থানা থেকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রিন্সকে। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে দেবাঞ্জনের সম্পর্ক মেনে নিতে পারছিল না প্রিন্স সিংহ। আর সেই কারণেই দেবাঞ্জনকে খুন করার পরিকল্পনা করে সে। পুলিশের দাবি, নিজেই দেবাঞ্জনকে গুলি করেছিল বলে গ্রেফতার হওয়ার পর জেরায় জানিয়েছে প্রিন্স।
নিমতার ম্যানেজমেন্ট পড়ুয়া, দমদমের বাসিন্দা দেবাঞ্জন দাসের খুনের ঘটনায় প্রথম থেকেই উঠে আসছিল ত্রিকোণ প্রেমের ঘটনা। দেবাঞ্জনের বাবাও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ত্রিকোণ প্রেমের কারণেই খুন হয়েছে তাঁর ছেলে।
প্রাথমিক জেরার পর পুলিশের দাবি, জেরায় খুনের কথা কবুল করেছে প্রিন্স। জেরার মুখে জানিয়েছে, বিশালকে সঙ্গে নিয়ে নবমীর রাতেই দেবাঞ্জনকে খুনের ছক করে সে। সল্টলেক সেক্টর-৫ এর একটি ধাবায় বসে ওই রাতেই দেবাঞ্জনকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা পাকা হয়।
সেই অনুযায়ী প্রিন্স নজর রাখে দেবাঞ্জনের গতিবিধির উপর। ওই রাতে দেবাঞ্জনও গিয়েছিল সল্টলেক সেক্টর-৫ এর একটি পানশালাতে বন্ধুদের সঙ্গে। সেখান থেকে দেবাঞ্জন তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে রাত দেড়টা নাগাদ বাড়ির দিকে রওনা হলে বিশালকে সঙ্গে নিয়ে দেবাঞ্জনের গাড়ি অনুসরণ করতে থাকে সে।
পুলিশের দাবি, জেরায় মুখোমুখি প্রিন্স এবং বিশালকে বসিয়ে জানা গিয়েছে, ওই রাতে বিশালের স্কুটারেই প্রিন্স দেবাঞ্জনের গাড়ি অনুসরণ করে। রাত ২টো নাগাদ দেবাঞ্জন নিমতা সরদার পাড়ায় নিজের বান্ধবীকে বাড়িতে নামিয়ে দেওয়ার পর প্রিন্স স্কুটার নিয়ে পথ আটকায় দেবাঞ্জনের গাড়ির।
আরও পড়ুন: কমলেশ হত্যাকাণ্ড: সুরাতের মিষ্টির দোকানে দেখা দুই শুটারকেই খুঁজছেন তদন্তকারীরা
সেখানে দেবাঞ্জনের সঙ্গে এক দফা বচসা হয় প্রিন্সের ওই তরুণীকে নিয়ে। পুলিশ ওই তরুণীকে জেরা করে জানতে পেরেছে, প্রায় তিনবছর প্রিন্সের সঙ্গে তার সম্পর্ক ছিল। আড়াই-তিন মাস আগে সে দেবাঞ্জনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। তা নিয়ে প্রিন্সের সঙ্গে তার একাধিকবার মনোমালিন্য হয় বলেও জেরায় জানিয়েছে ওই তরুণী। দেবাঞ্জনের বাবাও অভিযোগ করেছিলেন,‘‘বুবুন (দেবাঞ্জনের ডাক নাম) –এর মৃত্যুর ১৫ দিন আগে ওই প্রিন্স নামে ছেলেটি ফোন করে ওকে হুমকি দিয়েছিল।”
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই দিন দুপুরে প্রিন্স কৈখালি এলাকায় বন্ধু শ্যামের ভাড়ার ফ্ল্যাটে যায়। সেখানে হাজির হয় বিশাল। সেখানে তিনজনের মধ্যে দেবাঞ্জন এবং প্রিন্সের প্রাক্তন বান্ধবীকে নিয়ে কথা হয়। ওই ফ্ল্যাটেই মেজাজ হারায় প্রিন্স এবং বলে দেবাঞ্জনকে খুন করবে।
তদন্তকারীদের দাবি, এর পরেই দমদম এলাকার এক অপরাধীর সঙ্গে যোগাযোগ করে সে। তার কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্রও জোগাড় করে। পুলিশের দাবি, গোটা ঘটনাটা জানত বিশাল। রাতে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের একটি পানশালাতেও যায় তারা। সেখানেই চূড়ান্ত হয় খুনের পরিকল্পনা।
আরও পড়ুন: নিখোঁজ ছাত্রীর পচাগলা দেহ উদ্ধার, খুনের অভিযোগে উত্তাল রতুয়া
পুলিশের দাবি, জেরায় প্রিন্স এবং বিশাল স্বীকার করেছে যে দেবাঞ্জনের গাড়ি আটকালে, সে কথা বলার জন্য চালকের আসনের দিকের কাচ নামায়। বচসার পর হঠাৎ করেই পিছন থেকে গুলি চালায় প্রিন্স। গাড়ির ইঞ্জিন চালু থাকায় এবং গিয়ার নিউট্রালে না থাকায় গুলিবিদ্ধ হওয়ার পরই দেবাঞ্জনের গা়ড়ি গড়িয়ে এগিয়ে যায়। প্রায় ১৫০ মিটার এগিয়ে গিয়ে ধাক্কা মারে একটি ল্যাম্পপোস্টে এবং পাশের পাঁচিলে।
তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনাস্থলে কোনও সিসিক্যামেরা না থাকলেও, কিছুটা দূরে একটি সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। সেই ফুটেছে দুই তরুণকে স্কুটারে চেপে চলে যেতে দেখা গিয়েছে। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, বিশালের স্কুটারে চেপেই ওই রাতে পালায় দু’জন। এর পর একাদশীর দিন বাড়িতেই ছিল সে। কিন্তু তার পর সে আশ্রয় নেয় বিশালের দমদমের ফ্ল্যাটে। সেখান থেকে পালায় বজবজে মাসির বাড়িতে।
এ দিন প্রিন্সকে আদালতে তোলা হয়। পুলিশ তাকে ১৪ দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে চেয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy