Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Drug Racket

গাড়িতে খাবারের সঙ্গেই হাতবদল মাদকের, নজর কলকাতার একাধিক ধাবা-রেস্তরাঁয়

কলকাতা পুলিশের মাদক-দমন শাখার এক আধিকারিক আবার জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ধাবা এবং রেস্তরাঁর মালিক ও কর্মীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি, সচেতনতা শিবিরও করা হয়েছে।

An image of drug

রাস্তার ধারের ধাবা ও রেস্তরাঁগুলিই শহরের মাদক কারবারের অন্যতম ‘হটস্পট’। প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৩ ০৫:৪২
Share: Save:

কোনও ঘিঞ্জি এলাকা নয়। বরং দ্রুত গতিতে গাড়ি চলা রাস্তার ধারের ধাবা ও রেস্তরাঁগুলিই শহরের মাদক কারবারের অন্যতম ‘হটস্পট’! এমনটাই মনে করছেন কলকাতায় নিযুক্ত ‘নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো’ (এনসিবি)-র কর্তারা। বিষয়টি পৌঁছেছে কলকাতা পুলিশের কাছেও। সূত্রের খবর, শহরের একাধিক এলাকায় পথপার্শ্বের ধাবা ও রেস্তরাঁগুলিকে চিহ্নিত করে ইতিমধ্যেই তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সেই তালিকায় প্রথমেই রয়েছে ই এম বাইপাস। সেখানকার বেশ কিছু ধাবা এবং রেস্তরাঁয় নজরদারিও শুরু করা হয়েছে বলে খবর। এর পরে রয়েছে নিউ টাউন এবং দক্ষিণ কলকাতার সংযুক্ত এলাকার কিছু রাস্তার ধারের ধাবা।

এনসিবি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘পাব বা বারের চেয়ে এখন ধাবাই মাদক কারবারিদের কাছে বেশি জনপ্রিয়। কাজ সেরে দ্রুত গাড়ি ছুটিয়ে হাওয়া হয়ে যাওয়া যায় এই সমস্ত ধাবা থেকে। খদ্দেরকে গাড়ি থেকে নামতেও হয় না। খাবারের বরাত দেওয়ার আড়ালে মাদকেরও হাতবদল হয়ে যায়। সমস্ত ধাবা, রেস্তরাঁয় যে হেতু পুলিশি নজরদারি রাখা কঠিন, তাই ঝক্কির ভয়ও কম।’’

কিছু দিন আগেই কলকাতার কুরিয়র সার্ভিস সংস্থাগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন এনসিবি-কর্তারা। সেখানে ১২টি কুরিয়র সংস্থার কর্মীদের নিয়ে সচেতনতা শিবির করার পাশাপাশি, বেশ কিছু অবশ্য পালনীয় কর্তব্যের কথা বলেছে এনসিবি। তার মধ্যে পার্সেলে কী রয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ হলেই এনসিবি-কে খবর দিতে বলার পাশাপাশি, প্রয়োজনে পার্সেল খুলে দেখারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কে, কোন ঠিকানা থেকে সেই পার্সেল পাঠিয়েছেন এবং কোন ঠিকানায়, কার কাছে সেই পার্সেল যাচ্ছে— তা নথিভুক্ত করে রাখার কথাও বলা হয়েছে। কোনও রকম গরমিল দেখলেই কুরিয়র সংস্থার কর্মীদের নিয়ে হানা দেওয়া হবে বলেও জানিয়ে দিয়েছেন এনসিবি-কর্তারা। কলকাতায় দীর্ঘ দিন কাজ করে সদ্য দিল্লিতে কর্মরত এনসিবি আধিকারিক দিলীপ রবিদাস বললেন, ‘‘একটা ধোঁয়াশা ছিল যে, কুরিয়র সংস্থার কর্মীরা পার্সেল খুলে দেখতে পারেন কি না! কিন্তু সন্দেহ হলে কুরিয়র সংস্থার লোক প্যাকেট খুলে দেখতেই পারেন। সেই সঙ্গে পুলিশ বা এনসিবি-র কাছে সাহায্য চাইতে পারেন। ডার্ক ওয়েবের জটিলতা থাকলেও কুরিয়রের সূত্র ধরে মাদক কারবারের পর্দা ফাঁস করাই যায়। গত কয়েক দিনে এমনটা করাও হয়েছে। ওই সূত্রেই রাস্তার ধারের ধাবা এবং রেস্তরাঁর কথা সামনে এসেছে।’’

এনসিবি-র আর এক কর্তা বলছেন, ‘‘সূত্র ধরে এগিয়ে দেখা গিয়েছিল, রুবি মোড়ের কাছে ই এম বাইপাসে এমন কিছু ধাবা রয়েছে, যেখানে এমন কারবার চলছে। একই ধরনের খবর এসেছিল সল্টলেকের সিটি সেন্টার এলাকা থেকেও। সাদা পোশাকে খদ্দের সেজে সেখানে যাওয়া হয় টানা এক মাস। গোপনে নজর রাখা হয়েছে মাদক কারবারের উপরে। গাড়িতে বসেই প্রতি বার খাবারের বরাত দেওয়া হয়েছে। শেষে এক দিন হঠাৎ ইশারায় মাদক চাওয়া হয়েছে। উত্তর এসেছে, ‘কী চাই! সব রকম আছে।’ সব ধরনের মাদক ব্যবহারের রেওয়াজ রয়েছে কলকাতায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ধাবার ওই কর্মীকে গ্রেফতার না করে তাঁকেই সোর্স বানানো হয়েছে। দ্রুত বড় চক্র হাতে আসতে পারে।’’

কলকাতা পুলিশের মাদক-দমন শাখার এক আধিকারিক আবার জানান, ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকটি ধাবা এবং রেস্তরাঁর মালিক ও কর্মীদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি, সচেতনতা শিবিরও করা হয়েছে। গাড়িতে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় যে সমস্ত ধাবা এবং রেস্তরাঁয়, সেখানে সিসি ক্যামেরার মুখ যাতে গাড়ির দিকে থাকে— তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। যে সমস্ত কর্মী কাজে যুক্ত, তাঁদের সচিত্র পরিচয়পত্রের প্রতিলিপি মালিকের কাছে জমা রাখতে বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে তা থানায় জমা করতে হতে পারে। সেই সঙ্গেই মাদক কারবারের কোনও রকম কাজ নজরে এলে তা দ্রুত পুলিশকে জানাতেও বলা হয়েছে। এনসিবি কলকাতার জ়োনাল ডিরেক্টর রাজেশচন্দ্র শুক্ল বললেন, ‘‘সাধারণের কাছেও অনুরোধ, বার, রেস্তরাঁ যেখানেই হোক, কোনও রকম মাদক লেনদেনের খবর থাকলে তা আমাদের সঙ্গে দেখা করে জানান। দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Drug Racket Drug Dealers Restaurants dhaba NCB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy