উদ্ধার হওয়া সেই শিশু
শীতের রবিবারের সুনসান সন্ধ্যা। বাড়িতে-বাড়িতে ইডেনের ক্রিকেট ম্যাচ চলছে টিভিতে। তারই মধ্যে আচমকা কুকুরের চিৎকারে পাড়া মাথায়। লাগাতার চলতে দেখে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ শেষমেশ জনা দুয়েক বিরক্ত হয়েই বেরিয়ে এলেন বাইরে। আর তখনই নজরে পড়ল ঘটনাটা। স্টেশনের পাশে ফাঁকা জায়গায় কাপড়ে জড়িয়ে পড়ে ফুটফুটে এক শিশু। আর তাকেই পাহারা দিচ্ছে সারমেয় বাহিনী। রাস্তায় নেমে তুমুল চিৎকারে সেটাই জানান দিচ্ছিল তাদের সঙ্গীরা।
দমদম জংশন স্টেশন সংলগ্ন এম সি গার্ডেনে সারমেয়দের সৌজন্যেই রক্ষা পেয়েছে শিশুটি। এখন তার ঠাঁই হয়েছে আর জি কর হাসপাতালে।
ওই এলাকায় পথ-কুকুরের সংখ্যাটা নেহাত কম নয়। এক জন চিৎকার জুড়লে পাড়া জুড়ে সমস্বরে চিৎকারও নিত্যদিনের ঘটনা। প্রায়ই রাতে কুকুরের চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায় পাড়ার লোকের। কেউ ঠান্ডা জল ছুড়ে নিস্তার পান। কেউ বা বেশি রাতে রাস্তায় চলতে হলে সঙ্গে রাখেন লাঠি। রবিবার রাতে তেমনই চিৎকার শুনে তাই প্রথমে তেমন আমল দেননি তরুণ সঙ্ঘ ক্লাব লাগোয়া এমসি গার্ডেনের বাসিন্দারা। কিন্তু বেশ কিছুক্ষণ ডাকাডাকির পরে দুয়েকটি কুকুর রাস্তায় উঠে আসে কারও কারও বাড়ির সামনেও চেঁচামেচি জোড়ে।
তখনই বিশ্বজিৎ পাত্র, রমা চক্রবর্তীরা বাইরে বেরিয়ে আসেন। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘কুকুরগুলোর পিছনে পিছনে এগিয়ে দেখি কোণের দিকে ফাঁকা জায়গাটায় কাপড়ে জড়ানো একটা পুঁটুলি পড়ে। তাকে ঘিরে অনেকগুলো কুকুর। পুঁটুলি থেকে খুব আস্তে কুঁই কুঁই করে কান্নার শব্দ আসছে।’’
প্রথমে বিশ্বজিৎ ভেবেছিলেন, বেড়ালের বাচ্চা-টাচ্চা হবে। কাছে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ। দেখি মানুষ! ফুটফুটে একটা বাচ্চা। দামি চাদরে মোড়া। ডায়াপার পরানো। যত্ন করে বাচ্চাটাকে তুলে তরুণ সঙ্ঘের চাতালে নিয়ে আসেন বিশ্বজিৎ। চুপ করে যায় সারমেয় বাহিনী। এ বার বিশ্বজিৎ, রমাদেবীদের হাঁকাহাকিতে বেরিয়ে আসেন পড়শিরা। দুধ গরম করে নিয়ে আসেন রমাদেবী। নিভা পাণ্ডে নামে আর এক মহিলা ঝিনুকে করে শিশুটির মুখে দুধ ঢেলে দিতেই হাসি ফোটে তার মুখে। হাত-পাও ছুড়তে থাকে।
খবর যায় দমদম থানায়। এমন ফুটফুটে বাচ্চাকে নিজের কাছে রেখে দেওয়ার আবদার করতে থাকেন কেউ-কেউ। ততক্ষণে পুলিশ চলে এসেছে। তারা জানিয়ে দেয়, এ ভাবে বাচ্চা রাখা যাবে না। তা বেআইনি। পাড়ার লোকেদের পুলিশকর্মীরা বলেন, শিশুটিকে এখনই হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। আদালতে আবেদন করে তবেই দত্তক নেওয়া যাবে।
কিন্তু অতটুকু এক শিশুকে পুলিশের পক্ষে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। সাক্ষী-সাবুদও লাগবে। অগত্যা পুলিশের আর্জি মেনে শিশুটিকে নিয়ে জিপে ওঠেন দীপা শেঠি, ছবি পাত্ররা। আর জি কর হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা শুরু হয় তার। চিকিৎসকেরা জানান, কয়েক সপ্তাহ বয়স হবে ছেলেটির।
পুলিশের অনুমান, কোনও সমস্যায় পড়ে কেউ ফেলে রেখে যেতে পারে শিশুটিকে। আবার চুরি করে ফেলে রেখে যাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
সোমবার সকালে স্টেশনের পাশের ফাঁকা জায়গাটি দেখিয়ে দীপা বলেন, ‘‘দেখে মনে হল সচ্ছল পরিবারে, যত্নে মানুষ হয়েছে শিশুটি। শীতের মধ্যে কোলে নিতেই আরাম পেয়ে হাত-পা ছুড়ে কী লাফালাফি! আহা রে!’’ জায়গাটি ঘিরে তখনও কৌতুহলী ভিড়।
দিনভর চর্চা চলেছে সারমেয় বাহিনীর অপত্য স্নেহ নিয়েও। তারা অবশ্য তখন রাস্তার পাশে, চায়ের দোকানের কাছে গুটিসুটি। রোজকার মতো লেজ নেড়েছে লোক দেখে। তবে অন্য দিনের মতো গরম জল ছোড়েনি কেউ। বরং প্রাপ্তি হয়েছে বিস্কুট।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy