অায়োজন: অভিভাবকদের হাতে মিড-ডে মিলের সামগ্রী তুলে দেওয়ার প্রস্তুতি। সোমবার, শহরের একটি স্কুলে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কোথাও উপস্থিতি ৭০ শতাংশ, কোথাও বা তারও বেশি। শহরের বেশির ভাগ স্কুলই জানাচ্ছে, কোভিড পরিস্থিতিতেও অভিভাবকদের মধ্যে মিড-ডে মিলের সামগ্রী নেওয়ার উৎসাহ ছিল ভালই। স্কুলগুলির দাবি, কোভিড-বিধি মেনেই মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। যদিও কোনও কোনও স্কুলে দেখা গিয়েছে, মিড-ডে মিলের সামগ্রী নেওয়ার জন্য যে লাইন পড়েছে, সেখানে শারীরিক দূরত্ব রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। এ বার মিড-ডে মিলে চাল, আলু, ছোলা ও সাবানের সঙ্গে ডাল, চিনি এবং সয়াবিনও দেওয়া হচ্ছে। মিলছে জুতো ও ব্যাগও।
সোমবার হেয়ার স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, সেখানে কঠোর ভাবে কোভিড-বিধি মেনেই মিড-ডে মিলের সামগ্রী বিতরণ হচ্ছে। যদিও অভিভাবকদের যে লাইন পড়েছিল, সেখানে শারীরিক দূরত্ব মানা সম্ভব হয়নি। ওই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অপর্ণা মণ্ডল জানালেন, তাঁর ছেলে হেয়ার স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি উল্টোডাঙা থেকে বাসে করে এসেছেন স্কুলে। অপর্ণাদেবীর কথায়, “বাসেই এলাম। এখন কোভিডের যা পরিস্থিতি, একটু ভয়ই করছিল। তবে বিধি মেনেই স্কুলে এসেছি। এ বার মিড-ডে মিলের সামগ্রীর সঙ্গে ছেলের জন্য জুতো পেয়েছি। পেয়েছি আয়রন ট্যাবলেটও।”
মিড-ডে মিলের সামগ্রী নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের সঙ্গে পড়ুয়াদের আনা বারণ। তবু মধুমিতা পাল নামে এক অভিভাবক তাঁর ছেলেকে নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর দাবি, বাড়িতে ছেলেকে দেখার কেউ নেই। তাই নিয়ে আসতে হয়েছে। স্কুল থেকে অনেকটা দূরে ছেলেকে বসিয়ে রেখে মিড-ডে মিলের সামগ্রী নিলেন তিনি। মধুমিতা জানান, জুতো পেয়ে ছেলে খুব খুশি।
হেয়ার স্কুলের মতো হিন্দু স্কুলেও এ দিন মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত জানান, প্রথম দিনই ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ অভিভাবক এসে মিড-ডে মিল নিয়ে গিয়েছেন। শুভ্রজিৎবাবু বললেন, “দূরত্ব-বিধি যাতে কোনও ভাবেই লঙ্ঘিত তা হয়, তার জন্য আমাদের কয়েক জন শিক্ষক কড়া নজর রেখেছিলেন। কোভিড আবহেও সামগ্রী নেওয়ার জন্য অভিভাবকদের উপস্থিতির হার ছিল ভাল।”
গভর্নমেন্ট স্পনসর্ড মাল্টিপারপাস স্কুল ফর বয়েজ় টাকি হাউসের প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা বসাক জানান, তাঁদের স্কুলে মিড-ডে মিলের সামগ্রীর সঙ্গে জুতো ও ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। অভিভাবকেরা আসার আগে স্কুল ভাল ভাবে জীবাণুমুক্ত করা হয়েছে। এ দিন স্কুলে অভিভাবকদের উপস্থিতির হার ছিল ৭০-৭৫ শতাংশ। বেথুন কলেজিয়েট স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শাশ্বতী অধিকারী বললেন, “তিন দিন ধরে মিড-ডে মিল দেওয়া হবে। আমাদের স্কুল ভবন অনেকটা ছড়ানো বলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই সামগ্রী বিতরণ করা গিয়েছে। অভিভাবকদের উপস্থিতির হারও ছিল ভালই।”
কয়েকটি শিক্ষক সংগঠন অবশ্য মনে করছে, কোভিডের এখন যা পরিস্থিতি, তাতে মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের স্কুলে ডাকাটাও ঠিক নয়। যেমন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর মতে, এখন যা পরিস্থিতি, তাতে অভিভাবকেরা গণপরিবহণে করে স্কুলে এসে মিড-ডে মিল নিতে গিয়ে করোনায় সংক্রমিত হয়ে যেতে পারেন। তিনি সংক্রমিত হলে তাঁর পরিবারের অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। তাঁর বক্তব্য, মিড-ডে মিল বিতরণের প্রক্রিয়া আরও দিন পনেরো পরে শুরু করা যেত। সৌগতবাবু বলেন, “দিন পনেরো পরেও যদি পরিস্থিতি এ রকমই থাকত, তা হলে মিড-ডে মিলের জন্য প্রত্যেক অভিভাবকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বরাদ্দ অর্থ পাঠিয়ে দেওয়া যেত।”
সৌগতবাবু জানান, প্রতি বছরই পড়ুয়াদের জুতো দেওয়ার পরে সেগুলির মাপ নিয়ে নানা সমস্যা তৈরি হয়। সেই কারণে অনেকেই নতুন জুতো পাল্টাতে আসে। তিনি বলেন, “জুতো মাপ অনুযায়ী না হলে এই করোনা আবহে ফের স্কুলে এসে তা পাল্টানো খুবই ঝুঁকির প্রক্রিয়া। তাই জুতো না দিয়ে জুতো কেনার টাকাটা অভিভাবকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেওয়া যেত।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy