Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪

প্রচার মুখ থুবড়ে পড়েছে হাওড়ায়

শুধু প্রচার নয়, ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রাথমিক কাজগুলির একটি প্রাক্‌ বর্ষায় নিকাশি নালা পরিষ্কার করা। পুরবোর্ড থাকাকালীন বর্ষার আগে তাই বিভিন্ন হাইড্রান্ট ও নর্দমা থেকে পাঁক তোলা হত, যাতে সেগুলির জলবহন ক্ষমতা বাড়ে।

পরিত্যক্ত: হাওড়া পুর ভবনে এ ভাবেই অবহেলায় পড়ে রয়েছে সচেতনতার হোর্ডিং।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

পরিত্যক্ত: হাওড়া পুর ভবনে এ ভাবেই অবহেলায় পড়ে রয়েছে সচেতনতার হোর্ডিং। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৫৫
Share: Save:

হাওড়ায় নির্বাচিত পুরবোর্ড নেই দীর্ঘদিন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পুর পরিষেবায়। পাশাপাশি, ক্রমবর্ধমান ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা সামনে আনছে পুর স্বাস্থ্য দফতরের দীনতাকেও।

শুধু প্রচার নয়, ডেঙ্গি মোকাবিলায় প্রাথমিক কাজগুলির একটি প্রাক্‌ বর্ষায় নিকাশি নালা পরিষ্কার করা। পুরবোর্ড থাকাকালীন বর্ষার আগে তাই বিভিন্ন হাইড্রান্ট ও নর্দমা থেকে পাঁক তোলা হত, যাতে সেগুলির জলবহন ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু চলতি বছরে বারবার নিকাশির সংস্কার নিয়ে চরম গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বানভাসি হয়েছে বহু এলাকা। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উত্তর হাওড়া। জমা জল থেকে সেখানে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার নিয়েছে।

হাওড়া পুরসভার প্রাক্তন মেয়র পারিষদ ভাস্কর ভট্টাচার্যের অভিযোগ, উত্তর হাওড়ার ১২টি ওয়ার্ডের জল যে জায়গা দিয়ে বার হত, বেলগাছিয়া ভাগাড়ের কাছে ‘অক্সিডেশন পন্ড’ থেকে এ বার পলিই তোলা হয়নি। এ জন্য গোটা বর্ষায় বেলগাছিয়া-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা ভুগল। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘ডিম-লার্ভা-পিউপা থেকে মশা হওয়ার একটা নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। জমা জল যদি দ্রুত বার করা যায়, তা হলে এই জীবনচক্র নষ্ট হবে। কিন্তু অক্সিডেশন পন্ডের পলি না তোলায় জল জমে থাকল বহু এলাকায়। উত্তর হাওড়ার অলিগলিতে সেই জলে নিশ্চিন্তে মশার বংশবৃদ্ধি হল।’’

হাওড়া নিকাশির ক্ষেত্রে পূর্ব রেলের রানি ঝিলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। অভিযোগ, এ বছর ওই ঝিল সংস্কারে পুরসভা উদ্যোগী না হওয়ায় নিকাশিতে সমস্যা হয়। প্রাক্তন পুরকর্তাদের একাংশের দাবি, বোর্ড থাকাকালীন বিভিন্ন এলাকায় পুরসভার দল মশা দমন অভিযানে গিয়ে লার্ভা শনাক্ত এবং ধ্বংস করত। যেটা এ বার প্রায় হয়নি বললেই চলে। মেডিক্যাল অফিসারেরা অফিসে বসেই কাজ করেছেন। ওই পুরকর্তাদের দাবি, প্রতি বছর জুনের আগে শহরের বড় আবাসনগুলির কমিউনিটি হলে বৈঠক করা হত। পড়ুয়াদের নিয়ে ডেঙ্গি সচেতনতা শিবিরও হত। এ বছর সেই উদ্যোগ একেবারেই দেখা যায়নি।

পুরসভা সূত্রের খবর, প্রতি জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে ডেঙ্গি নিয়ে পুর ভবন থেকে কেন্দ্রীয় মিছিল বার করা হয়। এ ছাড়াও পুর বোর্ডের অস্তিত্ব থাকাকালীন সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য হাওড়া পুরসভার ৬৬টি ওয়ার্ডে ছোট ছোট মিছিল বেরোত। এ জন্য পুরসভা থেকে ওয়ার্ড পিছু ১০ হাজার টাকা দেওয়া হত। সেই মিছিলে স্থানীয় বাসিন্দা ছাড়াও থাকতেন চিকিৎসক, খেলোয়াড়, পড়ুয়ারা। মিছিলে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হত বাসিন্দাদের। এ বছর তেমন কিছুই হয়নি হলে অভিযোগ।

প্রাক্তন পুরকর্তাদের বক্তব্য, ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধিতে জোর দিতে হয়। শহর জুড়ে পোস্টার, হোর্ডিং দিতে হয়। এ বারে সে সব কিছুই হয়নি বলে দাবি। এমনকি পুর ভবনের ভিতর ডেঙ্গি সচেতনতায় যে হোর্ডিং রয়েছে সেটিও কাপড় ছেঁড়া অবস্থায় অযত্নে মাটিতে পড়ে। এই হোর্ডিংই এখন বলে দিচ্ছে ডেঙ্গি নিয়ন্ত্রণে পুরসভা এ বার কতটা সদর্থক ছিল।

সব চেয়ে বড় কথা, পুর কমিশনার বিজিন কৃষ্ণ নিজেই প্রশ্ন তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরেরই কিছু আধিকারিকের ভূমিকা নিয়ে। তিনি জানান, ওই আধিকারিকেরা ডেঙ্গি মোকাবিলায় তাঁদের বরাদ্দ যে সব কাজ ছিল, তা ঠিক ভাবে করেননি। সে জন্য তিনি কয়েক জন বরিষ্ঠ স্বাস্থ্য আধিকারিককে িবভিন্ন এলাকায় ঘুরে ডেঙ্গি মোকাবিলায় কী কী কাজ এখনও বাকি রয়েছে, সে সংক্রান্ত বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই ওই আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুর কমিশনার।

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue Howrah
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy