ধর্না: করোনা আক্রান্ত ছাড়াও অন্য রোগীদের পরিষেবা দেওয়ার দাবিতে অবস্থান। বুধবার, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
হাসপাতাল চত্বরের বাইরে অবস্থিত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের যে কোনও একটি অ্যানেক্স হাসপাতালকে নন-কোভিড হাসপাতাল করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে রাজ্য সরকার। কোভিড হাসপাতালে নন-করোনা রোগীদের ভর্তির দাবিতে বুধবার থেকে জরুরি বিভাগের কাছে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেছেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। তাই ওই সিদ্ধান্ত বলে খবর।
লেডি ডাফরিন এবং পোস্তার মেয়ো হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অ্যানেক্স হাসপাতাল। সেগুলির মধ্যে কোনও একটিতে নন-করোনা রোগীদের ভর্তির সম্মতি দিতে পারে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু মেডিক্যাল কলেজ চত্বরের সব ভবনেই কোভিড রোগীদের চিকিৎসার প্রশ্নে রাজ্য প্রশাসন কঠোর অবস্থান নিতে চলেছে বলেই খবর।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, জুন মাস পর্যন্ত মেডিক্যালে মোট করোনা রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭৫৩ জন। তার মধ্যে ১০১০ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সুস্থতার হার ৫৭.৬১ শতাংশ। মৃত্যু হয়েছে ৩০৫ জনের। মোট করোনা রোগী ভর্তির নিরিখে মৃত্যুহার হল ১৭.৩৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ফরেন্সিক কর্মীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে থানাকে
এই পরিসংখ্যানের বিপরীতেই রয়েছে রোগী-বঞ্চনার পরিসংখ্যান। আবার জুনিয়র চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, কোভিড হাসপাতালে নন-করোনা রোগীরা সে ভাবে ভর্তি না-হওয়ায় চিকিৎসক-ছাত্রছাত্রীদের পঠনপাঠনের সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। তাঁদের একাংশ জানান, মেডিক্যাল কলেজের সিটিভিএসের (কার্ডিয়ো থোরাসিক ভাস্কুলার ডিজ়িজ়) বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৭০-১০০ জন রোগী চিকিৎসার জন্য আসতেন। বহির্বিভাগ চালুর পরে এখন দিনপিছু তা মাত্র তিন জন! অস্ত্রোপচার কার্যত বন্ধ। হেমাটোলজির বহির্বিভাগে প্রতিদিনের পরিসংখ্যান হল এ রকম— বহির্বিভাগ ১২৫, লিউকেমিয়া ক্লিনিক ৮০, ডে-কেয়ার ৬৫। এখন বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা ৫০। বাকি বিভাগে যথাক্রমে ১৫ এবং ১২ জন। কার্ডিয়োলজির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ রোগী চিকিৎসাপ্রার্থী ছিলেন। সে সব এখন অতীত। মেডিক্যাল অঙ্কোলজির বহির্বিভাগে প্রতিদিন ৪০০ রোগী আসতেন। প্রতিদিন ডে-কেয়ার কেমো নিতেন অন্তত ২০ জন। তা-ও এখন অতীত। সার্জারির ছাত্রছাত্রীরা জানান, এই বছর জানুয়ারিতে বড়-ছোট (সার্জারি ও অর্থো) মিলিয়ে ৬১৬টি অস্ত্রোপচার হয়েছিল। এখন তা তলানিতে ঠেকেছে। করোনার চিকিৎসায় দু’টি ব্লক ছাড়া বাকি বিল্ডিংগুলি রোগীর অভাবে পড়ে রয়েছে বলে বক্তব্য তাঁদের।
রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ নেতৃত্বের বক্তব্য হল, আগামী দিনে যে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে, সে কথা ভেবেই কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে বাছা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্য বিপুল সংখ্যায় শয্যাবৃদ্ধির উপরে জোর দিচ্ছে। বিপদ আসার পরে ব্যবস্থা করে লাভ নেই। রাতারাতি শয্যা বৃদ্ধিও সম্ভব নয়। অতিমারির মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজকে কোভিড হাসপাতালে রূপান্তরিত করে সেটাই করা হয়েছে।
জেনারেল মেডিসিনের দ্বিতীয় বর্ষের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি অর্ণব মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘ডাক্তারির পঠনপাঠনের আসল হল হাতেকলমে অভিজ্ঞতা। কোভিড হাসপাতালে আপত্তি নেই। প্রচুর শয্যার প্রয়োজন তা-ও অস্বীকার করছি না। কিন্তু নন-কোভিড রোগী না থাকলে আমাদের পঠনপাঠনের কী হবে!’’
আরও পড়ুন: আর্থিক সঙ্কটে বিপন্ন এ বার লঞ্চ পরিষেবাও
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারপার্সন তথা রাজ্যের মন্ত্রী নির্মল মাজির দাবি, ‘‘মৃতদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ কো-মর্বিড ছিলেন। ২০ শতাংশ রোগীকে সঙ্কটজনক অবস্থায় রেফার করা হয়েছিল। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীরা এক হাজারেরও বেশি রোগীকে সুস্থ করেছেন।’’ এই পরিস্থিতিতে তাই মূল হাসপাতাল চত্বরে কোভিড চিকিৎসা জারি রাখার সিদ্ধান্তেই অবিচল প্রশাসন। মেডিক্যাল কলেজের বাইরে যে দু’টি অ্যানেক্স বিল্ডিং আছে সেখানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসার ব্যবস্থার কথা ভাবছে রাজ্য সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy