বই-নিজস্বী। বুধবার কলকাতা বইমেলায়। ছবি:দেশকল্যাণ চৌধুরী
তিস্তা না, রঙ্গিত— ঘরে কে আসবে? অপেক্ষায় ছিলেন প্রকৃতিপাগল তরুণ দম্পতি।
তিন দশক আগে যাদবপুরে বি ফার্মা পাঠের সময়ে পাহাড়ে বেড়াতে বেড়াতেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল, ভবিষ্যতে যৌথজীবনে সন্তান এলে তার নাম হবে, রঙ্গিত কিংবা তিস্তা। তিস্তার মতোই ছটফটে ধারালো এক মেয়ের মা-বাবাও হয়েছিলেন তাঁরা। ১৩ বছর বয়সে, অকালে, কোন মরুপথে সে নদী মিশে যায়! প্রয়াত মেয়ের খোঁজে ফের তিস্তার কাছেই ফিরে যান শমিতা ও উৎপল চৌধুরী।
শমিতা পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক। উৎপল ড্রাগকন্ট্রোলের অফিস থেকে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত। আট বছর ধরে তিস্তার সহযাত্রী হয়ে উত্তরবঙ্গ থেকে বাংলাদেশ ঘুরেছেন দু’জনে। অজস্র ছবি তুলেছেন। তিস্তাপারের এই বৃত্তান্ত— ‘অ্যান্ড দ্য তিস্তা ফ্লোজ’ জন্ম এ বার বইমেলায়।। প্রকাশক নিয়োগী বুক্স। মুখবন্ধে লেখক কুণাল বসু উবাচ, ‘দম্পতির কলম-ক্যামেরায় ওঁদের মেয়ে হয়েই ফের জন্ম নিয়েছে তিস্তা’। এখনও মেয়ের কথা বলতে বলতে চোখ চিকচিক করে উৎপলবাবুর। বুধ-সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা হয়ে গেল।
সুন্দরবনের এক অখ্যাত প্রেমিক-পুরুষ কুমুদরঞ্জন নস্করের সঙ্গে অবশ্য আর দেখা হওয়ার জো নেই। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের দেশ বাঙালির অবহেলিত বাদাবন আমৃত্যু কুমুদবাবুর জীবনে মিশে ছিল। ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব এগ্রিকালচারাল রিসার্চ’-এর বিজ্ঞানীর প্রয়াণের পরে তাঁর বাদাবন-দর্শনের পাণ্ডুলিপি হাতে প্রকাশকদের দোরে দোরে ঘুরেছেন গুটিকয়েক সুহৃদ। শেষমেশ গাঙচিল থেকে এই বইমেলাতেই আলো দেখল সেই বই— ‘প্রকৃতির প্রতিশোধ: সুন্দরবন’। সম্পাদনায়, কলকাতার এক প্রবীণ সাংবাদিক ও কুমুদবাবুর জনৈক ছাত্র।
প্রকৃতি-পরিবেশকে ক্রমশ ভুলতে থাকার দিনকালে বইমেলার মাঠ দেখছে নদী, জঙ্গল, পাহাড়, পশুপাখিকে নিয়ে বাঁচার এমনই কিছু প্রেমের
গল্প। যেমন ফটোগ্রাফির নেশায় মাতোয়ারা কৌশিক। অহেতুক সাপ মারার বিরুদ্ধে কথা বলে বেড়ানো তাঁর
ব্রত। নিজের ‘নেচারিজম’ প্রকাশনা থেকে ছবি-লেখায় তুলে ধরছেন বাংলার সাপেদের ঠিকুজি-কোষ্ঠি। শ’তিনেক পাতার বইটির নাম ‘সাপ’!
বইমেলার ভিড়কে কাজে লাগিয়ে পরিবেশ-সচেতনতা প্রচারে সামিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদও। প্রকাশিত হয়েছে স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে বিলি করার জন্য পর্ষদের সুদৃশ্য ছড়া-ছবির বই। কার্টুনিস্ট চণ্ডী লাহিড়ীর আঁকা ছবির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঙ্গীতকার প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের ছড়া। একটি চিলতে নমুনা, ‘হায়রে কবে কেটে গেছে আলিবাবার কাল / তবু দুনিয়া জুড়ে দেখ ছি ছি এত্তা জঞ্জাল’!
বইমেলার মাঠে মানুষের যত্র তত্র খাবারের ঠোঙা ছড়ানোর অভ্যেসের সঙ্গে উদ্যোক্তারাও লড়াই চালাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবকেরা সমানে মাঠ পরিষ্কার করছেন। তবে এক পরিবেশপ্রেমী পাঠক অভিযোগ করছিলেন, পরিবেশ-বিষয়ক বইয়ের স্টলগুলি সব হলঘরের ভিতরে। বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছে না। শুনে গিল্ডকর্তা ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায় বললেন, ‘‘কার কতটা জায়গার চাহিদা বুঝে লটারিতেই স্টলের জায়গা ঠিক হয়েছে।’’ চোখে পড়ল, তিন নম্বর হলে এনভায়রন সংস্থা দিব্যি পরিবেশ নিয়ে পত্রিকা-প্রচারপত্র গুছিয়ে বসেছে।
ব্যবসার নিরিখে পরিবেশ কিন্তু নিছকই ব্রাত্য নয়, আশ্বাস দিলেন আনন্দ পাবলিশার্স-এর কর্তা সুবীর মিত্র। এ বার পরিবেশ নিয়ে আনন্দ-এর নতুন বই, মিহিররঞ্জন দত্ত মজুমদারের ‘সৌরশক্তি: প্রযোগ বৈচিত্র্য’। সুধীন সেনগুপ্তের ক’বছর আগের ‘বিপন্ন অরণ্য ও বন্যপ্রাণী’ বা সুন্দরবন নিয়ে বইটিরও এ
মেলায় খোঁজ পড়ছে। সুবীরবাবু বলছিলেন, ‘‘গল্প-উপন্যাসের মতো জনপ্রিয় না-হোক, কলকাতার বাইরে বই নিয়ে গেলেও অনেকেই পরিবেশ-বিষয়ক বইয়ের খোঁজ করেন। এ বিষয়ে পাঠকের কৌতূহল একটু হলেও বাড়ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy