Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Hanuman Jayanti

মিছিল নিয়ন্ত্রণে, তবে সাউন্ড বক্সে কান ঝালাপালা শহরে

দিনের শুরুতেই মাইকের দাপটের অভিযোগ আসে বৌবাজার থেকে। সেখানে রাস্তায় মণ্ডপ করে হনুমান জয়ন্তীর আয়োজন করা হয়েছিল। মণ্ডপের পাশেই ছিল তিনটি বিশাল সাউন্ড বক্স।

Hanuman Jayanti

শৃঙ্খলা রক্ষায়: হনুমান জয়ন্তী উপলক্ষে রুট মার্চ সিআরপিএফের। বৃহস্পতিবার, বড়বাজার এলাকায়। ছবি: সুমন বল্লভ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৫৩
Share: Save:

শহরে মোতায়েন হয়েছে আধা-সেনা। টহল চলছে বিভিন্ন এলাকায়। সেই সঙ্গে চলছে কড়া পুলিশি নজরদারিও। বৃহস্পতিবার, হনুমান জয়ন্তীর দিন সব মিলিয়ে এক অন্য চেহারা দেখা গেল শহর কলকাতার। যদিও নিয়ম ভাঙার রোগ পুরোপুরি সারল না তাতেও। অভিযোগ, তেমন বড় মিছিল না বেরোলেও মাইকের দাপটে তিতিবিরক্ত বহু পাড়ার বাসিন্দারা। থানায় অভিযোগ জানিয়েও সুরাহা মেলেনি অনেক ক্ষেত্রেই। বিকেল পেরিয়ে রাত পর্যন্ত চলেছে তারস্বরে বাজতে থাকা সাউন্ড বক্সের দাপট!

দিনের শুরুতেই মাইকের দাপটের অভিযোগ আসে বৌবাজার থেকে। সেখানে রাস্তায় মণ্ডপ করে হনুমান জয়ন্তীর আয়োজন করা হয়েছিল। মণ্ডপের পাশেই ছিল তিনটি বিশাল সাউন্ড বক্স। তাতেই তারস্বরে দিনভর গান বেজেছে। অভিযোগ, বিকেলের পরে সেখানেই হাজির হয়ে উৎসবমুখী অনেকে নাচানাচি শুরু করেন। কিছুটা দূরেই রাস্তার মোড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশকর্মীদের নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ। রতন হালদার নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এ নিয়ে মুচিপাড়া থানায় বার বার ফোনে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। পুলিশ শুধু জিজ্ঞাসা করেছে, অস্ত্র নিয়ে কেউ কি গিয়েছে? মিছিল কি হচ্ছে? তা হলে বলুন!’’ শেষে স্থানীয় এক বাসিন্দা সমাজমাধ্যমে এ নিয়ে পোস্ট করলে লালবাজারের তৎপরতায় বক্স বন্ধ হয়।

একই রকম পরিস্থিতি বড়বাজার এলাকাতেও ছিল বলে অভিযোগ। সেখানে কিছুটা তফাতে বেশ কয়েকটি হনুমান মূর্তি বসিয়ে পুজোর আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে প্রতিটি পুজোর সাউন্ড বক্স যেন একে অপরকে টেক্কা দিতে নেমেছিল। বিকেলের পরে ওই জায়গা থেকেই বেশ কয়েকটি মোটরবাইকে চেপে অনেককে রাস্তায় বেরিয়ে পড়তে দেখা যায়। মাথায় লাল টিপ, গলায় গেরুয়া উত্তরীয় পরে, স্লোগান দিতে দিতে তাঁদের বাইকযাত্রা দেখে মনেই হচ্ছিল না, এমন বাইক-মিছিলে নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। বাইকে সওয়ার এক জন বললেন, ‘‘কোথায় কী নিয়ম আছে, জানি না। বড়বাজারে সব ছাড় আছে। পুলিশও সেটা ভাল মতোই জানে।’’ দেখা গেল, বাইকের দাপাদাপি দেখেও পুলিশ থামাল না! ওই এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক পুলিশকর্তার বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল যখন এসেছিলেন, যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হয়েছিল। দিনভর তো একই রকম কড়াকড়ি করা যায় না!’’

অভিযোগ, কড়াকড়িহীন এমন নানা দৃশ্য দেখা গিয়েছে বেলেঘাটা, কাশীপুর, লেক টাউন ও কালিন্দীতে। দমদম রোডের একটি হনুমান মন্দিরের পুজোর জেরে আবার ওই রাস্তা সন্ধ্যার পরে কিছু ক্ষণ বন্ধ রাখতে হয় পুলিশকে। পরে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দমদম থানার এক অফিসার বলেন, ‘‘বেশি কিছু করার উপায় নেই। উপরমহল থেকে বুঝিয়ে কর্যোদ্ধারের নির্দেশ রয়েছে। তবে, মানুষের মধ্যে একটা ভয় লক্ষ করা গিয়েছে এ দিন। যে সংখ্যায় মিছিল হবে ভাবা হয়েছিল, ততটা হয়নি।’’ লালবাজার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, বড়বাজার, একবালপুর ও পোস্তায় দিনের নানা সময়ে আধা-সেনা টহল দিয়েছে। একবালপুরের ময়ূরভঞ্জ রোড, হেস্টিংস ও চারু মার্কেট থানা এলাকার কয়েকটি মিছিল নিয়ে বাড়তি সতর্ক হওয়ার নির্দেশ ছিল। সেই মতোই কাজ হয়েছে। সে ভাবে বলপ্রয়োগ বা গ্রেফতারির প্রয়োজন পড়েনি। তবে, পাড়ায় পাড়ায় শব্দ-দৈত্যের তাণ্ডব নিয়ে যুগ্ম-নগরপাল পদমর্যাদার এক আধিকারিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘সব কিছু নিয়েই পুলিশ সতর্ক ছিল। ডিজে বক্স বাজিয়ে কোনও মিছিল এ দিন করতে দেওয়া হয়নি। সাউন্ড বক্সের অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’’

সন্ধ্যায় বিধাননগর রোড স্টেশনের পাশে বিশাল হনুমান মূর্তি ঘিরে প্রবল ভিড় ছিল। সেখানকারই এক হকার বললেন, ‘‘কয়েক বছর আগে দল বদলের বাজারে এক নেতা এই মূর্তি বসান। এ নিয়ে খুব চর্চাও হয়েছিল। এটা নাকি সেই নেতার দল বদলের ইচ্ছের ইঙ্গিত। পরে ওই নেতা আর দল বদলাননি। কিন্তু মূর্তিটা থেকে গিয়েছে রাজনীতির চিহ্ন হিসাবে। যে ভাবে গত কয়েক বছরে রাজনীতির চিহ্ন হিসাবে উঠে এসেছে একাধিক পুজো এবং মিছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Hanuman Jayanti noise pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE