Advertisement
E-Paper

ধুতি-শাড়ির সমারোহে উড়ে গেল ‘করোনার সাজ’

আশঙ্কাটা তৈরি হয়েছিল ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-তেই। ‘বাঙালির প্রেমদিবস’ সরস্বতী পুজোয় সেই আশঙ্কাই সত্যি হল।

বেলাগাম:  ভিক্টোরিয়ায় সরস্বতী পুজোয় করোনা-বিধি ভাঙার ধুম।

বেলাগাম: ভিক্টোরিয়ায় সরস্বতী পুজোয় করোনা-বিধি ভাঙার ধুম। ছবি— সুদীপ্ত ভৌমিক।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৬:৪০
Share
Save

আশঙ্কাটা তৈরি হয়েছিল ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-তেই। ‘বাঙালির প্রেমদিবস’ সরস্বতী পুজোয় সেই আশঙ্কাই সত্যি হল। শাড়ি আর ধুতি-পাঞ্জাবির সাজগোজে সেই বাদই পড়ল মাস্ক। দেখা গেল না দূরত্ব-বিধি মেনে দায়িত্ব পালনের চেষ্টাও। এর সঙ্গেই পুলিশ-প্রশাসন এবং দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়ে দেদার মাইক বাজল পাড়ায় পাড়ায়। যা দেখে বোঝার উপায় রইল না যে, আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করলেও কলকাতা করোনামুক্ত নয়।

আশঙ্কা আরও বাড়াল একাধিক দায়িত্বজ্ঞানহীন, বেপরোয়া মন্তব্য। হাতিবাগানের একটি রেস্তরাঁয় যেমন দুপুর থেকেই প্রবল ভিড়। গেটের কাছে দাঁড়ানো নিরাপত্তাকর্মী নাগাড়ে বলে চলেছেন, ‘‘দয়া করে মাস্কটা পরে নিন। হাতটা স্যানিটাইজ় করে ভিতরে আসুন।’’ কিন্তু কথা শুনছেন না অনেকেই। তিন-চারটি যুগলকে ছাড়ার পরে পথ আটকালেন নিরাপত্তাকর্মী। তাঁর সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিয়ে এক তরুণ বললেন, ‘‘দাদু, আপনি এখনও করোনা খুঁজছেন? ডিজিটাল থার্মোমিটারটা বাড়িতে রেখে আসুন। পরে নিজের জ্বর মাপতে কাজে লাগবে!’’ ভিড়ের ভিতর থেকেই এক ব্যক্তি বলে উঠলেন, ‘‘দাদার বোধহয় বিধান শিশু উদ্যানের প্রতিমা দেখা হয়নি। সেখানে প্রতিমার চাঁদমালায় লেখা, ‘মা গো, যেন মুখের ভাষা ভাল হয়’!’’ ওই পুজো কমিটির বক্তব্য, রাজনীতি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভাষার দূষণ কমাতে সচেতনতার প্রসারই তাদের লক্ষ্য। শেষে পরিস্থিতি সামলাতে আসতে হল রেস্তরাঁর ম্যানেজারকে! কয়েক পা দূরে শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে সঙ্গীর অপেক্ষায় থাকা কলেজপড়ুয়া শ্রীলেখা কর্মকার আবার বললেন, ‘‘দেখছেন না, শাড়ি নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি! সত্যি করে বলুন তো, এর সঙ্গে কোনও মাস্ক যায়! ধুতি-শাড়িতে আজ বাদ থাক করোনার সাজ!’’

হাজরা মোড়ে প্রবল ভিড়ের মধ্যেই হেঁটে চলা অগুনতি যুগলের এক জনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বললেন, ‘‘সকাল সকাল বন্ধ থাকা কলেজেই অঞ্জলি নিয়ে বেরিয়েছি, করোনা আমাদের ছোঁবে না!’’ গড়িয়াহাটের একটি পুজো চত্বরে আবার এ দিন নিজস্বী প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল এক পুজো কমিটি। তাদের শর্ত ছিল একটাই, মাস্ক পরা নিজস্বীই একমাত্র গ্রাহ্য হবে। পুজোর উদ্যোক্তা তমাল দত্তবণিক বললেন, ‘‘আসলে এর মাধ্যমে একটা সচেতনতার বার্তা দিতে চেয়েছিলাম আমরা। কিন্তু, অধিকাংশ যুগলই বলছেন, আজকের মাস্ক পরা তাঁদের নাকি কোনও নিজস্বীই নেই। দিলে আগে তোলা কোনও ছবি দিতে পারেন।’’ একই বেপরোয়া চিত্র দেখা গেল প্রিন্সেপ ঘাটে। বাড়ির পুজো সেরে যুগলে বেরিয়ে পড়া ৯৫ শতাংশের মুখেই মাস্ক নেই। সেখানে কর্তব্যরত হেস্টিংস থানার এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘বড় অংশেরই মাস্ক নেই। প্রশ্ন করলে হাতে গোনা কয়েক জনের পকেট থেকে মাস্ক বেরোচ্ছে! গত বারও করোনার প্রকোপ শুরু হয়েছিল সরস্বতী পুজোর পরেই।’’ কলকাতা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন মাস্ক না পরার জন্য একশো জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বেলাগাম:  প্রিন্সেপ ঘাটে সরস্বতী পুজোয় করোনা-বিধি ভাঙার ধুম।

বেলাগাম: প্রিন্সেপ ঘাটে সরস্বতী পুজোয় করোনা-বিধি ভাঙার ধুম। ছবি—স্বাতী চক্রবর্তী।

এর মধ্যেও অবশ্য বহু সরস্বতী পুজো কমিটিই সচেতনতার প্রসারের চেষ্টা করেছে নানা রকম কোভিড-থিমের মাধ্যমে। এন্টালির তেমনই একটি পুজোর থিম দেখে বেরিয়ে এক তরুণী বললেন, ‘‘করোনা ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। থিমেই ভাল লাগে। মাস্ক পরার যে ড্রেস কোড চালু হয়েছিল, সেটাও এ বার ইতিহাস আর পুজোর থিমেই থাকুক।’’

মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেব যদিও এই যুক্তিহীন মন্তব্যের বেপরোয়া ভাব দেখে অবাক নন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘করোনার বিপর্যয় থেকে নেওয়া শিক্ষাগুলো কি সারা জীবন আমাদের সঙ্গী হবে? এর পরেও কি মাস্ক ব্যবহারের শিক্ষা মানব? এই সব নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, আমার মনে হয়, এই ভাল শিক্ষা ভুলে যাব। কারণ, আক্রান্ত হননি যাঁরা, তাঁরা ধরে নেবেন, এমনিই বেঁচে গিয়েছেন। মাস্ক কোনও কাজেই লাগেনি। আর যাঁরা আক্রান্ত হয়েও ফিরে এসেছেন, তাঁরা নিজেদের বড় যোদ্ধা ভাববেন। আর একদল বোকা-বোকা লাগার যুক্তিতে মাস্কের ব্যবহার ছেড়ে আসবেন। আগামী যত উৎসব আসবে, প্রতি বার এই সত্যিটা স্পষ্ট হবে।’’

চিকিৎসক কুণাল সরকার বললেন, ‘‘করোনা কেন কমেছে, আমরা জানি না। আবার বাড়বে কি না, তা-ও জানি না। তবে এটুকু জানি, এপ্রিল না পেরোনো পর্যন্ত করোনামুক্ত পরিস্থিতি ঘোষণা করার সময় আসেনি। এখন নিজেরাই ঠিক করা ভাল, শাড়ি-ধুতির সাজের মায়া বড়, না জীবনের!’’

mask saraswati puja

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।