ভেঙে ফেলা হবে পুরনো টালা সেতু। ফাইল চিত্র
নকশার মূল লক্ষ্য, অন্তত ১০০ বছরের জন্য সেতুর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা। আর তাই ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের (আইআরসি) সংশোধিত ‘কোড’ অনুযায়ী যাতে নতুন টালা সেতু যুদ্ধের সাঁজোয়া গাড়ি বা ট্যাঙ্কারের ভারও বহন করতে পারে, সেই উপযোগী নকশা তৈরি করতে চলেছে রাজ্য সরকার।
পূর্ত দফতর সূত্রের ব্যাখ্যা, ২০১৭ সালে আইআরসি-৬ সংশোধন হয়েছিল। সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী, সেতুর নকশা এমন ভাবে হতে হবে যাতে তা কারখানার যন্ত্রাংশ বহনকারী বিশেষ ধরনের গাড়ির ভারও বহন করতে পারে। যন্ত্রাংশ বহনকারী, ২০ অ্যাক্সেল বা ৮০ চাকাযুক্ত ওই ধরনের গাড়ির ওজন হয় ৩৮৫ টন। দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘আইআরসি-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, যখন ওই গাড়ি সেতুর উপরে থাকবে তখন অন্য কোনও গাড়ি সেতুর উপরে উঠবে না। পরিস্থিতিগত সেই সমীকরণ বুঝে নিয়ে নকশা তৈরি করতে হয়। রেলও একই পদ্ধতি মেনে চলে।’’
আইআরসি-৬-এর এই নির্দেশিকা মাথায় রেখেই টালা সেতুর নকশা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন পূর্ত-কর্তারা। তাঁদের ব্যাখ্যা, সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকা অনুযায়ী ‘৭০-আর’ অথবা ‘ক্লাস-এ লোডিং’ মেনে তৈরি হচ্ছে নকশা। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যায়, যুদ্ধে ব্যবহৃত ট্যাঙ্কের এক দিকের চাকা-সমষ্টির ওজন হয় ৩৫ টন। অর্থাৎ ট্যাঙ্কের দু’দিকের চাকা-সমষ্টি বা ট্যাঙ্কের মতো ‘ট্র্যাক্টড ভেহিক্ল’-এর মোট ওজন ধরা হয় ৭০ টন। আবার সাধারণ চাকা দেওয়া গাড়ির ওজন ধরা হয় ১০০ টন। এর মধ্যে যার ওজন বহন করা সেতুর পক্ষে সবচেয়ে বেশি কষ্টকর এবং কঠিন, সেটি ধরে নিয়েই নকশা তৈরি করা হবে। এক কর্তার কথায়, ‘‘এই পদ্ধতিতে সেতু সবচেয়ে শক্তিশালী হবে। কারণ, এখন কোনও সেতুর পরিকাঠামো ১০০ বছরের কম সময়ের জন্য পরিকল্পনা করা উচিত নয়। টালা সেতুর ক্ষেত্রেও এই ধরনের পদ্ধতি মেনে চলা হবে।’’ নকশা চূড়ান্ত হলে নতুন টালা সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র ডাকবে রাজ্য। সম্প্রতি টালা সেতু ভাঙার জন্য টেন্ডার ডেকেছে রাজ্য। নতুন সেতুর নকশা চূড়ান্ত হলে গেলে তার পরেই সম্ভাব্য খরচের হিসেব কষবে দফতর।
রেল সূত্রের খবর, পুরনো টালা সেতুর এক দিকের লেনের ভার বহন ক্ষমতা ছিল ৫৬ টন করে। আর তার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল ২৫ মিটার লম্বা ৩৯টি গার্ডার। প্রি-স্ট্রেসড কেব্ল দিয়ে গার্ডারগুলি দু’দিক থেকে একে অপরের সঙ্গে জোড়া ছিল। তবে নতুন করে টালা সেতু নির্মাণের সময়ে আইআরসি-এর নির্দেশিকা মেনে সাঁজোয়া গাড়ির ভারবহন ক্ষমতাসম্পন্ন সেতু তৈরি করা হবে বলে ঠিক হয়েছে। তবে সেতুটি কতটা চওড়া হবে, তার উপরেও একাধিক বিষয় নির্ভর করছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, টালা সেতু তৈরি করতে এক বছরের সময়সীমা দিয়েছে রাজ্য সরকার।
এর আগে সেতু বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়না রাজ্যের মুখ্যসচিবকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, রেলের হাতে থাকা নকশা অনুযায়ী সেতু তৈরি করতে তাদেরই ‘সুপার স্ট্রাকচার’ ব্যবহার করা হোক। সেই নকশা অনুযায়ী রেললাইনের উপরে সেতুর মূল অংশে ইস্পাতের কাঠামো ব্যবহার করা হলে কম সময়ে সেতু তৈরি করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে সেতুর কাঙ্খিত গুণমানও বজায় রাখা যাবে। পূর্তকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, রাজ্য সেই পথে হাঁটলেও নকশা তৈরিতে আইআরসি-র নির্দেশিকা মানতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy