কার্ডের মালিক বসে রয়েছেন কলকাতায়। অথচ তাঁরই এটিএম কার্ড ব্যবহার করে টাকা তোলা হয়েছে চিনে! সম্প্রতি একটি কার্ড জালিয়াতির তদন্তে নেমে এমনটাই জানতে পেরেছে পুলিশ। যার ভিত্তিতে শহরে কার্ড জালিয়াতিতে নতুন এক চক্রের কথাও বলছেন গোয়েন্দাদের একাংশ। চলতি ভাষায়, তার নাম ‘চিনা গ্যাং’।
সম্প্রতি কল্যাণ ভৌমিক নামে কলকাতার এক আইনজীবী তাঁর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন, অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা নেই। সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করেন তিনি। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানান, চিনের এটিএম থেকে মোট পাঁচ বারে তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫৩ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। দুষ্কৃতীরা টাকা তোলার সময়ে তাঁর কাছে কোনও এসএমএস-ও আসেনি বলে দাবি করেছেন কল্যাণবাবু।
গোয়েন্দারা বলছেন, তথ্য হাতিয়ে ‘ডুপ্লিকেট’ কার্ড তৈরির চল দুষ্কৃতীদের মধ্যে রয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’। কল্যাণবাবুর কার্ডের তথ্য চুরি করেও এ ভাবেই কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। ক্লোনিং বা স্কিমিং ব্যাঙ্ক জালিয়াতির ক্ষেত্রে নতুন নয়। ২০১০ সালে দক্ষিণ শহরতলি থেকেই ক্রে়ডিট কার্ড স্কিমিংয়ের প্রথম চক্রটিকে গ্রেফতার করেছিল ব্যাঙ্ক জালিয়াতি দমন শাখা। তার পরেও একাধিক বার এমন চক্র ধরা পড়েছে। পুলিশ সূত্রের মতে, এ যাবৎকালে এই চক্র মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরাই চালাত। ‘নাইজিরীয় গ্যাং’ কথাটিও লালবাজারের অন্দরে চালু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্কিমিং চক্রে ‘চিনা’ দুষ্কৃতীদের উপস্থিতি এর আগে নজরে আসেনি বলেই দাবি করছেন গোয়েন্দারা।কল্যাণবাবু কার্ড নিয়ে বসে রয়েছেন কলকাতায়। কিন্তু তাঁরই কার্ড ব্যবহার করে চিন থেকে টাকা তোলা হল কী ভাবে?
পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, স্কিমিংয়ের ক্ষেত্রে ক্রে়ডিট কার্ডকেই বেশির ভাগ সময় নিশানা করা হয়। এবং তা দিয়ে অনলাইনে দামি জিনিসপত্র কিনে টাকা হাতায় দুষ্কৃতীরা। কিন্তু এটিএম কার্ড ক্লোন করে টাকা তুলে নেওয়া সে ভাবে দেখা যায়নি। এটিএম কার্ডের তথ্য ও পিন দুষ্কৃতীরা পেল কী করে?
গোয়েন্দা সূত্রের মতে, কার্ডের তথ্য হাতানোর জন্য একটি বিশেষ যন্ত্র (কার্ড কপিয়ার) ব্যবহার করা হয়। কার্ডের সোয়াইপ মেশিনের মতো দেখতে ওই যন্ত্রে এক বার কার্ডটি ঘষে দিলেই কার্ডের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা সব তথ্য ভিতরে ঢুকে যায়। এ বার সেই তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে খালি কার্ডে ভরে দিলেই কার্ডের প্রতিলিপি তৈরি হয়ে যায়। ফলে আসল কার্ডের মতো ওই প্রতিলিপি দিয়েও কেনাকাটা করা বা টাকা তোলা যায়। বিভিন্ন দোকানের কর্মীদের হাত করে সোয়াইপ মেশিনের পাশে কার্ড কপিয়ার রাখা হয়। কখনও রক্ষীবিহীন এটিএম কাউন্টারেও এই ধরনের ‘কপিয়ার’ লাগিয়ে রাখে দুষ্কৃতীরা। তার পরে গ্রাহক পিন দেওয়ার সময়ে লুকনো ক্যামেরায় তার ছবি তুলে নেয় বা কায়দা করে দেখে নেয়। এ বার ক্লোন কার্ড ব্যবহারের সময় সেই পিন ব্যবহার করলেই হল! ‘‘
এই গোটা বিষয়টি বিরল হলেও কল্যাণবাবুর ক্ষেত্রে এমনটা হয়নি, এ কথা এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যায় না,’’ মন্তব্য এক গোয়েন্দা অফিসারের। যদিও পুলিশের আর একটি সূত্রের মতে, এটিএম কাউন্টার থেকে হয়তো টাকা তোলা হয়নি। কোনও চিনা ওয়েবসাইট থেকে জিনিস কেনা হয়েছে। সে দেশের ওয়েবসাইটগুলিতে কেনাকাটার সময়ে পিন লাগে না। কিন্তু টাকা তোলার এসএমএস অ্যালার্ট কেন এল না, তা নিয়ে এখনও ধন্দে রয়েছেন পুলিশ অফিসারেরাও।
কল্যাণবাবুও বলছেন, তিনি ওই ডেবিট কার্ড ব্যবহার করে শহরের নানা দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনেছেন। হাইকোর্ট পাড়ার একটি রক্ষীবিহীন বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএমও ব্যবহার করেছেন। পুলিশের একাংশ সন্দেহ করছে, চিনে বসে জালিয়াতি করা চক্রের এজেন্টরা এ শহরে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। তারাই কার্ডের তথ্য ও পিন হাতিয়ে বিদেশে পাচার করছে। সেই তথ্য কাজে লাগিয়ে সে দেশে বসেই জালিয়াতি করছে চক্রের চাঁইরা।
এই পরিস্থিতি তো যে কোনও সময়ে যে কারও সঙ্গেই হতে পারে! তা হলে বাঁচার উপায় কী? আশঙ্কার কথা মেনে নিচ্ছেন পুলিশের অনেকেই। তাঁরা বলছেন, অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হয়। একাধিক চক্রকে ধরাও হয়েছে। কিন্তু দুষ্কৃতীরা যে ভাবে নিত্যনতুন অপরাধের ফিকির বার করছে, তাতে ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করার সময়ে সাবধান থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি।
আরও পড়ুন:
জালিয়াতির আশঙ্কা, সারা দেশে ৩২ লক্ষ ডেবিট কার্ড ব্লক করা হল
ডেবিট কার্ড জালিয়াতি থেকে বাঁচবেন কী করে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy