Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

শহরের ফাঁকা ফুটপাত যেন বয়ে বেড়াচ্ছে চৈত্র সেলের স্মৃতি

বর্তমান পরিস্থিতিতে এককথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি অনেকেরই।

চৈত্র সেলের সময়ে গমগম করা হাতিবাগানের ফুটপাতের বাজারে এখন নেই প্রায় কেউই। ছবি: সুমন বল্লভ

চৈত্র সেলের সময়ে গমগম করা হাতিবাগানের ফুটপাতের বাজারে এখন নেই প্রায় কেউই। ছবি: সুমন বল্লভ

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৩:০৪
Share: Save:

কয়েক দিন বাদেই নববর্ষ। প্রতি বছর এই সময়ে কলকাতা-সহ রাজ্যের সর্বত্র জমে ওঠে চৈত্র সেলের বাজার। চৈত্র মাসের মাঝামাঝি থেকে বৈশাখ পর্যন্ত কেনাকাটার উৎসবে হাত খুলে খরচ করেন ক্রেতারা। আর ব্যবসায়ীদের মুখের হাসি চওড়া হয়। নতুন বাংলা বছরে নতুন পোশাকের পাশাপাশি ‘ছাড়ে’ সারা বছরের জন্য ভাল ভাল জিনিস মজুত করে বাঙালি। কিন্তু করোনার আতঙ্ক এবং তা ঠেকাতে দীর্ঘ লকডাউন সে সবে জল ঢেলে দিয়েছে।

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শহর কলকাতার বিভিন্ন শপিং মলের পাশাপাশি ছোট-বড় প্রায় সব দোকানেই এই সময়ে কেনাকাটার উপরে বিশেষ ছাড় থাকে। কলকাতা শহর তো বটেই শহরতলি এবং গ্রামেও অস্থায়ী দোকান তৈরি করে চৈত্র সেলের মেলা বসে। বাড়তি রোজগারের আশায় অন্য বছর এই সময়ে রাস্তার দু’ধারেও পলিথিন বিছিয়ে জিনিসপত্র নিয়ে বসে পড়েন স্থানীয় ব্যবসায়ী, এমনকি বেকার ছেলেমেয়েরাও। সেই রোজগার থেকে অনেকেই অন্য ব্যবসার মূলধনও জোগাড় করে ফেলেন। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে এককথায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি অনেকেরই।

দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট, গড়িয়া, কালীঘাট এলাকায় বড় ব্যবসার পাশাপাশি ছোট-বড় রাস্তার দু’ধারে চলে চৈত্র সেল। সেই সব রাস্তা এখন খাঁ খাঁ করছে। গড়িয়াহাটের একটি বস্ত্র প্রতিষ্ঠানের মালিকের কথায়, ‘‘সেলের জন্য মজুত এত টাকার জামাকাপড়, শাড়ি দিয়ে এখন কী করব সেটাই বুঝতে পারছি না।’’

চৈত্র সেলের অন্যতম এলাকা উত্তর কলকাতার হাতিবাগান, শ্যামবাজার কিংবা দমদম সিঁথির মোড়ের ব্যবসায়ীরা জানান, সারা বছর তাঁরা চৈত্র মাসের এই সময়টার জন্য অপেক্ষা করেন। ব্যবসা হারিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে হাওড়া স্টেশন, ময়দান চত্বরের ব্যবসায়ীরাও।

উত্তর শহরতলির বহু জায়গাতেই বসে চৈত্র সেলের বাজার। বারাসতের এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘প্রচুর জামাকাপড় মজুত রয়েছে। কেনাবেচা সব বন্ধ।’’ বারাসত স্টেশন থেকে ১২ নম্বর রেলগেট জুড়ে প্রতি বছর বসে সেলের বিশাল মেলা। এক ছোট ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘এই মরসুমে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকার মুনাফা হত। সেই টাকায় জিনিস কিনে গোটা বছর ব্যবসা করতাম। দোকান খুলতে না পারায় এই ক্ষতি সামলে কী ভাবে বছরটা চালাব, ভাবতেই ভয় করছে।’’

বামনগাছির এক বস্ত্র ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘আগামী দিনে যদি কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করা যায়, তা হলে বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বহু ছোট ব্যবসায়ী তথা গরিব মানুষের ক্ষতি হয়ে যাবে।’’ মধ্যমগ্রাম-সোদপুর সেতু সংলগ্ন এলাকার এক ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘সেলের জন্য মজুত করা জিনিসপত্র বিক্রি করতে না পেরে যে কত ক্ষতি হয়ে গেল, তা যাঁদের হয়েছে তাঁরাই কেবল বুঝবেন। কিন্তু আগে তো প্রাণ। এই সময়ে ভিড় করার কোনও মানেই হয় না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE