Advertisement
E-Paper

দৌরাত্ম্য সামলাতে লাইসেন্স ছাড়া বাইক বিক্রি বন্ধই কি পথ?

পথ দুর্ঘটনা এড়াতে এক সময়ে এমনই নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্য সরকার।

বেপরোয়া: হেলমেট না পরে, একই বাইকে তিন জনকে বসিয়ে এই ভাবেই সিগন্যাল না মেনে চলা এ শহরের পরিচিত দৃশ্য। মোমিনপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

বেপরোয়া: হেলমেট না পরে, একই বাইকে তিন জনকে বসিয়ে এই ভাবেই সিগন্যাল না মেনে চলা এ শহরের পরিচিত দৃশ্য। মোমিনপুরে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৪১
Share
Save

শহরের রাস্তায় মোটরবাইকের দৌরাত্ম্য নিয়ে বিরক্ত খোদ কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। সূত্রের খবর, পুলিশ বাহিনীর আধিকারিকদের সঙ্গে সদ্য হওয়া মাসিক অপরাধ দমন বৈঠকে তিনি এমনও মন্তব্য করেছেন যে, “মোটরবাইকও কি আমি ধরব?” এর পরেও অবশ্য মোটরবাইকের ক্রমবর্ধমান দৌরাত্ম্যে লাগাম পরানোর পথ খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে কারও লাইসেন্স না থাকলে তাঁকে বাইক বা স্কুটার বিক্রি না করার পুরনো পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা করছে তারা। এ ব্যাপারে কড়াকড়ির অনুরোধ জানিয়ে পরিবহণ দফতরকে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে বলে খবর।

চালকের লাইসেন্স না-থাকলে কেনা যাবে না মোটরবাইক বা স্কুটার। পথ দুর্ঘটনা এড়াতে এক সময়ে এমনই নির্দেশ জারি করেছিল রাজ্য সরকার। তবে সেই নির্দেশ খাতায়-কলমেই রয়ে যায়। এর মধ্যে লকডাউন-পরবর্তী সময়ে ছোঁয়াচ এড়িয়ে গন্তব্যে পৌঁছনোর তাগিদে হু হু করে বিক্রি বেড়েছে দু’চাকার যানের। পরিবহণ দফতরের হিসেব বলছে, এমনি সময়ে রাজ্যে এক মাসে প্রায় এক লক্ষ মোটরবাইক-স্কুটার বিক্রি হয়। তবে গত পয়লা জুন থেকে এ পর্যন্ত শুধু কলকাতাতেই দেড় লক্ষেরও বেশি বাইক বা স্কুটার বিক্রি হয়েছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সে সব চলে যাচ্ছে কোনও রকম প্রশিক্ষণহীন কমবয়সিদের হাতে। অনেকের আবার লাইসেন্স প্রক্রিয়াই থমকে রয়েছে রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-র (আরটিও) অফিসে পরীক্ষা দেওয়ার ‘স্লট’ না পাওয়ায়। করোনার জেরে এই মুহূর্তে এমনিতেই আগের চেয়ে অনেক কম আবেদনকারীকে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। বহু ক্ষেত্রে আবার বাইক বা স্কুটারের ডিলার বিক্রির সুবিধার জন্য ক্রেতার নাম করে একটি লাইসেন্সের আবেদন করে দিচ্ছেন তাঁকে না জানিয়েই।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রথমে পরিবহণ দফতরের ওয়েবসাইটে গাড়ি বিক্রির সমস্ত কাগজপত্র আপলোড করতে হয় ডিলারকে। আবেদনে পাঠানো ছবির সঙ্গে বাইকের খুঁটিনাটি মিলিয়ে দেখে সেটি আরটিও অফিসে পাঠিয়ে দেন মোটর ভেহিক্‌লস দফতরের টেকনিক্যাল অফিসারেরা। সব খতিয়ে দেখে আরটিও অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশনের ছাড়পত্র দেওয়া হয় ডিলারকে। ডিলার নম্বর প্লেট তৈরি করে সেই প্লেটের ছবি ফের আপলোড করেন পরিবহণ দফতরের সাইটে। এর পরে তা খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট বা আর সি বুক দেওয়া হয়। পরিবহণ দফতরের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘অন্তত লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন দেখাতে পারলেও ছাড় দিচ্ছি। সেটাও না-থাকলে ওই বাইক কেনাই বেআইনি।’’

আরও পড়ুন: এগ্রি গোল্ড দুর্নীতিতে ৪ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত ইডি-র

আরও পড়ুন: তিন মেদিনীপুরের ৩৫ টি আসনই দখল করবেন, দাবি শুভেন্দুর

সদ্য মোটরবাইক কেনা এক ব্যক্তির অভিযোগ, এই ‘ছাড়ের’ ফাঁক গলেই তাঁকে ঠকানো হয়েছে। তিনি বলেন, “লাইসেন্স লাগবে কি না, জানতে চাওয়ায় আমাকে বলা হয়, ও সব এখন আর লাগে না। কিন্তু তড়িঘড়ি বাইক বেচতে গিয়ে আমাকে কিছু না-জানিয়েই ডিলার আমার নামে একটি লাইসেন্সের আবেদন করে দিয়েছিলেন।” ওই ব্যক্তির অভিযোগ, “আবেদন করা হয়েছে দেখে পরিবহণ দফতরও ছেড়ে দিয়েছে। আমি না হয় নিয়ম মানতে লাইসেন্স হওয়া পর্যন্ত বেরোইনি। কিন্তু এ ভাবেই যদি বিনা লাইসেন্সে কমবয়সিদের হাতে বাইক পৌঁছে যায়, তাঁরা সংযম দেখিয়ে পাকাপাকি লাইসেন্স আসার অপেক্ষা করবেন তো?”

পুলিশেরই হিসেব বলছে, আনলক-পর্বের গত কয়েক মাসে লাইসেন্স ছাড়া বেরিয়ে পড়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার মোটকবাইক ও স্কুটারচালকের বিরুদ্ধে। পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যাও উত্তরোত্তর বাড়ছে। গত এক মাসে এ ভাবেই মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অন্তত ২৪টি। দুর্ঘটনায় পড়ে আহতের সংখ্যা প্রায় ৯০ ছাড়িয়েছে।

কলকাতা পুলিশের ডিসি (ট্র্যাফিক) রূপেশ কুমার বলেন, “আইন ভাঙলেই নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হচ্ছে। লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।” ট্র্যাফিক পুলিশের বড় একটি অংশের দাবি, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বার পথ দুর্ঘটনা কমেছে। যদিও এর মধ্যেই ছিল করোনার জেরে পূর্ণ বা আংশিক লকডাউন। ফলে দুর্ঘটনার সংখ্যা এমনিতেই কমত বলে মত পুলিশের একাংশের। পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা মনে করেন, “যদি এমনিও কমে থাকে, তবু এটা তো অপরাধ নয়, যে কমছে বলে সন্তুষ্ট থাকতে হবে! দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, সেই চেষ্টাই করতে হবে।”

Bike License Buying and Selling automobiles

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।