মানিকতলায় বিধি না মেনে রাস্তা পেরোচ্ছেন এক সাইকেল আরোহী। শুক্রবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী
কলকাতা শহরে এখন রাস্তার নিয়ম ভাঙাটাই যেন নিয়ম। উত্তরের গিরিশ পার্ক থেকে দক্ষিণের রাসবিহারী অ্যাভিনিউ মোড়— পথচারীদের একাংশকে দেখে মনে হবে, ট্র্যাফিক-বিধি না মানার পণ করেই যেন বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন তাঁরা। রাস্তা পারাপারের জন্য জ়েব্রা ক্রসিং বলে যে কিছু আছে, তা-ই যেন কারও জানা নেই। সিগন্যাল মেনে চলারও কোনও চেষ্টা নেই। প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ট্র্যাফিক কিয়স্কে পুলিশ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিধি ভাঙা লোকজনকে সচেতন বা সতর্ক করতে দেখা গেল না তাদের।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে চারটে। মানিকতলা মোড়ে শিয়ালদহমুখী সিগন্যাল থেকে গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে। কিন্তু তত ক্ষণে মাঝরাস্তায় পৌঁছে গিয়েছেন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি। তাঁর দু’দিক দিয়েই তখন গাড়ি যাচ্ছে। সেই চলন্ত গাড়ির ফাঁক গলেই কার্যত ‘লং জাম্প’ দিয়ে তিনি পৌঁছে গেলেন ও-পারে। যা দেখে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘‘এ-পারে পৌঁছতে গিয়ে তো একেবারে উপরেই পৌঁছে যেতেন। এত তাড়া কিসের?’’ যদিও মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তির তখন হুঁশ নেই। তিনি ছুটছেন বাস ধরতে।
রাস্তা পেরোনোর এই ছবি শহরের প্রায় সর্বত্রই। মহাত্মা গাঁধী রোড মোড়ে দেখা গেল, পথচারীদের সামলাতে কিয়স্ক ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়েছেন পুলিশকর্মীরা। অন্যান্য মোড়ে অবশ্য কিয়স্কেই দেখা গেল পুলিশকে।
পথচারীদের পাশাপাশি সাইকেল আরোহীদের ‘বীরত্ব’ও কিন্তু চোখে পড়ার মতো। কিশোর থেকে প্রৌঢ়, তাতে সব বয়সের মানুষই শামিল। বিকেল পৌনে পাঁচটা নাগাদ চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন মোড়ে দেখা গেল, পিঠে ব্যাগ নেওয়া এক কিশোর সাইকেল আরোহী চোখের পলকে মাঝরাস্তা পেরিয়ে উল্টো দিক দিয়ে চলে গেল মহাত্মা গাঁধী রোড মোড়ের দিকে। রাস্তায় পুলিশ থাকলেও ওই কিশোর তত ক্ষণে তাদেরও নাগালের বাইরে। গিরিশ পার্ক মোড়ে দেখা গেল, উত্তরমুখী রাস্তায় ইউ-টার্নের নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও একটি গাড়ি চোখের পলকে ইউ-টার্ন নিয়ে গতি বাড়িয়ে দক্ষিণমুখী রাস্তায় চলে গেল। ডিভাইডার টপকে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে রাস্তা পেরোনোর দৃশ্যও চোখে পড়ল ধর্মতলা থেকে শুরু করে মৌলালি-সহ বিভিন্ন মোড়ে ।
দক্ষিণের রাসবিহারী বা হাজরা মোড়ের ছবিটাও অনেকটা একই রকম। রাসবিহারী মোড়ে তখন সন্ধ্যা নেমেছে। সিগন্যাল খোলা দেখেও দৌড়ে রাস্তা পেরোতে গিয়ে হেডলাইটে চোখ ধাঁধিয়ে গেল
এক পথচারীর। তাতেও অকুতোভয় তিনি। জ়েব্রা ক্রসিংয়ের কোনও পরোয়াই নেই। ঝুঁকির মূল্য জীবন দিয়ে চোকাতে হলেও চলন্ত গাড়ির মাঝখান দিয়েই রাস্তা পেরোনো চাই। এর মধ্যেই আবার চলে বাসের রেষারেষি। রাসবিহারী মোড়ে দেখা গেল, বেলঘরিয়া-গল্ফ গ্রিন এবং লায়েলকা-হাওড়া রুটের দু’টি বেসরকারি বাসের তীব্র রেষারেষি চলছে। তার মধ্যেই বিপজ্জনক ভাবে নামতে বাধ্য হচ্ছেন যাত্রীরা।
ধর্মতলা-বিমানবন্দর রুটের বাসযাত্রীরা আবার জানালেন, রাতের দিকে ওই সমস্ত বাস এমন ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়য়, মনে হবে যেন রেসের ময়দানে নেমেছে। মানিক বিশ্বাস নামে এক নিত্যযাত্রীর কথায়, ‘‘ধর্মতলা থেকে বিমানবন্দরমুখী বাসগুলো এত রেষারেষি করে যে, সময়ের আগেই বাড়ি পৌঁছে যাই। কিন্তু সর্বক্ষণই প্রাণ হাতে করে বসে থাকতে হয়।’’ তাঁদের অভিযোগ, দিনের পর দিন এই ঘটনা চললেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয় না।
সম্প্রতি চিংড়িঘাটা মোড়ে দুর্ঘটনা এড়াতে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশকে সর্তক থাকতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই কমিশনারেটের পুলিশকে এ ব্যাপারে সমন্বয় রাখতেও বলেছেন তিনি। কলকাতা পুলিশের এক পদস্থ কর্তার দাবি, ‘‘পথচারীদের সতর্ক করার কাজ চলছে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে। সচেতনতামূলক নানা কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে।’’ মুখ্যমন্ত্রীর এই নির্দেশের পরে অতিরিক্ত কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে যুগ্ম কমিশনার (ট্র্যাফিক) সন্তোষ পাণ্ডেকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy