নিয়মভঙ্গ: ব্রিগেডমুখী বাইক-আরোহীদের কারও মুখেই মাস্কের বালাই নেই। ডাফরিন রোডে। রবিবার। ছবি: সুমন বল্লভ,
সভা মঞ্চ থেকে তখন সবে ভারত বন্দনা শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বলা অর্ধেক বাক্য পূরণ করছে সামনের ভিড়। সেই আওয়াজ মাইকে মাইকে পৌঁছে যাচ্ছে ইডেন গার্ডেন্সের উল্টো দিকের মাঠে, যেখানে ব্রিগেডে আগতদের পর পর বাস রাখা হয়েছে, ওই পর্যন্ত। সেখানে ভেসে এল মোদীর চিৎকার, ‘‘ভারত...কী..!’’ এক হাতে কাচের বোতল ধরা এক ব্যক্তি হঠাৎ ঘাসের উপরে চিৎ হয়ে পড়ে চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘‘জয়..!’’
কোনও মতে তাঁকে তুলে বাসের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা শুরু করলেন আশপাশের কয়েক জন। তত ক্ষণে মোদী সুর তুললেন, ‘‘বন্দে..!’’ অন্য চার জনের ভরসায় টলতে টলতে বাসের দিকে এগোতে থাকা ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘মা থরম..!’’
রবিবারের ময়দান এবং সংলগ্ন এলাকায় দেখা গেল এমনই নানা চিত্র। কোথাও পাশাপাশি রাখা বাসের ছায়ায় বসে দেদার নেশার আসর চলেছে বলে অভিযোগ। কোথাও ব্যানার খুলে দু’টি বাসের মধ্যে বেঁধে দিয়ে চলেছিল তাসের আড্ডা। খেলার আসরেই কয়েক জন আবার বাজি ধরলেন রাজ্য-রাজনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে। বেলা যত গড়াল ময়দান চত্বরে উপস্থিত লোকজনের এই মনোভাব যেন ততই লাগামছাড়া হল। এক সময়ে সভাস্থলেও উচ্ছৃঙ্খলতা এমন চেহারা নিল যে, বাঁশের ব্যারিকেড ভেঙে পড়ার উপক্রম হল। বিকেলের পরে আবার ইতিউতি পড়ে থাকতে দেখা গেল, খাবারের উচ্ছিষ্ট, পানীয়ের বোতল, প্লাস্টিকের গ্লাস। যা দেখে বোঝার উপায় রইল না, বাসে করে এসেছে কোনও রাজনৈতিক সভায় যোগ দিতে আসা জনতা, নাকি বসন্তের ‘পিকনিক পার্টি’?
মেদিনীপুর থেকে আসা এক ব্যক্তি আবার বলেই দিলেন, ‘‘এই সব দিনে কলকাতা ঘোরাও হয়, বিনা পয়সায় খানা-পিনাও হয়। সকালে বাস ছাড়ার সময়ে ডিম-পাউরুটি পেয়েছি। এখানে এসেই মাংস-ভাত। এর পরে জলের ব্যবস্থাও ছিল। রাতে গ্রামে বসিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ানোর কথা রয়েছে।’’
এর সঙ্গেই চলেছে দেদার শব্দ-তাণ্ডব। দেখা গেল, একাধিক লরিতে লাগানো হয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাউন্ড বক্স। সভা চলাকালীন ময়দান চত্বরে লরি দাঁড় করিয়ে সেই বক্স বাজিয়েই অনেককে দেখা গিয়েছে গানের তালে কোমর দোলাতে। বেশ কিছু বাসের মাথাতেও লাগানো হয়েছিল বক্স। বর্ধমান থেকে আসা এমনই বক্স লাগানো তিনটি লরি এনে দাঁড় করানো হয়েছিল একেবারে পাশাপাশি। তাতেই কখনও চলল ‘খেলা হবে’, কখনও ‘টুম্পা’। নাচতে নাচতে এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘এ নাচ জয়ের নাচ। এতে অন্যায় খোঁজা উচিত নয়।’’ সভার জন্য এসেছেন? বক্তব্য শুনবেন না? ওই ব্যক্তি বলেন, ‘‘আমাদের পাড়ার নেতা বলে দিয়েছেন, ‘মনে করবে কলকাতা ঘুরতে এসেছো। মন খুলে মজা করো’।’’
এই ‘মন খুলে মজা করার’ চিত্রই ধরা পড়ল গেরুয়া ফেট্টি মাথায় বেঁধে বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়া অনেকের মধ্যে। সাইলেন্সার খোলা এমন কয়েকটি বাইক এ দিন ময়দান চত্বরে আনা হয়েছিল, যার শব্দে কানে তালা লাগতে পারে। গেরুয়া চুলের তেমনই এক বাইকচালক পিকআপ বাড়িয়ে আওয়াজ তুলে বললেন, ‘‘আমাদের দাদা বলে দিয়েছেন, যার বাইকে এ দিন আওয়াজ বেশি হবে, সে-ই মে মাসের বিজয় মিছিলে সামনে থাকবে।’’ কাছেই দাঁড়ানো এক ট্র্যাফিক পুলিশ কর্মী তখন কার্যত দর্শকের ভূমিকায়।
পুলিশ আটকাবে না? সেন্ট্রাল ডিভিশনের ওই ট্র্যাফিক কর্মীর মন্তব্য, ‘‘খেলা চলছে। অহেতুক ফেঁসে গিয়ে লাভ আছে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy