প্রতীকী চিত্র।
পরিস্রুত জলের সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে বিশেষজ্ঞেরা বার বার নির্ধারিত মাত্রার মধ্যে জল খরচের জন্য সওয়াল করছেন। প্রয়োজনে নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রমের পরে বাড়তি জল অপচয়ের জন্য জলকর বসানোর প্রস্তাবও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু তাঁদের অভিযোগ, সেই প্রস্তাব, দাবি সবই রাজনীতির ঘোলা জলে হারিয়ে গিয়েছে। তবে সেই গতানুগতিক স্রোতের বিরুদ্ধে গিয়েই দৈনিক মাথাপিছু পরিস্রুত জল ব্যবহারের ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দিতে চলেছে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। যেখানে নিউ টাউনের স্থায়ী (রেসিডেন্সিয়াল পপুলেশন) ও অস্থায়ী জনসংখ্যার (ফ্লোটিং পপুলেশন) ব্যবহার্য পরিস্রুত জলের পরিমাণ নির্দিষ্ট করে বলা থাকছে। গত মাসে ‘নিউ টাউন কলকাতা (বিল্ডিং) রুলস, ২০০৯’-এ এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তিও জারি হয়ে গিয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, সংশোধিত রুলসের ২৮ নম্বর ধারায় বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, নিকাশির জলের পুনর্ব্যবহারের পাশাপাশি পরিস্রুত জলের ঊর্ধ্বসীমা উল্লেখ করা রয়েছে। সেই সীমা অনুযায়ী, নিউ টাউনের স্থায়ী বাসিন্দারা দৈনিক মাথাপিছু সর্বাধিক ১২০ লিটার জল ব্যবহার করতে পারবেন। আর যাঁরা কর্মসূত্রে বা অন্য কারণে নিউ টাউনে আসেন (ফ্লোটিং পপুলেশন), তাঁরা দৈনিক মাথাপিছু সর্বাধিক ৪০ লিটার পরিস্রুত জল খরচ করতে পারবেন। রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘পুরনো এবং নতুন— সব বাড়ির ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে। এমনিতে রুলস জারির পর থেকে তা কার্যকর হয়। কিন্তু ব্যবহারগত দিক যেগুলি থাকে, যেমন এই জল খরচের বিষয়টি, তা সবার ক্ষেত্রেই সমান ভাবে প্রযোজ্য।’’
পরিস্রুত জল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন পরিবেশবিদদের একাংশ। কারণ, পানীয় জলের সঙ্কটের বিষয়টি যে অলীক কোনও ভ্রম নয়, তা বাস্তব অভিজ্ঞতায় একাধিক বার ধরা পড়েছে। এমনিতেই ‘ওয়াটার স্ট্রেসড সিটি’-র মধ্যে কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল রয়েছে। ফলে সে দিক থেকে জল সংরক্ষণের প্রাথমিক পাঠে কলকাতাকে পিছনে ফেলে দিল নিউ টাউন। কারণ, কলকাতা পুর এলাকায় বড় আবাসনের ক্ষেত্রে বাল্ক মিটারের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হলেও তার ঊর্ধ্বসীমা বেঁধে দেওয়া নেই।
এক পরিবেশবিদের বক্তব্য, ‘‘পানীয় জল অপচয় রুখতেই হবে। এ ব্যাপারে বিকল্প পথ নেই।’’ আর এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক ভাবে পরিস্রুত জল অপচয়ের বিষয়টিরও এখানে রাজনীতিকরণ হয়েছে। শহরের পাশে গঙ্গা বইছে বলে এখনও আমরা জলের সঙ্কট বুঝতে পারছি না। কিন্তু এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। জল অপচয় রোধ করতে না পারলে বিপর্যয় অনিবার্য।’’
পরিবেশবিজ্ঞানীদের আরও আশঙ্কা, পানীয় জল সংরক্ষণের ব্যাপারে ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। এই মুহূর্তে সংরক্ষণ শুরু করলে হয়তো জল সঙ্কটের তীব্রতা পিছিয়ে দেওয়া যাবে, কিন্তু পুরোপুরি এড়ানো যাবে না। কারণ, ইতিমধ্যেই জলের চূড়ান্ত অপচয় হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, জল অপচয় বন্ধের পাশাপাশি বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, নিকাশির জলের পুনর্ব্যবহারও খুব গুরুত্বপূর্ণ।
সে দিক থেকেও নিউ টাউন কলকাতা (বিল্ডিং) রুলসের সংশোধনীর গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, সংশোধিত রুলসে ২৮ (৩) ধারার পরে ৪ উপধারা যোগ করে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে, নিউ টাউনের নতুন আবাসন, নতুন বা পুরনো বাড়ি অথবা আবাসনের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে প্রস্তাবিত নকশায় ছাদে এই ব্যবস্থা থাকতে হবে। সেই বৃষ্টির জল হয় সরাসরি ব্যবহার করা হবে, অথবা তা ‘গ্রাউন্ডওয়াটার রিচার্জ’-এর কাজে লাগাতে হবে বা উভয় কারণেই ব্যবহার করা যাবে। পুরনো বাড়ি বা আবাসনে এই ব্যবস্থা রাখলে তার জন্য নকশা অনুমোদনের ফি-তে ১৫ শতাংশ ছাড়ও দেওয়া হবে। এ ছাড়া নিকাশির জল পুর্নব্যবহারের ক্ষেত্রেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে নবান্ন সূত্রের খবর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy