Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

‘জয় শ্রীরাম’-এর ধাক্কায় মন্দিরমুখী হল পুরসভা!

কিছু দিন আগে কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ ওঠায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। রীতিমতো হট্টগোল, বিতর্ক শুরু হয়েছিল তা নিয়ে। এ বার এমন নির্দেশিকার পিছনেও ‘গেরুয়া-দাপট’ রয়েছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।

নজরে: কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন ঘাট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নজরে: কালীঘাট মন্দির সংলগ্ন ঘাট। ছবি: রণজিৎ নন্দী

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০২:১৫
Share: Save:

ভোট বড় বালাই। সেই কারণে কি পুর নির্বাচনের বছরখানেক বাকি থাকতে এ বার মন্দিরমুখী হচ্ছে কলকাতা পুরসভা!

সম্প্রতি পুর কর্তৃপক্ষের জারি করা এক নির্দেশিকাকে ঘিরে এই প্রশ্নই তুলেছেন অনেকে। ওই নির্দেশিকায় শহরের মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ঘাটগুলিতে বাড়তি নজর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। মন্দিরে আসা ভক্ত-দর্শনার্থীদের যাতে সামান্য অসুবিধাও না হয়, সে দিকে নজর রাখা হবে। ওই নির্দেশিকাকে ঘিরে ইতিমধ্যেই গুঞ্জন শুরু হয়েছে পুর প্রশাসনের অন্দরে। নাগরিক পরিষেবায় নানা খামতি সত্ত্বেও কেন কর্তৃপক্ষ মন্দির নিয়ে ‘ব্যতিব্যস্ত’ হলেন, সেই প্রশ্নই তুলেছেন অনেকে।

কিছু দিন আগে কলকাতা পুরসভার মাসিক অধিবেশনে ‘জয় শ্রীরাম ধ্বনি’ ওঠায় শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। রীতিমতো হট্টগোল, বিতর্ক শুরু হয়েছিল তা নিয়ে। এ বার এমন নির্দেশিকার পিছনেও ‘গেরুয়া-দাপট’ রয়েছে কি না, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা দ্বিধাহীন ভাবে এর কারণ হিসেবে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের ফল দেখতে পাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, রামনাম-এর সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে পাল্লা দিতে পুর কর্তৃপক্ষ মন্দির-ঠাকুরের শরণাপন্ন হতে চাইছেন।

কী বলা হয়েছে নির্দেশিকায়?

পুরসভা সূত্রের খবর, মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ঘাটের কী ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে, তা নিয়ে পাঁচ-দফা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুর এলাকার মধ্যে যত মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ঘাট রয়েছে, তা যথাযথ আলোকিত করতে বলা হয়েছে। ভক্ত-দর্শনার্থীদের যাতে জঞ্জাল-আবর্জনার কারণে কোনও অসুবিধা না হয়, তাই যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ঘাট পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। মন্দিরের দিকনির্দেশ করতে উপযুক্ত স্থানে সঠিক চিহ্নের ব্যবস্থা করার জন্য ডিজি (সিভিল)-কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিজি (সিভিল)-ই স্থানীয় কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজন হলে মন্দিরের প্রবেশদ্বার নির্মাণ করবেন বলে জানিয়েছে নির্দেশিকা। সর্বোপরি, শহরের পুরনো যত মন্দির ও ঘাট রয়েছে, সেই সংক্রান্ত একটি বই প্রকাশ করা হবে বলে ইঙ্গিত রয়েছে ওই নির্দেশিকায়। সেখানে রঙিন ছবি সংবলিত প্রতিটি মন্দিরের ইতিহাস, তার নির্মাণশৈলী, ঐতিহ্যগত সব দিক উল্লেখ থাকবে। সেই বই প্রকাশের দায়িত্ব পুর সচিবকে দেওয়া হয়েছে।

এমন নির্দেশিকাকে ‘নজিরবিহীন’ বলছে পুরমহলের একাংশ। এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘শুধুমাত্র মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ঘাট নিয়ে অতীতে এ ভাবে আলাদা নির্দেশিকা জারির কথা মনে করতে পারছি না। এ রকম নির্দেশিকা এই প্রথমই বলা যায়।’’ আর এক ধাপ এগিয়ে আরও এক পুরকর্তা রসিকতা করে বলেন, ‘‘ভক্তিতে গদগদ এমন নির্দেশিকা আগে কখনও দেখিনি! সব ছেড়ে হঠাৎ মন্দির নিয়ে কেন এত মাথাব্যথা তা বোঝা অবশ্য কঠিন নয়!’’

মন্দির নিয়ে এই ‘মাথাব্যথা’ এবং ‘ভক্তিভাব’-এর কারণ সহজেই অনুমেয় বলে দাবি করছে বিজেপি। পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিতের দাবি, ‘‘ভোটে জেতার জন্য এ সব করছে তৃণমূল। সামনের বছর পুর নির্বাচন, তার পরের বছর বিধানসভা ভোট। এমনিতে রামনাম শুনলে শাসকদলের লোকেরা রেগে যান, নির্বাচন সামনে দেখে তাঁরাই এখন মন্দির-ঠাকুর আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। কিন্তু তাতে লাভ কিছু হবে না।’’

পুর কর্তৃপক্ষ অবশ্য এ সব দাবি-যুক্তি এড়িয়ে গিয়েছেন। এক পুরকর্তা শুধু বলেন, ‘‘মন্দির ও ঘাটে অনেক লোক আসেন প্রতিদিন। তাই সেগুলি যাতে ঠিক ভাবে সাফসুতরো থাকে বা আলোকিত থাকে, সে কথাই বলা হয়েছে। কেন হঠাৎ আলাদা ভাবে করা হল, সেটা বলতে পারব না।’’ মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবব্রত মজুমদার বলেন, ‘‘ঘাটগুলি নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। মন্দিরের বাইরেও আমরা পরিষ্কার করে দিই। এটা নিয়মমাফিক কাজ। এর আলাদা ব্যাখ্যা না করাই ভাল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Circular Temple
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE