Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Government of West Bengal

দাদার দাপট কমাতেই কি ‘পাড়ায় সমাধান’?

ভোটের দায় তো রয়েছেই, সঙ্গে পাড়ার দাদাদের এই দাপট  কমানোর লক্ষ্যেই কি এ বার চালু হচ্ছে ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প?

—ফাইল চিত্র

—ফাইল চিত্র

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:১০
Share: Save:

কোথাও ছ’বার আবেদন করার পরেও বিধবা ভাতা পাননি বৃদ্ধা। কারণ তিনি, দাদার দলের সমর্থক নন। জনপ্রতিনিধি দাদার দাবি মতো তোলা দিতে না পাড়ায় কারও বাড়ির জলের পাইপলাইনের সংস্কার আটকে রয়েছে। দক্ষিণ কলকাতার মনোহরপুকুর রোডে আবার একটি বাড়ির চালে ভেঙে পড়া গাছ সরানো হচ্ছে না, ওই পরিবারের সঙ্গে পাড়ার নেতা-দাদার মতের মিল না হওয়ায়!

ভোটের দায় তো রয়েছেই, সঙ্গে পাড়ার দাদাদের এই দাপট কমানোর লক্ষ্যেই কি এ বার চালু হচ্ছে ‘পাড়ায় সমাধান’ প্রকল্প? প্রশ্নটা নানা মহলেই ঘুরপাক খাচ্ছে। গত কয়েক মাসে ফুটপাত দখল থেকে বেআইনি নির্মাণ— সবেতেই পাড়ার দাদার দাপটের অভিযোগ বেড়েই চলেছে। রাজ্যের শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীও মানছেন এই অভিযোগের কথা। বোলপুরে প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী যদিও জানিয়েছেন, এলাকার মানুষের ছোট ছোট প্রয়োজন দ্রুত মেটাতে এই প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স না থাকা, স্কুলে অতিরিক্ত শ্রেণিকক্ষ তৈরি, পাড়ায় শৌচাগার বা সংযোগকারী রাস্তা তৈরি, কালভার্ট বানানো, জঞ্জাল সাফাই, কল বা নলকূপ সংস্কার, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক বা শিক্ষকের অভাবের মতো বিষয়গুলিও দেখা হবে এই প্রকল্পে। এত দিন শহরে কাউন্সিলর বা পুর কোঅর্ডিনেটরেরাই এই অভাব-অভিযোগ শুনতেন।

কিন্তু ভোটের আগে হঠাৎ প্রশাসনের শীর্ষস্তরকে এই প্রয়োজন পূরণে নামতে হচ্ছে কেন?

শাসক দলের একাধিক নেতা-মন্ত্রী মনে করছেন, এর পিছনে দায়ী কাউন্সিলর বা পুর কোঅর্ডিনেটর এবং তাঁর দলবলের উপর মানুষের ক্ষোভ। রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘প্রকল্পের বাস্তবায়ন এক জন বিধায়ক বা সাংসদের মাধ্যমে যতটা হয়, তার চেয়ে অনেক বেশি হয় কাউন্সিলর বা পুর কোঅর্ডিনেটরের হাতে। সেখানেই সমস্যা হচ্ছে। কোথাও নিজের লোককে পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোথাও ব্যক্তিগত শত্রুতার কারণে প্রশাসনিক সাহায্য থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রকৃত দাবিদারকে।’’ তাঁর আশঙ্কা, ‘‘পাড়ায় সমাধানের শিবির শেষে কাউন্সিলর বা পুর কোঅর্ডিনেটরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর মঞ্চ না হয়!’’

আরও পড়ুন: ফের বাড়ল আয়কর রিটার্নের সময়, ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত, জানাল অর্থ মন্ত্রক

বর্ষীয়ান মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘কাউন্সিলর বা তাঁর লোকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ থাকে। সবটা যে ঠিক অভিযোগ, তেমন না-ও হতে পারে। কিন্তু অভিযোগের কারণে মানুষ যাতে ভুল না বোঝেন, সেটাও দেখা দরকার। এখনকার রাজনীতিতে এই সব প্রকল্প লাগে। আমরা পুরনো লোক, ও সবের দরকার পড়ে না। জনসংযোগ এমনিই হয়।’’

আরও পড়ুন: সৌম্যেন্দুর অপরাধ কী? ‘ন্যায়বিচার’ চেয়ে মমতাকে চিঠি মধ্যম অধিকারীর

সাংসদ সৌগত রায় বলছেন, ‘‘এই প্রকল্পে এমন বহু কাজও তো হওয়ার কথা, যেগুলি এত দিন কাউন্সিলরের হাতে থাকত না। সেই সঙ্গে এমন বহু কাজও রয়েছে, যা হয়তো কাউন্সিলর করে উঠতে পারেননি। সবটাই এই প্রকল্পে দেখে দেওয়া হবে।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘এটাও ঠিক যে, বহু কাউন্সিলরের বিরুদ্ধেই টাকা তোলার অভিযোগ থাকে। ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পে ঘর দিয়েও কাউন্সিলর টাকা চাইছেন বলে অভিযোগ শুনি। একটা প্রকল্পে এই ধরনের সমস্যা মিটে গেলে ক্ষতি কী?’’

আর বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের দাবি, ‘‘পাড়ার নেতা-দাদারা এত দিন এত টাকা খেয়েছেন যে, মানুষের কাজই হয়নি। লোকজন চেপে ধরায় এখন কাটমানি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তাই সরকারি ভাবে প্রকল্প করে টাকা তোলার উপায় বাতলে দেওয়া হচ্ছে। এত দিন টাকা না দিলে সমস্যা মিটত না। এ বার সমস্যা মিটিয়ে দিলাম, বলে টাকা তোলা হবে!’

অন্য বিষয়গুলি:

Government of West Bengal project politics
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy