টাকা দিয়ে। আমাদের কাছে এত টাকা কোথায়?”
হাসপাতাল ভর্তি না নিলেও টাকার অভাবে যে তিনি বাড়ি ফিরতে পারেননি, সে কথা জানালেন বসিরহাটের জাফর আলি সর্দার। ভর্তি হওয়ার আশায় আপাতত আর জি কর হাসপাতাল চত্বরের মাটিতেই দিন কাটছে তাঁর। তাঁকে ভর্তি নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ‘প্রিয় মিঠুদা’র উদ্দেশে লেখা বসিরহাট (দক্ষিণ) বিধানসভার শাসক দলের চেয়ারম্যানের চিরকুট দেখিয়ে তিনি বললেন, “মোটরবাইক থেকে পড়ে বাঁ পা টুকরো হয়ে গিয়েছে। বুকের হাড় ভেঙেছে। আমাদের এলাকার নেতা-দাদার এই চিঠি আর হাসপাতালের রেফার কাগজের ভরসায় এসেছিলাম। গত শুক্রবার থেকে পড়ে আছি, কেউ ভর্তি নিল না।”
নন-কোভিড রোগীদের হয়রানির এই চিত্র কেন? রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীকে বারবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজেরও। ফোন ধরেননি আর জি করের সুপার মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে ওই হাসপাতালের অধ্যক্ষ শুদ্ধোদন বটব্যাল বলেন, “এ ভাবে কাউকেই ঘোরানোর কথা নয়। রোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলছি। দ্রুত বিষয়টি দেখছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy