Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
প্রচারই সার, রাশ টানা গেল না শব্দ-তাণ্ডবে

শব্দবাজির মানচিত্রে উত্তরের নতুন ‘হটস্পট’

শনিবার রাত থেকে দফায় দফায় শ্যামপুকুর, বেনিয়াপুকুর-সহ একাধিক এলাকা থেকে শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শব্দবাজি নিয়ে যত প্রচারই থাক, রবিবার রাত আটটার পর থেকেও মুহুর্মুহু বাজি ফিরেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে।

বাজি-গড়: শিয়ালদহ এলাকার একটি পাড়ায় ফাটছে দেদার শব্দবাজি। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

বাজি-গড়: শিয়ালদহ এলাকার একটি পাড়ায় ফাটছে দেদার শব্দবাজি। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৯ ০২:২৪
Share: Save:

লেক টাউন, বাঙুর বরাবরই শব্দদূষণের মানচিত্রের প্রথম দিকে ছিল। উত্তর কলকাতায় শব্দবাজির ‘হটস্পট’ ছিল ওই সব এলাকা। বাকি অভিযোগ মূলত দক্ষিণ কলকাতা থেকেই হত এত দিন। কিন্তু চলতি বছরে কালীপুজো ও তার আগের দিন, শনিবার চিরাচরিত প্রথায় পরিবর্তন আনল। শব্দদূষণের মানচিত্রে এ বার অনেক ‘দাগি’ এলাকার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার অনেক নতুন এলাকা উঠে এসেছে।

শনিবার রাত থেকে দফায় দফায় শ্যামপুকুর, বেনিয়াপুকুর-সহ একাধিক এলাকা থেকে শব্দবাজি নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। শব্দবাজি নিয়ে যত প্রচারই থাক, রবিবার রাত আটটার পর থেকেও মুহুর্মুহু বাজি ফিরেছে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে। রাত যত গড়িয়েছে বাজির তীব্রতাও তত বেড়েছে। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে সরশুনা, ঠাকুরপুকুর, লেক টাউন একাধিক জায়গায় বাজি ফাটানোর জন্য এফআইআর দায়ের করতে হয়। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর কন্ট্রোল রুমে যে অভিযোগগুলি দায়ের হয়েছে, তাতে অনেকেই ফোনে শব্দবাজির তাণ্ডবও শুনিয়েছেন।

এমনিতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পরিবেশকর্মীদের তরফে কলকাতার কয়েকটি জায়গাকে শব্দবাজির ‘হটস্পট’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তার মধ্যে কসবা, গরফা, বেহালা, জিঞ্জিরাবাজার, গড়িয়া, ঠাকুরপুকুর, ভবানীপুর, বালিগঞ্জ সার্কুলার রোড, পাটুলি, রবীন্দ্র সরোবর বরাবরে মতো অভিযোগ তালিকার শীর্ষে তো রয়েছেই। যোগ হয়েছে শ্যামপুকুর, বেনিয়াপুকুর, গৌরীবাড়ির মতো নতুন পকেটও। অনেক জায়গায় বারবার অভিযোগেও কাজ হয়নি বলছেন বাসিন্দারা।

পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘‘অন্যান্য বছরে দক্ষিণ কলকাতা থেকেই বেশি অভিযোগ দায়ের হত। এ বার উত্তর কলকাতার চিরাচরিত শব্দবাজি ফাটানোর জায়গাগুলি ছাড়াও নতুন জায়গা থেকে অভিযোগ আসছে। এমনকি আর জি কর হাসপাতালেও বাজি ফেটেছে।’’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তার কথায়, ‘‘উত্তর কলকাতা থেকে এ বার অনেক অভিযোগ পেয়েছি।’’

তা হলে কি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুলিশের এত সক্রিয়তার পরেও শব্দবাজির মানচিত্র বিস্তৃত হচ্ছে? পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, রাজ্যের শব্দবাজি-বিরোধী আন্দোলনের ধারা কোন দিকে যাবে, তা নির্ভর করছে কালীপুজো ও তার পরবর্তী দু’এক দিনে। কারণ, এ বছরও যদি শব্দবিধি লঙ্ঘন করলে কড়া ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে বিধিভঙ্গকারীরা নিশ্চিত হবেন যে, পুলিশ প্রশাসন মুখে যা-ই বলুক, নিয়ম ভেঙেও কোনও শাস্তি হবে না। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘আর্থিক জরিমানা বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ছাড়া এই প্রবণতা কিন্তু আটকানো যাবে না। আর তা না হলে শব্দবাজি-বিরোধী আন্দোলন বড় ধাক্কা খাবে।’’

এর কারণ ব্যাখ্যায় পরিবেশকর্মীরা বলছেন, এই প্রথম দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ যেমন প্রথম বার অফিসারদের এফআইআরের ক্ষমতা দিয়েছে, তেমনই শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করতে পুলিশ বাড়তি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে বা অভিযোগ এলে লালবাজার থেকে সংশ্লিষ্ট থানায় ফোন করে ব্যবস্থা নিতে বলা হচ্ছে। এক পরিবেশকর্মীর কথায়, ‘‘পুলিশকে অগ্রাহ্য করে বাজি ফাটালেও যে কিছু হবে না এই মনোভাব আগে ভাঙতে হবে। শাস্তিই একমাত্র পথ।’’ নববাবু বলছেন, ‘‘দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে এফআইআর করতেই হবে। না হলে হবে না। যাঁরা শব্দবাজি ফাটাচ্ছেন, তাঁদের মনে ভয় না ধরানো পর্যন্ত এই দাপট থামবে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy