Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Shaheed Minar

আশঙ্কা বাড়িয়ে বন্ধ শহরের সব থেকে পুরনো বাজি বাজার

শহরের অন্য কোথাও বাজার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত এ বারের মতো বাজার না বসানোরই সিদ্ধান্ত নিল ‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’।

প্রস্তুতি: শহিদ মিনারে বাজি বাজার না হলেও দোকান তৈরি করা হচ্ছে টালার বাজি বাজারের জন্য। রবিবার।

প্রস্তুতি: শহিদ মিনারে বাজি বাজার না হলেও দোকান তৈরি করা হচ্ছে টালার বাজি বাজারের জন্য। রবিবার। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

সবুজ বাজির জোগান প্রায় নেই। পাওয়া যাচ্ছে না বাজার বসানোর মতো মাঠও। সব চেয়ে বড় কথা, পাওয়া যাচ্ছে না বাজি বিক্রির ফায়ার লাইসেন্সও! লাইসেন্সের সরকারি পোর্টাল এখনও বন্ধ! এমন একাধিক জটিলতার মুখে পড়ে চলতি বছরে বাজি বাজারই বসছে না শহিদ মিনারে। শহরের অন্য কোথাও বাজার সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভাবনাচিন্তা করলেও শেষ পর্যন্ত এ বারের মতো বাজার না বসানোরই সিদ্ধান্ত নিল ‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’।

এতেই নতুন এক আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। অন্যান্য বার টালা, বেহালা এবং কালিকাপুরের পাশাপাশি শহিদ মিনার ও বিজয়গড়েও বাজি বাজার বসেছে। পুলিশের তত্ত্বাবধানে এই পাঁচটি বাজার বসানোর নির্দেশ দেওয়ার পিছনে আদালতের মনোভাব ছিল, শুধু এগুলিকেই বৈধ বাজার ধরে নিয়ে বাকি সব বাজি বাজার নিষিদ্ধ করা যাবে। এই সমস্ত বাজার যে হেতু পুলিশের তত্ত্বাবধানে বসে, তাই সেখানে কোনও নিষিদ্ধ বাজিও বিক্রি হবে না। এই বাজারের বাইরে যে কোনও দোকানে ধরপাকড় চালিয়ে আটকানো যাবে নিষিদ্ধ বাজির বিক্রি। কিন্তু এ বার প্রথমেই বাজি বাজার বসানোর বিষয়টি থেকে পিছিয়ে এসেছেন বিজয়গড় বাজার কর্তৃপক্ষ। এখন শহিদ মিনারের বাজারও না বসায় দেদার নিষিদ্ধ বাজি বিক্রির আশঙ্কা করছেন অনেকে। ‘পশ্চিমবঙ্গ বাজি শিল্প উন্নয়ন সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর মান্না বললেন, ‘‘শহরের এক-একটি প্রান্তে বাজার বসানোর পিছনে সমস্ত এলাকার মানুষের কাছে বৈধ বাজি পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা ছিল। যাতে সাধারণ মানুষ নিষিদ্ধ বাজির দিকে না ঝোঁকেন। কিন্তু এ বার যে হেতু বৈধ বাজি বাজারের সংখ্যা কম, তাই আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। পুলিশেরও কাজ কঠিন হবে। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আদালতের নির্দেশের অপেক্ষা না করে শুরু থেকেই স্পষ্ট প্রশাসনিক পরিকল্পনা থাকলে এই জিনিস হয়তো হত না।’’

বাজি ব্যবসার সঙ্গে যুক্তেরা জানাচ্ছেন, বড়বাজারের বাজি ব্যবসায়ীদের নেতৃত্বেই কলকাতার প্রথম বাজি বাজার বসে। ১৯৯৫ সালে প্রথম সেই বাজি বাজার বসেছিল ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের উল্টো দিকের ময়দানে। ১৯৯৬ সালে ওই বাজারেই রেকর্ড সংখ্যক প্রায় ১১৭টি বাজির স্টল বসে। ২০০৬ সালে জায়গা নিয়ে জটিলতায় বাজারটি সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় পার্ক স্ট্রিটের কাছের মাঠে। ২০০৭ সালে সেখান থেকে ওই বাজি বাজার স্থানান্তরিত হয় শহিদ মিনারের কাছে ময়দানে। ২০১৭ পর্যন্ত সেখানেই চলা বাজি বাজারটির নাম হয়ে যায় শহিদ মিনার বাজি বাজার। ২০১৮ সালে বাজারটি সরানো হয় বিবেকানন্দ পার্কে। কিন্তু পরের বছরই সেটি ফের শহিদ মিনারে স্থানান্তরিত হয়। করোনা-অধ্যায়ের আগে ২০১৯ সালে শেষ বার শহিদ মিনারেই হয়েছিল ওই বাজি বাজার।

‘বড়বাজার ফায়ারওয়ার্কস ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর যুগ্ম সম্পাদক শান্তনু দত্ত বললেন, ‘‘শহিদ মিনারে বাজার বসানোর অনুমতি পেতে অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হয়। কিন্তু এ বার শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বাজির ভাগ্য ঝুলে রয়েছে। আদালত দিনকয়েক আগে সবুজ বাজিতে ছাড়পত্র দিলেও কোনও ব্যবসায়ীরই ফায়ার লাইসেন্স নবীকরণ হয়নি গত তিন বছরে। এর পরে কী হবে, তারও কোনও নিশ্চয়তা নেই।’’ তিনি জানান, এই পরিস্থিতিতেও বাগবাজারের মাঠে এ বার বাজি বাজার বসানোর পরিকল্পনা করেছিলেন তাঁরা। স্থানীয় কাউন্সিলরের থেকে আপত্তি না থাকার শংসাপত্র নিয়ে পুরসভায় মাঠের ভাড়া বাবদ প্রায় এক লক্ষ ২৫ হাজার টাকা জমা করে দেওয়ার প্রক্রিয়াও শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পুলিশ। ওই এলাকায় পুরনো বেশ কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের উদাহরণ তুলে ধরে ঘিঞ্জি জায়গায় বাজি বাজার বসানো নিয়ে আপত্তি জানায় স্থানীয় শ্যামপুকুর থানা। শেষ পর্যন্ত কমিটি থেকেও বাজার এ বারের মতো না করার সিদ্ধান্ত হয়। বড়বাজারের বাজি ব্যবসায়ী ধ্রুব নারুলা বললেন, ‘‘এর পরে বাজার বসলেও সবুজ বাজি কোথা থেকে পাওয়া যাবে, কেউ জানেন না। পর পর দু’বছর করোনার জন্য সব নষ্ট হয়েছে। বাজারে স্টল দিয়ে এ বারও ক্ষতি হলে আর সামলানো যাবে না।’’ কিন্তু কলকাতার সব থেকে পুরনো বৈধ বাজি বাজার বন্ধ হয়ে যাবে? শান্তনু বলেন, ‘‘পুরনো হলেও এই তালপুকুরে ঘটি ডোবে না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Shaheed Minar Fire Cracker
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy